বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ ও সংঘাত বন্ধে মুখ্য ভূমিকা নেওয়ার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 27 Sep 2014, 02:56 AM
বাংলাদেশের জাতিসংঘের সদস্য হওয়ার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুনের উপস্থিতিতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি ওই আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ ও সংঘাত বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আমি বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাই। আমার প্রত্যাশা যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘ মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।
“আসুন আমরা যুদ্ধকে নাকচ করি এবং শান্তির জন্য কাজ করি।”
যুদ্ধমুক্ত পৃথিবী গড়তে বাংলাদেশ সবার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত বলেও জানান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের একটি অভিন্ন লক্ষ্য রয়েছে। আর তা হলো জনগণের ক্ষমতায়ন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিশ্বকে নিরাপদ করা।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের আগামী দিনের কর্মকাণ্ডের একটি রূপরেখাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আগামী দিনগুলোতেও আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতিতে বাংলাদেশ অবিচল থাকবে।
“বিপদাপন্ন বেসামরিকদের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নেতৃত্বশীল ভূমিকা পালন করে যাব আমরা। যুদ্ধ, সংঘাত ও সশস্ত্র সহিংতার ক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে জাতিসংঘের সক্ষমতা বাড়াতে সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করতে আমরা বদ্ধপরিকর।”
জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ এজেন্ডা বাস্তবায়নে সামনের কাতারে থেকে কাজ করার প্রতিশ্রুতিও দেন শেখ হাসিনা।
পাশাপাশি তিনি বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াই এবং সহিংস উগ্রপন্থা, মানব-মাদক ও বণ্যপ্রাণী পাচারের বিরুদ্ধে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যৌন নিপীড়ন ও গণহত্যার মতো অপরাধের বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও কঠোর হওয়ার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করতে বাংলাদেশ সর্বদাই প্রস্তুত রয়েছে।
বাল্যবিবাহ ও নারী নির্যাতন রোধ, অটিস্টিকদের সহায়তাসহ সমাজে বিরাজমান নানা সমস্যা এবং এ থেকে উত্তরণের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
এ সব ক্ষেত্রে সব দেশকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, আন্তর্জাতিক অভিবাসন, সমুদ্র সম্পদের টেকসই ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সুবিধা আদায়ে জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করার ঘোষণাও এসেছে।
১৯৭৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে সম্পৃক্ত হওয়ার ৫০ বছর পূর্তির আগে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে জাতিসংঘ ও সদস্য দেশগুলোকে পাশে থাকার আহ্বান জানান।
এ সময় স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সমর্থনের সন্ধানে থাকা বাংলাদেশের জাতিসংঘের সদস্য পদ অর্জনে সহায়তার জন্য ভারত ও রুশ ফেডারেশনের কথাও স্মরণ করেন তিনি।
“এ দুটি দেশই ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছে এবং জাতিসংঘের ১৩৬ তম সদস্য পদ লাভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।”
এছাড়া বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যুক্তরাজ্য ও জার্মানিসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।