‘ভূমিখেকোদের’ বিরুদ্ধে ‘শক্ত’ হতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

জলাশয়ে ‘সাইনবোর্ড টাঙিয়ে’ ভূমি দখলকারী আবাসন নির্মাতাদের ‘ভূমিখেকো’ আখ্যায়িত করে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়কে ‘শক্ত’ হতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Sept 2014, 09:21 AM
Updated : 18 Sept 2014, 12:39 PM

তিনি কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ না করলেও টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকার মালিকানা থাকায় এই ‘ভূমিখেকোরা’ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বেড়ায় বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।      

বৃহস্পতিবার ভূমি মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে প্রধানমন্ত্রী প্রারম্ভিক বক্তৃতায় বলেন, “অনেকে জলাশয়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ভূমি দখল করছে। কিছু ভূমিখেকো লোক আছে, যারা দশ বিঘা জমি কিনে ২০ বিঘা দখল করে। কেউ তাদের প্রতিবাদ করলেই তাদের পেছনে লাগে।”

এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘শক্ত’ হওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “এরা এতোই শক্তিশালী- এদের মিডিয়া আছে, পত্রিকা আছে। কেউ প্রতিবাদ করলে, তাকে চোর বানিয়ে ছাড়ে।”

প্রধানমন্ত্রী এও বলেন, “দুঃখজনক, এই মিডিয়া আমরাই দিয়েছি।”

গতবছর নির্বাচনকালীন সরকারের সময় ১৩টি নতুন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদন দেয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার যার মধ্যে ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের ‘নিউজ টোয়েন্টিফোর’ চ্যানেলও রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে রয়েছে সায়েম সোবহানের নাম, যিনি বসুন্ধরা গ্রুপের প্রধান আহমেদ আকবর সোবহানের ছেলে।

ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের অধীনে কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও ডেইলি সান নামে তিনটি পত্রিকা এবং বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম নামে একটি অনলাইন সংবাদপত্রও রয়েছে।

এর আগে গতবছর জুলাই মাসে যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান যমুনা টিভির স্থগিত থাকা লাইসেন্সও ফিরিয়ে দেয় সরকার। গত এপ্রিল মাসে যমুনা টিভি আনুষ্ঠানিক সম্প্রচারে আসে। যমুনা গ্রুপের মালিকানায় রয়েছে দৈনিক যুগান্তর।

যমুনা টেলিভিশনের যাত্রা শুরুর অনুষ্ঠানে যমুনা গ্রুপের প্রধান নুরুল ইসলাম বাবুলের পাশে বসে হাসিমুখে কথা বলতে দেখা যায় বসুন্ধরা চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান শাহ আলমকে।

দেশের বড়  এ দুই শিল্প গ্রুপই ভূমি উন্নয়ন ও আবাসন খাতের ব্যবসার একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্ন সময়ে তাদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও কয়েক বছর আগে এই দুই ব্যবসায়ী গ্রুপকে যৌথ অংশীদারিত্বেও একটি প্রকল্পের ব্যবসা চালাতে দেখা গিয়েছিল।

ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা

ভূমি ব্যবস্থার আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী তার প্রারম্ভিক বক্তৃতায় বলেন, “ভূমি রেকর্ড ও জরিপ ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটাইজড করার মাধ্যমে ক্রটিমুক্ত, টেকসই ও জনকল্যাণমুখী আধুনিক ভূমি জরিপ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে।”

এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের আরো মনোযোগী হওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, এই আধুনিকায়ন যেন ‘যথাযথ’ হয়।

“সব সমস্যার সমস্যা- ভূমি সমস্যা। ডিজিটাইজড হলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের প্রতিটি মানুষ যাতে থাকার জায়গা পায়- তা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য উপজেলার ‘মাস্টার প্ল্যান’ করা হচ্ছে।

‘পল্লী জনপদ’ নামের একটি প্রকল্প একনেকে পাস করার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গ্রামেও চার তলা দালান হবে। দালানের নিচে পোলট্রি খামার হবে। আর ছাদে ধান শুকাতে পারবে।”

ভূমিহীনদের জন্য চরাঞ্চলের পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী।

“ভূমিহীনদের মধ্যে চরাঞ্চলের ভূমি বিতরণ করতে হবে। সেখানে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সাথে সাথে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের ব্যবস্থাও রাখতে হবে।”

ভূমির মালিকানাকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘মূল সমস্যা’ হিসাবে চিহ্নিত করে ওই অঞ্চলে ভূমি জরিপের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন শেখ হাসিনা।

আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ সুরক্ষায় উপকূলীয় জেলাগুলোতে নেয়া কোস্টাল ল্যান্ড জোনিং প্রকল্প এবং উপকূলীয় চরভূমিতে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বনায়নের কর্মসূচির কথাও তিনি এ সময় তুলে ধরেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এবং কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ডিজিটাল জরিপসহ ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

“বাংলাদেশ-ভারত ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমানার মধ্যে ৪ হাজার ১৪৯.৫ কিলোমিটার সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। অবশিষ্ট সাড়ে ছয় কিলোমিটার সীমানা আমরা পেয়ে গেছি। ৪৫ বিঘা জায়গাও পেয়েছি।”

বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে ভূমির পরিকল্পিত ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “উত্তরাঞ্চলে বিনিয়োগ আসবে। এজন্য কোন কোন ভূমিতে ফসল উৎপাদন হয় না- তা চিহ্নিত করতে হবে।”

তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন বা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভূমির অভাব একটি বড় সমস্যা।  এ দিকে খেয়াল রেখেই ভূমির ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

ফসলী জমি ও বনাঞ্চল কেটে যেন শিল্প গড়ে তোলা না হয় সে দিকেও নজর দেয়ার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।

নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এতো চওড়া নদী দরকার নেই। নদীর নাব্য বাড়াতে হবে।”