গার্ল সামিট ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বি-পক্ষীয় বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পর এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রী।
টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পর যুক্তরাজ্যে এটিই ছিল প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সফর। তার সফরসঙ্গীদের মধ্যে আবুল হাসান মাহমুদ আলীও ছিলেন।
সফরের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ক্যামেরনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন শেখ হাসিনা ।
মাহমুদ আলী বলেন, “ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন এখন অতীত। ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে হবে। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক নিবিড় করতে চায়। বৃটিশ সরকার বাংলাদেশ সরকারের সাথে একযোগে কাজ করে যাবে।”
সংসদের গত মেয়াদে বিরোধী দলে থাকা বিএনপি ও তাদের শরিকরা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করলে অর্ধেকেরও বেশি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। শেষ পর্যন্ত নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে আবারো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।
গত সাত মাসে নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাজ্যের অবস্থান ‘নরম’ হয়েছে কি না- জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রসিকতার সুরে বলেন, “মাত্র নরম? শুধু নরম?”
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাজ্যের অবস্থান ‘স্পষ্ট’ হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “অবশ্যই, দিনের আলোর মত পরিষ্কার। তিনি (ক্যামেরন) বলেছেন, ইলেকশন ইজ ওভার। ইট ইজ পাস্ট। নাউ উই লুক টু দ্যা ফিউচার।”
নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের হবু রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাটের বক্তেব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মাহমুদ আলী বলেন, “ওটা আমেরিকার বক্তব্য নয়। ওটা মনোনীত রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য। তাদের সরকারের মন্তব্য না। কনফারমেনশনের জন্য সিনেট কমিটির শুনানিতে উনি বলেছেন। এটা তাদের ইন্টারনাল ব্যাপার।”
বার্নিকাট গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক সিনেট কমিটিকে বলেন, বাংলাদেশে গত ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন ‘নিঃসন্দেহে ত্রুটিপূর্ণ’ ছিল।
মাহমুদ আলী এ বিষয়ে বলেন, “তিনি তো এখনও আসেননি। কনফারমেশন এখনও হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে এখনও দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। এটা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মতামত না, মোটেই না।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ কী করে ক্রমাগতভাবে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তার সুফল সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে তা দেখতে বাংলাদেশ সফর করতে চান বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী।
তিনি সিলেট সফরেরও ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন জানিয়ে মাহমুদ আলী বলেন, “মি. ক্যামেরন যেভাবে কথাটা বলেন তা হলো- ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আপনারা যে উন্নয়ন করেছেন এটা এতোই বিস্ময়কর যে এটা শিখতে আমাকে বাংলাদেশে যেতে হবে। আমি দেখতে চাই, যেতে চাই।” তারপর তিনি বলেন, “আমি কিন্তু সিলেটেও যেতে চাই’।
“এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অবশ্যই আপনাকে আমন্ত্রণ জানাব এবং আপনি সিলেটেও যাবেন। আমরা সব ব্যাবস্থা করব।”
প্রথমবারের মতো আয়োজিত গার্ল সামিট প্রসঙ্গে মাহমুদ আলী বলেন, “অন্য কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী এখানে যান নাই। তারা (যুক্তরাজ্য) দাওয়াতই করেন নাই। শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে কন্যাশিশু ও নারী অধিকার সুরক্ষায় যে সাফল্য, সে হিসাবেই তাকে দাওয়াত করেছেন।”
সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে গিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক, বাংলাদেশে তাদের আত্মীয়-স্বজন এবং বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের অসুবিধায় ফেলে এমন কোনো কনস্যুলার বা ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত না নিতে বৃটিশ সরকারকে সুপারিশ করবেন বলে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বাস দিয়েছেন সে দেশের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক পার্লামেন্টারি কমিটির সভাপতি কিথ ভাজ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকও উপস্থিত ছিলেন।