শফিউল খুন: জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি আটক ৫ জনের

অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলাম হত্যাকাণ্ড জড়িত থাকার কথা র‌্যাবের হেফাজতে স্বীকার করলেও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন আটক পাঁচজন।

রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2014, 04:22 PM
Updated : 25 Nov 2014, 06:52 PM

এরা হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি আবদুস সামাদ পিন্টু (৩৪), কাটাখালী পৌর যুবদলের নেতা আরিফুল ইসলাম মানিক (৩৩), মুদি দোকানি সিরাজুল ইসলাম ওরফে কালু (২২), বেকার যুবক আল মামুন (৩১) ও মো. সবুজ শেখ (১৮)।

হত্যামামলার তদন্ত কর্মকর্তা, মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেন মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে এই পাঁচজনকে আদালতে হাজির করে তাদের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন জানান।

“কিন্তু তারা আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি জানায়,” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার তানভীর হায়দার।

তিনি দাবি করেন, গ্রেপ্তার এই পাঁচজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ার পর তাদের আদালতে নিয়েছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা।

এই পাঁচজনকে তিনটি আদালতে হাজির করা হয়েছিল। কিন্তু কোনোজনই আদালতের সামনেই মুখ খুলতে রাজি হননি।

মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক খালিদ হাসান খানের কাছে মানিক ও সবুজকে হাজির করা হয়েছিল। আদালত-৩ এর বিচারক শারমিন আক্তারের সামনে পিন্টু ও কালুকে এবং আদালত-৫ এর বিচারক জয়ন্ত রানীর সামনে মামুনকে হাজির করা হয়।

“জবানবন্দি দিতে রাজি না হওয়ায় এরপর আদালতের নির্দেশে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়,” বলেন আদালত পুলিশের পরিদর্শক আবুল হাসেম।

তবে জয়ন্ত রানীর সামনে এই হত্যামামলার সাক্ষী হিসেবে অমল কর্মকার জবানবন্দি দেন।

এই পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবার হেফাজতে নেওয়া হবে কি না- জানতে চাইলে উপ-কমিশনার তানভীর হায়দার বলেন, এ ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেন দুপুর আড়াইটার দিকে ৫ জনকে আদালতে হাজির করে তাদের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আবেদন জানান।

গ্রেপ্তারের পর গত ২৪ নভেম্বর এই পাঁচজনের সঙ্গে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক ইব্রাহিম খলিল ওরফে টোকাই বাবু (২১)কে নিয়ে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব দাবি করে, এরাই অধ্যাপক শফিউলের খুনি।

ওই সংবাদ সম্মেলনে মানিক সংশ্লিষ্টতার কথা সাংবাদিকদের সামনে স্বীকার করে গত ১৫ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকায় এই হত্যাকাণ্ড সংঘটনে বিভিন্নজনের ভূমিকাও তুলে ধরেন।

পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে জামায়াতে ইসলামী ‘নিয়ন্ত্রিত জঙ্গিদের’ সংশ্লিষ্টতার কথা বললেও র‌্যাব এই ছয়জনকে আটক করে ব্যক্তিগত আক্রোশকে কারণ হিসাবে দেখায়।

পুলিশ এই পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নিয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং র‌্যাবের সঙ্গে ভিন্নমত জানিয়েই তদন্ত এগিয়ে নিচ্ছে তারা।

এপিপির বিভ্রান্তকর তথ্য

গ্রেপ্তার ৫ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়ে রাজশাহী মহানগর আদালতের এপিপি সুশান্ত সরকার বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে এই আইনজীবী সাংবাদিকদের জানান, র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার পাঁচজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

তার ওই বক্তব্য সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর সন্ধ্যায় আদালতের পরিদর্শক আবুল হাসেম জানান ভিন্ন কথা।

তিনি বলেন, পাঁচ আসামি দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিতে অস্বীকৃতি জানালে বিচারকরা তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

“তাদের কোনো জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়নি,” বলেন তিনি।

কেন জবানবন্দি দেওয়ার তথ্য দিয়েছেন, সে বিষয়ে কথা বলতে এপিপি সুশান্ত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাননি সাংবাদিকরা।

এ বিষয়ে পিপি আব্দুল সালাম বলেন, “মিথ্যা তথ্য দিয়ে কেন এপিপি সুশান্ত সরকার গণমাধ্যমে কথা বলেছেন তা আমার জানা নেই। তবে গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য সরবরাহের জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এপিপির মিথ্যা তথ্য সরবরাহ এই হত্যা মামলার সক্রিয়তা নষ্ট করার ষড়যন্ত্র বলেও দাবি করেন পিপি।