ট্যাংকার দুর্ঘটনায় নিঃসরিত তেলে আক্রান্ত হয়েছে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের সাতটি কুমির ছানাও।
Published : 11 Dec 2014, 10:41 PM
শেলা নদীতে সাড়ে ৩ লাখ ফার্নেস অয়েল নিয়ে ট্যাংকারটি মঙ্গলবার ডুবে যাওয়ার পর পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও বন কর্মকর্তারা বন্যপ্রাণী ও পরিবেশের ওপর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।
তিন দিনে ৩৪ হাজার হেক্টর এলাকার তেল ছড়িয়ে পড়ার মধ্যে বৃহস্পতিবার করমজল প্রজনন কেন্দ্রে চার মাস বয়সী সাতটি কুমিরের অসুস্থতার কথা জানান কর্মকর্তারা।
পশুর নদীর পাশে গড়ে তোলা সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের এই প্রজনন কেন্দ্রের দুটি চৌবাচ্চায় রাখা লবণপানির এই সাতটি কুমির ছানার মুখে ঘা বৃহস্পতিবার দেখতে পান পরিচর্যাকারী কর্মকর্তা।
করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ফরেস্ট রেঞ্জার আব্দুর রব বৃহস্পতিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মঙ্গলবার দুপুরে পশুর নদীতে জোয়ারের পানি এলে লবণ পানির কুমিরের চৌবাচ্চাগুলোর পানি পরিবর্তন করি। ওই জোয়ারের পানিতে যে তেল ভেসে আসে, তাও চৌবাচ্চায় উঠে এসেছিল।
“তা দেখে ওই দিনের পর আর পশুর নদীর পানি চৌবাচ্চায় তোলা হয়নি। কিন্তু আজ বিকালে চৌবাচ্চার কাছে গিয়ে দেখি, পিলপিল ও জুলিয়েটের গত অগাস্ট মাসে জন্ম নেওয়া সাতটি ছানার মুখে ঘা দেখা দিয়েছে।”
ঘা দেখে ইতোমধ্যে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, লবণ পানির কুমিরের চৌবাচ্চায় প্রতিদিনই পানি পরিবর্তন করা হয়ে থাকে। কিন্তু নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়ায় আপাতত চৌবাচ্চার পানি পরিবর্তন বন্ধ রাখা হয়েছে।
এটাও একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, বলনে ফরেস্ট রেঞ্জার রব।
“পানি পরিবর্তন করতে না পারার ফলে এই কুমির ছানাগুলোকে মলমূত্রের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে। এই অবস্থা যদি দীর্ঘায়িত হয় তাহলে লবণ পানির কুমির ছানা অন্যত্র সরিয়ে নিতে হতে পারে।”
তেল মিশ্রিত পানি পান করার কারণেই এই কুমির ছানাগুলো আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করছেন এই বন কর্মকর্তা।
করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ১৮টি চৌবাচ্চায় চার মাস থেকে ছয় বছর বয়সী মোট ২৫৫টি লবণ পানির কুমির রয়েছে বলে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আমির হোসাইন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
লবণ পানির প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও লালন-পালনের জন্য সুন্দরবনস বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন প্রকল্পের আওতায় ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটন কেন্দ্রে ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে আট একর জমির ওপর বনবিভাগের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র সরকারি এই কুমির প্রজনন কেন্দ্র।
সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে জেলেদের জালে আটকা পড়া ছোট-বড় পাঁচটি কুমির নিয়ে কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। অষ্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সেন্টারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা রব প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই কেন্দ্রটি তত্ত্বাবধান করছেন।
ট্যাংকারডুবির কারণে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের সমূহ বিপদের পাশাপাশি প্রাণী বিশেষজ্ঞদের সবচেয়ে বড় শঙ্কা ইরাবতী ডলফিন নিয়ে, যার অভয়াশ্রমের কাছেই ট্যাংকারটি আরেকটি কার্গোর ধাক্বায় ডুবে যায়।
সুন্দরবনের শেলা ও পশুর নদীর মোট ৩১ কিলোমিটার এলাকা ডলফিনের অভয়ারণ্য। পশুর নদীর কোল ঘেঁষে যে স্থানে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে, তা ডলফিনের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র।
কিন্তু বুধবার ও বৃহস্পতিবার একটি ডলফিনও লাফাতে দেখা যায়নি বলে জানান করমজলের কর্মকর্তা রব। এসব জলজ প্রাণী বেঁচে থাকবে না, স্থান পরিবর্তন করবে, তা ভেবে উদ্বিগ্ন তিনি।