জালিয়াতি: যুক্তরাষ্ট্রে বিচারের মুখে ১৪ বাংলাদেশি

চেক জালিয়াতি করে নিউ ইয়র্কের ১৫টি ব্যাংক থেকে ৮০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় ১৪ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে বিচার শুরু হবে এবছরই।

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 March 2014, 07:19 AM
Updated : 18 March 2014, 11:37 AM

ম্যানহাটানের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের মুখপাত্র  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। বাংলাদেশি টাকায় জালিয়াতি করা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৬২ কোটি টাকা।  

এই ব্যাংক জালিয়াতির মামলায় জড়িতদের গত বছরের নভেম্বরে কয়েক দফায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।

নিউ ইয়র্ক, জর্জিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে এই বাংলাদেশিদের আটক করা হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে পাঁচজন এখনো পলাতক রয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজন বাংলাদেশে পালিয়ে আছেন বলে জানিয়েছেন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের মুখপাত্র।  

আসামিরা হলেন- নিউ ইয়র্ক সিটির জ্যামাইকার জামান মাহবুব ওরফে ফয়সাল ওরফে মাহবুবুজ্জামান (৪৬), বাংলাদেশে অবস্থানরত সাঈদ আল হাসান ওরফে সুমন (৪৭), নিউইয়র্কের বাফেলোর মোহাম্মদ খলিল ওরফে রবিন ওরফে আমওয়াল হাসাম (৩৩), উডহ্যাভেনের মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (৫৩), বাংলাদেশে অবস্থানরত হামিদ খান ওরফে আব্দুল হামিদ (৪৩), নিউইয়র্কের ফ্রেশ মেডোজের মোহাম্মদ গোলাম আজম ওরফে সোহাগ ওরফে ফয়েজ আহমেদ খান ওরফে কামাল পাশা (৩৮), এলমহার্স্টের এ কে এম গোলাম হোসেন (৫০), জর্জিয়ার লরেঞ্চভিলের ফু নু ওরফে মোহাম্মদ উদ্দিন ওরফে সারিয়ি এমিবি ওরফে পাঙ্খা ওরফে জ্যামস পালমার (৩৭), নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলিনের ফু লু ওরফে মোহাম্মদ শেখ ইসলাম (৪৩), জ্যাকসন হাইটসের দীপক রানা ওরফে নূর হোসেন (৪০)।

আরো রয়েছেন আকতার রহমান (৪৮), আব্দুর রাজ্জাক (৫৪), খায়রুল ইসলাম (৫৮) এবং মোহাম্মদ রেজা ওরফে এমডি রেজা ওরফে জসীম মো. রেজা (৪৮)। এদের মধ্যে কয়েকজনকে ডিটেনশনে রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশে পালিয়ে থাকা সাঈদ ও হামিদ এই সংঘবদ্ধ চক্রের সঙ্গে চেক জালিয়াতির যাবতীয় কর্ম পরিচালনা করতেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রত্যেকের সর্বোচ্চ ৪৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে বলে জানিয়েছেন নিউইয়র্কের সরকারি আইন কর্মকর্তা প্রিট ভ্যারারা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, প্রতারক চক্রটি গত সাড়ে তিন বছরে এই জালিয়াতির ঘটনা ঘটিয়েছে।

নিউ ইয়র্ক, জর্জিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন সময়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে তারা প্রতারণা করে আসছিল বলে যুক্তরাষ্ট্র পুলিশের অভিযোগ। 

অ্যাটর্নি প্রিট ভ্যারারা জানান, গ্রেপ্তার সাতজনকে ফেডারেল আদালতে তোলা হলে ছয়জন নিজেদের দোষ স্বীকার করে এবং তারা সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যকে গ্রেপ্তারে সহায়তা দিচ্ছে। এজন্যে তাদের নাম এখন প্রকাশ করা হয়নি।

তাদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালিত হচ্ছে ম্যানহাটানে ফেডারেল জজ কেভিন ন্যাথানিয়েল ফক্সের এজলাসে।

মামলার প্রথম শুনানি হয় গত ২ ডিসেম্বর। ওই দিন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ৭ মার্চ ছিল সরকার পক্ষের সঙ্গে অভিযুক্তদের শলাপরামর্শের তারিখ। সেদিনই বিচার শুরুর জন্য ২৭ আক্টোবর দিন রাখা হয়।

মামলায় বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা জাল পরিচয়পত্র, জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স, যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাসের জাল ভিসা তৈরি, ভুয়া কোম্পানি খুলে ভুয়া সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর ব্যবহার করে টেলিফোন লাইন, গ্যাস সংযোগ এবং বিদ্যুতের সংযোগ সংগ্রহ করে অভিনব কায়দায় এ জালিয়াতির ফাঁদ পেতেছিলেন।

এসব উপায়ে তার ভুয়া কোম্পানির নামে ব্যাংকে একাউন্ট খোলেন এবং কোম্পানির নামে চেক বই সংগ্রহ করতেন।

ইউএস অ্যাটর্নি উল্লেখ করেন, ওই সব একাউন্টে কিছু ডলার জমা করা হয় এবং দুয়েকটি জাল চেক ভাঙ্গানো হয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের আস্থা অর্জনের জন্যে। একইসঙ্গে ১৫টি ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় শত শত চেক জমা দেয়া হয় বৃহস্পতি অথবা শুক্রবার। দুদিনের মধ্যে চেকগুলো ক্যাশ করার উপযোগী হওয়া মাত্রই সাপ্তাহিক ছুটির দিন রোববার সমস্ত অর্থ তুলে নেয়া হয় এটিএম থেকে। নিউজার্সী অঙ্গরাজ্যের আটলান্টিক সিটিতে অবস্থিত ক্যাসিনো এলাকার ক্যাশ মেশিন থেকেও অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে।

ক্যাসিনো সিটির এটিএম থেকে দৈনিক অর্থ উত্তোলনের কোন সীমা নেই।

ইউএস অ্যাটর্নি বলেন, সাপ্তাহিক ছুটি শেষে সোমবার স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হওয়া মাত্রই ওই জাল চেকের হদিস উদঘাটিত হয় এবং ব্যাংক একাউন্ট স্থগিত করে তদন্ত শুরু হওয়ার পর ওই চক্রটি একই পন্থায় আরেকটি একাউন্ট খোলে। এভাবে তারা একের পর এক জালিয়াতি ও প্রতারণা চালায়।

কয়েক বছর আগেও ব্যাংক প্রতারণা, ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৪ বাংলাদেশিকে গেপ্তার করে যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তাদের মধ্যে দুজন পালিয়ে যায়। বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।