যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের রায় ঘিরে সুপ্রিম কোর্ট এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
Published : 17 Sep 2014, 09:45 AM
বুধবার সকাল থেকে সুপ্রিম কোর্টের ফটক ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা। তল্লাশি করে আইনজীবী-সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্টদের আদালতে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে।
নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যারিকেড বসিয়ে দোয়েল চত্বরের সামনের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কদম ফোয়ারা এলাকায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে পুলিশের একটি সাঁজোয়া যান।
সকালে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সাঈদী ও রাষ্ট্রেপক্ষে আপিলের এই রায় ঘোষণা করবে।
এর মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলা আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ওই রায়ের পর সারা দেশে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় জামায়াতের নেতাকর্মীরা। সহিংসতায় প্রথম তিন দিনেই নিহত হয় পুলিশসহ অন্তত ৭০ জন। এছাড়া দুই শতাধিক আহত, বহু গাড়ি-দোকানপাট ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, হিন্দুদের মন্দির- ঘরবাড়ি ভাংচুর করা হয়।
যুদ্ধাপরাধের মামলায় অধিকাংশ রায়ের দিন জামায়াত হরতাল ডাকলেও এবার সাঈদীর আপিলের রায় ঘিরে তেমন কোনো ঘোষণা এখনো আসেনি।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর দেশজুড়ে জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীদের সহিংস তাণ্ডবের বিষয়টি মাথায় রেখেই এবার নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে।
হাই কোর্ট পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আবদুস সালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত।”
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রায়কে কেন্দ্র করে দেশের কোথাও যেন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড না ঘটে সে ব্যাপারে র্যাবকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
“আমরা প্রস্তুত আছি, সব ধরনের বিশৃঙ্খলারোধে, যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায়।”
এদিকে এই রায়কে ঘিরে রাজধানীসহ সারা দেশে আদালত, সরকারি দপ্তর, পেট্রোল পাম্পসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
রাজশাহী, ঝিনাইদহ, গাইবান্ধা, বগুড়া, ফেনী ও রংপুরসহ বিভিন্ন জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে মঙ্গলবার রাত থেকেই। চট্টগ্রাম ও সিলেটেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিজিবি চাওয়া হয়েছে। সাঈদীর জেলা পিরোজপুরেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক রাখা হয়েছে।
জামালপুর, পটুয়াখালী, বগুড়া, ফেনী, ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে জামায়াত-শিবিরের কয়েক ডজন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপ কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান বলেন, “সাঈদীর রায়কে কন্দ্রে করে কেউ আইন ভাঙার চেষ্টা করলে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না।”
এ ব্যাপারে পুলিশের সব ইউনিটকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।