ঢাকার কেরানীগঞ্জের একটি বাসা থেকে দুই শিশুসহ চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা।
Published : 24 Sep 2014, 11:38 AM
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি জামাল উদ্দিন জানান, বুধবার সকালে কদমপুর এলাকার ছয়তলা একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে ওই চারজনের লাশ পাওয়া যায়।
এদের মধ্যে আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী এক পুরুষের হাত-পা ও মুখ বাঁধা নগ্ন লাশ ঘরের মেঝেতে একটি চৌকির নিচে ছিল। তার পাশেই ছিল পাঁচ থেকে সাত বছর বয়সী একটি ছেলে ও একটি মেয়ের লাশ।
আর শাড়ি পরিহিত এক নারীর পা বাঁধা লাশ ছিল কম্বল দিয়ে মোড়ানো।
তারা সবাই একই পরিবারের সদস্য বলে ধারণা করা হলেও পুলিশ তাদের নাম পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি। স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রতিবেশীরাও তাদের সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
এ ঘটনায় ওই ভবনের তত্ত্বাবধায়কসহ দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
ওই বাসা থেকে জব্দ করা হয়েছে একটি ভাঙা মোবাইল ফোন সেট, সাজু আহমেদ নামের এক ব্যক্তির ড্রাইভিং লাইসেন্স, মোমিনুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং সরু করে মোড়ানো দুটি টাকার নোট, যেগুলো ইয়াবা বা হেরোইন সেবনে ব্যবহার করা হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা।
কেরানীগঞ্জের ওসি জানান, ওই ভবনের তত্ত্বাবধায়ক সোহেল লাশের দুর্গন্ধ পেয়ে থানায় খবর দিলে পুলিশ ওই বাসায় যায়। তখন বাসার দরজা খোলাই ছিল।
“বাসার ভেতরে সব তছনছ করা হয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে মনে করছি এটা পরিকল্পিত হত্যা। দুই এক দিন আগে এটা ঘটানো হয়।”
ঘটনাস্থল ঘুরে দেখার পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের পরিদর্শক মো. শাহ আলম মিয়া বলেন, “ছয় থেকে সাতজন মিলে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে আমাদের ধারণা। সব কিছু দেখে মনে হচ্ছে হত্যাকারীরা নিহতদের পূর্ব পরিচিত।”
ওই বাসায় জাতীয় পরিচয়পত্রের যে ফটোকপি পাওয়া গেছে তার মালিক মোমিনুল ইসলামের ঠিকানা দেয়া আছে নীলফামারীর ডোমার উপজেলায়। আর ড্রাইভিং লাইসেন্সে সাজুর ঠিকানা দেয়া হয়েছে কেরানীগঞ্জে।
এর মধ্যে কোনোটি ওই নিহত ব্যক্তির কি-না সে বিষয়েও কিছু জানা যায়নি।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার টেগরিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বাবুল দেওয়ান জানান, সকালে লাশ পাওয়ার কথা শুনে তিনি ওই বাড়িতে ছুটে যান। তখন বাড়ির কেয়ারটেকার সোহেলের সঙ্গে তার কথা হয়।
“সোহেল জানায়, ৫ হাজার টাকায় এক কাঁচামাল ব্যবসায়ীকে ওই বাসা ভাড়া দেয়া হয়েছিল। আর তাকে বাসা ভাড়া নিতে সহযোগিতা করেছে রফিক ও আক্কাস নামের দুই অটোরিকশা চালক।”
এরপর আক্কাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে এবং সোহেলকে গোয়েন্দা পুলিশে সোপর্দ করেন বলে বাবুল দেওয়ান জানান।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, “নিহতদের পরিচয় এখনো আমরা জানতে পারিনি। তবে বাসার তত্ত্বাবধায়ক এবং বাসাটি যিনি ঠিক করে দিয়েছেন তাদের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”
৬ তলা ভবনটির দ্বিতীয় তলার ডান দিকের ইউনিটের দরজা দিয়ে দেখা যায়, একটি কক্ষের ভেতরে তোষক বালিশ এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে আছে। পাশেই একটি খাট, যার নিচে লাশ পাওয়া যায়।
ঘরে বিভিন্ন জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও তেমন কোনো আসবাবপত্র দেখা যায়নি। ওই বাসার অন্য একটি শোয়ার ঘর, ড্রইং কাম ডায়নিং ও রান্নাঘরের অবস্থাও একইরকম।
বাসার কোনো ঘরেই কোনো বাল্ব বা ফ্যান ছিল না। রান্না ঘরের চুলার জায়গায় দেখা যায় একটি কেরোসিনের স্টোভ। হাড়ি-পাতিলের সংখ্যাও একটি পরিবারের প্রয়োজনের তুলনায় কম।
ড্রইং রুমে একটি কাঠের আলনা থাকলেও সেটি ছিল খালি। ওই ঘরে একটি কাঠের চেয়ারও ছিল।
পাশের বাসার বাসিন্দা পাপিয়া আক্তার জানান, বেশিরভাগ সময়ই ওই বাসা তালাবন্ধ থাকত। দুই মাস আগে নতুন ভাড়াটে আসার কথা শুনলেও কখনো কারো সঙ্গে তার কথা হয়নি।
ছয় তলা ওই ভবনের মালিক শামসুল আলম সৌদি আরবে থাকেন। তত্ত্বাবধায়ক সোহেলই ভাড়াটেদের বিষয়ে দেখভাল করতেন।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার এসআই মনিরুজ্জামান জানান, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলেই তারা মামলা দায়ের করবেন।
গত তিন মাসে ওই এলাকায় রাস্তার পাশে চারটি লাশ পাওয়া গেছে জানিয়ে ইউপি সদস্য বাবুল দেওয়ান জানান, ওই চারজনের মধ্যে একজনের পা কাটা ছিল। একটি মেয়ের গলায় ফাঁস দেয়া ছিল। বাকি দুইজনকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছিল।
“কেরানীগঞ্জে এই জায়গাগুলো ফাঁকা থাকায় প্রায়ই এখানে লাশ পাওয়া যায়। তবে পুলিশ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে।”