সংসদের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিতের জন্য উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অভিশংসনের (অপসারণ) ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়া ‘অনিবার্য’ বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
Published : 17 Jul 2014, 07:50 PM
তিনি বলেছেন, “সংসদের কাছে সকল বিভাগের জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে সার্বভৌম সংসদ হয় না। সংসদের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিতের জন্যই সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা অনিবার্য।”
বৃহস্পতিবার সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে সংসদের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সুরঞ্জিত এ কথা বলেন।
১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলেও পরে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এক সামরিক ফরমানে ওই অনুচ্ছেদ বাতিল করেন। বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা পরে দেয়া হয় ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের’ কাছে।
১৯৭২ সালের সংবিধানে ‘বিচারকদের পদের মেয়াদ’ শীর্ষক ৯৬ অনুচ্ছেদে ২ দফায় বলা হয়- ‘প্রমাণিত ও অসাদচরণ বা অসামর্থ্যরে কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতীত কোনো বিচারককে অপসারিত করা যাইবে না।’
উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়ার বিষয়টি জোরেসোরে আলোচনায় আসে আওয়ামী লীগের গত সরকারের মেয়াদে।
২০১২ সালে তৎকালীন স্পিকার ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের একটি রুলিংকে কেন্দ্র করে কয়েকজন সংসদ সদস্য হাই কোর্টের একজন বিচারপতিকে অপসারণের দাবি তোলেন। সে সময়ই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনার দাবি জোরালো হয়।
এর আগে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর সময়ও এ নিয়ে আলোচনা হয়। সে সময় ৯৬ অনুচ্ছেদের পরিবর্তন করা না হলেও আইন কমিশন গত ২৬ জুন সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে একটি সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন জমা দেয়।
বৃহস্পতিবার বৈঠকের পর সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “পত্র-পত্রিকা এবং কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে শুনেছি ৯৬ অনুচ্ছেদ আগের মত ফিরিয়ে আনা হবে। বাহাত্তরের সংবিধানে যেসব মৌলিক অবস্থান ছিল তার মধ্যে এটি অন্যতম।”
প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গ সংসদের কাছে দায়বদ্ধ। রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী বানায় সংসদ। আবার তাদের তাড়ায়ও সংসদ। তেমনি বিচার বিভাগের দায়বদ্ধতাও সংসদের কাছে থাকা উচিত। কিন্তু এক ধরনের ভাব আছে-বিচার বিভাগের আবার জবাবদিহিতা কি?”
গত সরকারের সময় সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর জন্য গঠিত বিশেষ কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন সুরঞ্জিত। সে সময় ৯৬ অনুচ্ছেদের সংশোধন নিয়ে আলোচনাও হয়েছিল।
সে বিষয়টি স্মরণ করে তিনি বলেন, “সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে এটা এলেই স্বাভাবিক ছিল। তাহলে এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠত না। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম। ভেতরে-বাইরে বিরোধিতা মোকাবেলা করতে হয়েছে। তারপরও ‘বেটার লেট দ্যান নেভার’।”
সুরঞ্জিতের ভাষায়, এটি একটি মীমাংসিত ‘ইস্যু’। পৃথিবীর যেখানেই সার্বভৌম সংসদ আছে, সেখানেই বিচার বিভাগ সংসদের কাছে দায়বদ্ধ।
রাষ্ট্র পরিচালনায় সমন্বয় থাকার জন্যও ৯৬ অনু্চ্ছেদের সংশোধনী প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেনে তিনি।
মামলা-জট দূর করার সুপারিশ
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিচার বিভাগের সার্বিক কার্যক্রমের ডিজিটাইজেশনসহ মামলা জট দূর করার বিষয়ে সরকারের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা হয় বলে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, কমিটি মামলার জট কমিয়ে আনতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি জেলা বিচারকদের কর্মস্থল ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতা রোধ করা, অর্পিত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিচারকদের আরো তৎপর করা, বিচারকদের কাজের ‘মনিটরিং’ জোরদার করাসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক নিয়োগের জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করে।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এ বিষয়ে বলেন, ময়মনসিংহের জেলা জজ নুরুল হুদা তিন মাসে ৫০ হাজার মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। তার এই অভিজ্ঞতা সরাসরি প্রত্যক্ষ করার জন্য সংসদীয় কমিটি গণমাধ্যমকে সঙ্গে নিয়ে আগামী ৯ অগাস্ট ময়মনসিংহ জেলা জজ আদালত সফরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
“একজন জাজ যেভাবে নিজ উদ্যোগে মামলার ব্যাকলগ কমানোয় কাজ করেছেন, তা আইনের শাসন উন্নত করার স্বার্থে অসাধারণ উদ্যোগ।”
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সভাপতিত্ব এদিন বৈঠকে কমিটির সদস্য মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাহারা খাতুন, মো. শামসুল হক টুকু, মো. আব্দুল মজিদ খান, তালুকদার মো. ইউনুস, মো. জিয়উল হক মৃধা ও সফুরা বেগম উপস্থিত ছিলেন।