ভিটা ছেড়েছেন ধর্ষিতদের পরিবার

থানায় মামলার পর ঘর-বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন আক্রান্ত পরিবার দুটি। 

শিকদার খালিদশামীমা বিনতে রহমান ও , মণিরামপুর, যশোর থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2014, 04:28 PM
Updated : 12 Jan 2014, 04:07 AM

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার দাস পাড়ায় ৭ জানুয়ারি, মঙ্গলবার রাতে সশস্ত্র একদল ব্যক্তি হরিদাসকাঠি ইউনিয়নের হাজরাইল গ্রামের দাসপাড়ায় রাম দা, পিস্তলসহ হামলা চালায় এবং অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করে দুই নারীকে।

ঘর ছেড়ে অন্য আরেক পাড়ায় আশ্রয় নেয়া ধর্ষণের শিকার এক নারীর শাশুড়ি বলেন, সন্ত্রাসীরা ঘরের দরজা ভেঙ্গে ঢুকেই জিজ্ঞেস করে, তোরা কি ভোট দিছিস?

তিনি বলেন, “আমরা কেউই ভোট দিতে যাইনি। ওদের পাও ধরে বলেছি, তোরা আমার ধর্মের বাপ, বেদাত করিস নে। রাম দাও মাথার ওপর তুলে তখন বললো, ‘বেশি কথা বলিস না, একদম কচু কাটা করব’।”

যশোরের মণিরামপুর উপজেলা সদর থেকে আনুমানিক ৭ কিলোমিটার দূরে দাসপাড়া গ্রামে ঘটে এই ঘটনা।

ঋষি পাড়া, দাস পাড়া হাজরাইল গ্রামের পাশাপাশি দুটি পাড়া, বাসিন্দাদের সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। যেখানে রিকশা বা তিন চাকা, চার চাকার বাহন ঢোকা একেবারেই অসম্ভব।

বেশির ভাগই বেড়া বা মাটির ছোট ছোট ঘর। পেশায় তারা বেশিরভাগই বাঁশের ঝুড়ির কারিগর, অথবা কৃষি জমিতে দৈনিক হিসাবে কাজ করা কৃষি শ্রমিক।

ওই রাতের বর্ণনা দিয়ে ধর্ষণের শিকার এক নারীর শাশুড়ি জানান, রাতের খাবার শেষে আনুমানিক রাত ৯টা-সাড়ে ৯টার দিকে ৯ থেকে ১০ জনের সশস্ত্র এক দল তাদের ঘরে ঢোকে।

ঢুকেই প্রথমে তার স্বামীর মাথার ওপর রাম দা ধরে। এরপর পাশের ঘরে থাকা ছেলেকে বেঁধে ফেলে, আর তারপর মাত্র ২ মাস আগে বউ হয়ে আসা মেয়েটিকে ধর্ষণ করে।

তিনি বলেন, এর আগে তার ভাশুরের মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়, কিন্তু সেই ঘটনা তারা জানতে পারেন তার ছেলের বউ নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর।

সন্ত্রাসীদের হুমকির কারণে তারা শুরুতে থানা পুলিশ করেননি। তবে পাড়ার লোকজন সাহস দেয়ায় শুক্রবার তারা মামলা করেন।

আর তারপরই তারা সিদ্ধান্ত নেন ঘরবাড়ি ছেড়ে যাওয়ার।

শনিবার বিকালে তাদের বাড়ি গেলে দেখা যায়, ঘর ফাঁকা। এক বাড়িতে কেবল একটা চৌকি পড়ে আছে, খালি।

একটু দূরেই আরেক পরিবারের ঘর। সেখানেও কেউ নাই। এই দুই পরিবারের কর্তা সম্পর্কে আপন ভাই। একজনের ছেলের বউ, আর আরেকজনের মেয়ে শিকার হয়েছেন ধর্ষণের।

পাড়ার লোকজনদের জিজ্ঞেস করে করে পরিবারের সদস্যদের খুঁজে পাওয়া যায় অন্য আরেক পাড়ায়।

সেই পাড়ার বাসিন্দা আরতি দাস বলেন, “ছোট থেকে এই বুড়া হয়ে গেলাম, এমন ঘটনা জীবনেও দেখিনি। হিন্দু বলেই ভেবেছে আওয়ামী লীগ করি আমরা। হিন্দু বলেই আমাদের মেয়ে-ছেলেদের বে ইজ্জত করেছে।”

ঘরে ফেরত যাবেন কবে জানতে চাইলে, ধর্ষিতার শ্বশুর পাল্টা প্রশ্ন করেন, “নিজের জান বড় না, বসত বাটি, কন তো। ওরা যে আবার হামলা করতি আসপি না, তার নিচ্চয়তা দিতে পারবেন?”

গ্রামের আরেক বাসিন্দা দিলীপ দাস বলেন, মণিরামপুরে অনেকগুলো হিন্দু। তবে এখানেই সবচে বেশি সহিংসতা হয়েছে গত কিছুদিনে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এই এলাকার  ৬০টি ভোটকেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয় সহিংসতার কারণে।

মণিরামপুরেই ভোটের আগের দিন পুলিশের গাড়িতে পেট্রোল বোমা হামলা চালানো হয়। ৭ পুলিশ সদস্য আহত হন তখন। ভোটের দিনও ব্যাপক সহিংসতা হয়। মথুরাপুর, কাশিমনগর, ভোজগাতি, দেলুয়াবাড়ি, শুভলকাঠি কেন্দ্রগুলোতে ভোটের আগের দিন হামলা হয়।