বকেয়া বেতনের দাবিতে টানা পাঁচদিনের অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তোবা গ্রুপের আন্দোলনরত শ্রমিকদের অনেকে।
Published : 01 Aug 2014, 11:15 PM
শুক্রবার রাজধানীর বাড্ডার হোসেন সুপার মার্কেটের সপ্তম তলায় তোবা গ্রুপের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, এতোদিন যে কক্ষে ফিনিশিংয়ের কাজ করতেন শ্রমিকরা সেই কক্ষের বেঞ্চ, টেবিল আর মাটিতে বিমর্ষ হয়ে বসে আছেন তারা।
ফিনিশিং রুমের টেবিলে শুয়ে স্যালাইন নিচ্ছেন অনেকে, দুর্বল হয়ে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েছেন কেউ কেউ। প্রায় সবার কণ্ঠস্বর ক্ষীণ হয়ে এসেছে।
অসুস্থ শ্রমিকদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন প্রগতিশীল চিকিৎসক ফোরামের কয়েকজন।
তাদের সমন্বয়ক মুজিবুল হক আরজু শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ২৩ জন শ্রমিককে স্যালাইন দিয়েছেন তারা।
“অনশনে তারা ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছে। অনশন শুরুর পর এখন পর্যন্ত অন্তত ৭৫ জন শ্রমিককে স্যালাইন দেয়া হয়েছে।”
তোবা গ্রুপের বুকশাল গার্মেন্টসের শ্রমিক রুমা বেগম সকাল থেকে স্যালাইন নেন।
দুর্বল কণ্ঠে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “অনশনে শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়সে। স্যালাইন নিতে বাধ্য হইসি। আমরা মইরা গেলেও মনে হয় বেতন পামু না। তাই না?”
ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সদস্য আহমেদ মহীউদ্দিন জানান, সকাল থেকে তোবা গ্রুপের বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত নিলু, মাহমুদা, রুমা, নুপূর, রিনা, শোভা, কোহিনুর, নাসিমা, স্বপ্না, শিল্পী, শিউলি, লিমা, আসমাসহ মোট ২৩ জন শ্রমিককে স্যালাইন দেয়া হয়েছে।
এছাড়া ডলি নামের একজনকে বাড্ডা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
“সরকার তো সবই পারে, কিন্তু কেবল আমাগো বেতনটা দিয়া দিতে পারে না,” ক্ষোভের সঙ্গে বলেন তিনি।
তোবা ফ্যাশনের সুইং সুপারভাইজার মো. নাসের বলেন, “আমাগো একটু কামে দেরি হইলে টাকা কাটা যাইতো। এহন যে মাসের পর মাস আমরা বেতন না পাইয়া কষ্ট করতাসি হের জন্য কারে জরিমানা করুম।”
হোসেন সুপার মার্কেটের সামনেই পুলিশের টহলরত বেশ কয়েকটি গাড়ির পাশাপাশি একটি জলকামানের গাড়িও দেখা যায়। মার্কেটের পাশে ও পেছনেও আছেন পুলিশ সদস্যরা।
পুলিশের গুলশান জোনের উপকমিশনার লুৎফুল কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সাধ্যমতো সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা করেছি যেন শ্রমিকরা তাদের বেতন-ভাতাগুলো পায়। এখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিজিএমইএ ও কারখানার মালিকরা।”
শ্রমিকদের এ পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত অমানবিক’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তোবা ফ্যাশনের কাটিং সুপারভাইজার মুজিবুর রহমান বলেন, “দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। জীবন দিয়ে হলেও অধিকার আদায় করে ছাড়বো।”
হোসেন সুপার মার্কেটের নবম তলা ঘুরে দেখা গেছে তোবা গ্রুপের মালিকের শাশুড়ি লাইলী বেগমকে ঘিরে রয়েছেন ১০/১২ জন শ্রমিক।
শ্রমিক মুজিবুর রহমান বলেন, “লাইলী আন্টির সঙ্গে কোন খারাপ আচরণ আমরা করছি না। তাকে সময়মতো তিন বেলা খাবার দেয়া হচ্ছে। এখানকার মেয়েরা তার গোসলের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
“শ্রমিকরা শুধু তাকে বারবার অনুরোধ করছে যেন তিনি তোবা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তার মেয়ে মাহমুদা আক্তার মিতাকে দ্রুত শ্রমিকদের বকেয়া বেতনগুলো পরিশোধ করে দিতে বলেন।”
লাইলী আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাবা, আমি আমার পরিবারের সবাইকে অনুরোধ করছি তারা যেন তাড়াতাড়ি শ্রমিকদের বকেয়াগুলো শোধ করে আমাকে এখান থেকে নিয়ে যায়। আমার মেয়ে মিতা এখানে আমাকে দেখতে না আসলেও নিশ্চয়ই সে শ্রমিকদের বেতনের টাকা সংগ্রহ করে আমাকে এখান থেকে মুক্ত করবে।”
এ অনশন ভাঙাতে সংশ্লিষ্ট কারখানা মালিক, বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ ও সরকারের দায়িত্বশীল কাউকে শুক্রবারও দেখা যায়নি।
এর আগে বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এসএম মান্নান কচি বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতার আংশিক পরিশোধের জন্য আরো এক সপ্তাহ সময় চান।
তবে শুক্রবার শ্রমিকরা বিজিএমইএ’র সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করে নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি দেন।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তোবা গ্রুপের কারখানা তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১১২ জন নিহত এবং দুই শতাধিক শ্রমিক আহত ও দগ্ধ হন।
তাজরীনের মামলায় কারাগারে থাকা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেনকে গত ২৪ জুলাই জামিন দেয় হাই কোর্ট। অনশনরত শ্রমিকরা অভিযোগ করে আসছিলেন, দেলোয়ারকে জেল থেকে বের করে আনতেই মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বেতন আটকে রেখেছে।