লল্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটের মেয়র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লুৎফুর রহমানের বিপুল অর্থ অপব্যবহারের প্রমাণ উঠে এসেছে নিরীক্ষায়।
Published : 04 Nov 2014, 09:54 PM
অনিয়মের মাধ্যমে নিজের সমর্থকদের সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি নিজের নির্বাচনী প্রচারে লুৎফর কাউন্সিলের অর্থ ব্যয় করেছেন বলে প্রাইস ওয়াটারহাউজ কুপারসের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
‘অযোগ্য’ প্রতিষ্ঠানকে লুৎফর অনুদানের অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন বলে প্রমাণ মেলার কথাও জানিয়েছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি, যে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উগ্রবাদী সংগঠনও রয়েছে বলে অভিযোগ।
লুৎফুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পর দেশের খ্যাতনামা হিসাব নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে টাওয়ার হ্যামলেটসের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় নিরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাজ্য সরকার।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মঙ্গলবার খবর ছাপিয়েছে গার্ডিয়ান, লন্ডন ইভনিং স্ট্যান্ডার্ডসহ যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্রগুলো।
প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সরকারমন্ত্রী এরিক পিকেলস টাওয়ার হ্যামলেটসকে ‘পচে যাওয়া’ বরো কাউন্সিল বলে আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি বলেছেন, “এটি সরকারি অর্থ নিয়ে দুর্নীতির আশঙ্কার একটি চিত্রই ফুটিয়ে তুলল।”
অন্যদিকে লুৎফরের নেতৃত্বাধীন এই বরো কাউন্সিল এক বিবৃতিতে বলেছে, নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানটি কোনও জালিয়াতির প্রমাণ পায়নি। শুধু প্রক্রিয়াগত কিছু দুর্বলতা চিহ্নিত করেছে, যা তারা শুধরে নেবে।
২০১০ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসে নির্বাহী মেয়র পদে নির্বাচিত হন লুৎফর রহমান, যার বিরুদ্ধে ‘উগ্রপন্থী’ বিভিন্ন গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ আগে থেকে রয়েছে।
গত মে মাসে নির্বাচনে লুৎফর পুনর্নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই নির্বাচনকেন্দ্রিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। বিবিসির প্যানোরমা অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন সাংবাদিকের অনুসন্ধানে অনিয়মের বিষয়টি উঠে এলে গত এপ্রিল মাসে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
প্রাইস ওয়াটারহাউজ কুপারসের প্রতিবেদনে বলা হয়, লুৎফর রহমানের নেতৃত্বাধীন পূর্ব লন্ডনের বরো কাউন্সিল টাওয়ার হ্যামলেটে ‘অযোগ্য’ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে চার লাখ পাউন্ডের বেশি অনুদান দিয়েছে।
“অনুদানের জন্য প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ে স্বচ্ছতার অভাব ছিল,” বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। আবেদনের ক্ষেত্রে যথাযথ মূল্যায়ন না হয়ে প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা হয়েছে বলেও তদন্তে উঠে এসেছে।
একটি ঘটনার উদাহরণ দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, “একজনের হস্তক্ষেপে সেখানে কর্মকর্তাদের সুপারিশ নাকচ করা হয়।
“পর্যালোচনার পর ন্যূনতম শর্ত পূরণে ব্যর্থ আবেদনকারীরা মোট চার লাখ সাত হাজার সাতশ পাউন্ড অনুদান নিয়েছে।”
পপলার টাউন হল ভবন ৮ লাখ ৭৫ হাজার পাউন্ডে বিক্রিতেও অনিয়ম পেয়েছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। তারা বলছে, দরপত্রে অনিয়মের মাধ্যমে লুৎফরের এক সমর্থকের কাছে তা বিক্রি করা হয়েছে।
লুৎফরের নির্বাচনী প্রচারে কাউন্সিলের অর্থ ব্যয়ের প্রমাণও পেয়েছে প্রাইসওয়াটারহাউজ কুপারস, যাতে জনগণের অর্থের অপব্যবহার হয়েছে বলে মন্তব্য তাদের।
মেয়রের মিডিয়া পরামর্শকদের জন্য ব্যয়িত অর্থ প্রকৃত অর্থে কাউন্সিল কর্তৃপক্ষের সুবিধার জন্য, না কি মেয়রের রাজনৈতিক দলের জন্য, সে প্রশ্নও তুলেছে প্রাইসওয়াটারহাউজ কুপারস।
এক সময়ের লেবার নেতা লুৎফর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়লেও ‘টাওয়ার হ্যামলেট ফার্স্ট’ নামে একটি রাজনৈতিক গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার কথা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের আচরণ ছিল ‘বিভ্রান্তিকর ও প্রত্যাখ্যানমূলক’।
এই তদন্ত আটকাতে আদালতেরও শরণ নিয়েছিল কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ। তাতে পুরোপুরি সফল না হলেও কিছু নথিপত্র ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে প্রাইসওয়াটারহাউজ কুপারস।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য না দিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ এবং ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক’ বলে তা নাকচ করতে চেয়েছে টাওয়ার হ্যামলেট কর্তৃপক্ষ।
গত মে মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে লুৎফুরের বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। ভোট পেতে তার সমর্থকরা কাউন্সিলের কর্মীদের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীকে উৎকোচ দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার পার্টির প্রার্থীকে ভোট দেওয়া ‘অনৈসলামিক ও পাপের’ এবং লুৎফুরের পক্ষে ভোট দেয়া ‘পুণ্যের ও ইসলামী কাজ’ বলে প্রচারণা চালানো হয় বলে অভিযোগ করা হয়।
তার বিরুদ্ধে ‘বিভেদমূলক গোষ্ঠীগত রাজনীতির চর্চা’র অভিযোগ তখন তুলেছিলেন মন্ত্রী এরিক পিকলস।