৪৩ বছর আগে যার জন্য সম্ভ্রম হারিয়েছিলেন সেই আল-বদর কমান্ডার আজহারের মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তা দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন বীরাঙ্গনা মানসুরা বেগম।
Published : 30 Dec 2014, 02:49 PM
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর মঙ্গলবার দুপুরে এ প্রতিক্রিয়া জানান রংপুরের এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মানসুরা।
তিনি বলেন, “লম্পট আজহারের ফাঁসি রায় হওয়ায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। ফাঁসি কার্যকর হলে শান্তিতে মরতে পারব।”
জামায়াতের তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের রংপুর শাখার সভাপতি আজহার ও তিন পাকিস্তানি সেনা ১৯৭১ সালের অগাস্টের শেষদিকে মনসুরা বেগমকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যান। বাড়িতে নির্যাতনের পর তাকে রংপুর শহরের টাউন হলে গঠন করা ‘নির্যাতন সেলে’ নিয়েও নির্যাতন করা হয়।
এ সময় অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন মানসুরা। ১৮ দিনের মাথায় তার গর্ভের সন্তানটি নষ্ট হয়ে যায়।
আজহারুলকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার খবর পেয়ে শুকরিয়া আদায় করেন ৬৫ বছর বয়সী এ বীরাঙ্গনা। আজহারের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের সাক্ষী ছিলেন তিনি।
মানসুরা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রায় শোনার জন্য সকাল থেকে পাশের বাড়িতে টেলিভিশনের সামনে বসেছিলাম। মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর বাড়িতে গিয়ে দুই রাকাত ‘নফল’ নামাজ পড়েছি। লম্পট আজহারের রায় যাতে দ্রুত কার্যকর হয় সেজন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি।”
টাউন হলের ‘নির্যাতন সেলের’ বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
মানসুরা বলেন, “টাউন হলে আরো অনেক নারীর সঙ্গে আমাকে আটকে রাখা হয়। বাইরে আমার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানোর পর টাউন হলেও নির্যাতন করে পাকিস্তানি সেনারা।
“১৮ দিনের মাথায় গর্ভের সন্তানটি নষ্ট হয়ে গেলে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে কে বা কারা আমাকে বাড়িতে ফেরত পাঠায়। সেদিন থেকে আজহারের কঠিন শাস্তি চেয়েছি। আজ সে চাওয়া পূরণ হল।”
মানসুরার স্বামী মোস্তফা (৭৫) একজন মুক্তিযোদ্ধা। আজহারুলের যুদ্ধাপরাধ মামলায় প্রসিকিউশনের দ্বিতীয় সাক্ষী ছিলেন তিনি।
মোস্তফা বলেন, একাত্তরে দুই মাসের অন্তঃস্ত্ত্বা স্ত্রীকে বাবা-মার কাছে রেখে ভারতে যুদ্ধের প্রশিক্ষণের জন্য যান তিনি।
“যুদ্ধ চলাকালে আজহারই পাকিস্তানি সেনাদের আমার বাড়ি চিনিয়ে দেয়। আজহারসহ পাকিস্তানি সেনারা আমার বাড়িতেই আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করার পর টাউন হলে নির্যাতন সেলে নিয়ে আটকে রাখে।”
প্রতিবেশীদের কাছে পাকিস্তানি সেনাদের নির্যাতনে বাবার মৃত্যুর খবর পান বলে জানান মোস্তফা।
আজহারুলের মৃত্যুদণ্ডের রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “আদালতের কাছে আজহারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছি। আদালত তা দিয়েছেন। রায় দ্রুত কার্যকর করা হলে রংপুর কলঙ্কমুক্ত হবে।”
মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আজহারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। পাঁচ অভিযোগের মধ্যে একটি হচ্ছে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ছাত্র সংঘের রংপুরের সভাপতি আজহারুলের নেতৃত্বে রংপুর শহর এবং আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানসুরাসহ অসংখ্য নারীকে ধরে এনে টাউন হলে আটকে রেখে ধর্ষণসহ শারীরিক নির্যাতন চালানো।