যদিও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্তৃপক্ষ।
২১ ডিসেম্বর চবি কর্তৃপক্ষের এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই শনিবার ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করেছে সিএফসি। আর মিছিল করেছে ভিএক্স।
চবি শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক এ দুই সংগঠনের দ্বন্দ্বের জেরে গত ১৪ ডিসেম্বর শাহ আমানত হলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী তাপস সরকার।
তবে এতোকিছুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই সমস্যার সমাধান করা হবে।
তাপসের ‘প্রকৃত হত্যাকারীদের‘ গ্রেপ্তারের দাবি দুই পক্ষ থেকেই জানানো হলেও মূলত শাহ জালাল হলে অবস্থান করা নিয়েই আবার পাল্ঠাপাল্টি অবস্থান নিয়েছে দুই পক্ষ।
শনিবার চবি’র চাকসুতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিএফসি’র পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নাজমুল হক।
নাজমুল হক বলেন, “তাপস সরকারের খুনিদের যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুনর্বাসন করতে চায় তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার অবরোধ করেতে বাধ্য হব।”
সিএফসি’র অন্যতম নেতা সুমন মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হত্যাকারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। তাই কোনো সুর্নিদিষ্ট সময় বেঁধে দিচ্ছি না। যখনই এ ধরণের ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পাওয়া যাবে তখনই অবরোধ শুরু করব।”
এদিকে দুই দফায় পিছিয়ে আগামী ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে পৃথকভাবে অবরোধের হুমকি দিয়েছে ভিএক্সও।
বিকালে চবি’র ১ নম্বর গেইট থেকে রেল স্টেশন চত্বর পর্যন্ত মিছিল করে পুলিশের বাধায় থেমে যায় ভিএক্স।
স্টেশন চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে নিজেদের ছয় দফা পূরণের দাবি জানিয়েছে ভিএক্স নেতাকর্মীরা।
ভিএক্স’র অন্যতম নেতা জালাল আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোমবারের মধ্যে আমাদের কর্মীদের হলে তুলে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিল প্রশাসন। সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করব।
“এরমধ্যে দাবি পূরণ না হলে স্থগিত করা অবরোধ কর্মসূচি পালনে বাধ্য হব।”
এ বিষয়ে চবি প্রক্টর সিরাজ উদ দৌল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হল প্রভোস্টদের নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। হল কারো ব্যক্তিগত নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের।
“সমস্যা থাকলে সমাধানও থাকবে। সব পক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে।”
ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানের বিষয়ে প্রক্টর সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, “এটা কারো জন্যই ভালো না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিত স্বাভাবিক রাখতে যা করা প্রয়োজন তা করা হবে।”
১৮ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে তাপস খুনের জন্য ভিএক্স অনুসারী ছাত্রলীগের ‘বহিষ্কৃতদের’ দায়ী করে সিএফসি।
ওই সংবাদ সম্মেলনে সিএফসির জানানো চার দফা দাবি হল- তাপসের হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করা, হত্যায় জড়িতদের সনদ বাতিল করা, হত্যাকারীদের মদদদাতা হিসেবে প্রক্টরের দ্রুত পদত্যাগ ও তাপসের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়া।
এর একদিন আগে ১৭ ডিসেম্বর ভিএক্স সংবাদ সম্মেলন করে তাপস খুনের জন্য সিএফসিকে দায়ী করে।
ওই সংবাদ সম্মেলনে জানানো ভিএক্স’র দাবিগুলো হলো- মূল হত্যাকারীদের বিচার, কর্তব্য অবহেলায় হাটহাজারীর ওসিকে অপসারণ, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী রাকিব-অমিত-সুমন গংকে গ্রেপ্তার, হলে ছাত্রলীগের অবস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আটক নিরাপরাধ নেতাকর্মীদের মুক্তি, মিথ্যা অস্ত্র ও হত্যা মামলা প্রত্যাহার।
১৪ ডিসেম্বর ঘটনার পর থেকেই তাপসকে নিজেদের কর্মী দাবি করছে সিএফসি।
ঘটনার দিন শাহ জালাল হল থেকে গ্রেপ্তার ২৪ জনই ভিএক্স’র নেতাকর্মী বলে পুলিশ জানিয়েছে।