প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস এবং কেন্দ্রে অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে বিভিন্ন জেলায় অন্তত ২৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে চারজনকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
Published : 08 Nov 2013, 10:32 PM
শুক্রবার দেশের ৬১টি জেলায় একযোগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা হয়।
পরীক্ষা শুরুর আগের দিন বৃহস্পতিবার পুলিশ বিভিন্ন জেলা থেকে প্রশ্নপত্রসহ কয়েকজনকে আটক করে। পরে এসব প্রশ্নের সঙ্গে প্রকৃত প্রশ্নের হুবহু মিলে যায় বলে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এছাড়া পরীক্ষার হলে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে উত্তর সংগ্রহ এবং বাইরে থেকে লিখে আনা উত্তরপত্র দেখে দেখে লেখার দায়ে কয়েকজন পরীক্ষার্থীকে কারাগারে পাঠায় প্রশাসন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
চুয়াডাঙ্গা
চুয়াডাঙ্গায় প্রাথমিক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে পাঁচ চাকরি প্রার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এদের দুইজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে প্রশাসন।
জেলার ১১টি পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়োগ পরীক্ষা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার সাদাত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে উত্তর সংগ্রহ করে লেখার অপরাধে আলমাডাঙ্গা উপজেলার শেখপাড়ার আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে জহুরুল ইসলামকে এক মাসের কারাদণ্ড এবং মোবাইলে উত্তর শুনে লেখার অপরাধে দামুড়হুদার জগন্নাথপুর গ্রামের আব্দুল জলিলের মেয়ে পিনা আক্তারকে পাঁচ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
এদের বাইরে বিভিন্ন অপরাধে আরো তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জামালপুর
জামালপুরে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে উত্তর দেয়ায় এক নারী পরীক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পরীক্ষা চলাকালে জামালপুর লাইট হাউজ ল্যাব. স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষার্থী আসমা খাতুনকে(২৫)৮০টি সঠিক উত্তরের এসএমএসসহ আটক করা হয়। তিনি জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলার সানাকৈর ঝিঙ্গারভিটা গ্রামের মাসুদ রানার স্ত্রী।
এ সময় এসএমএস সরবরাহকারী ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং কক্ষ পরিদর্শক রমজান আলী পালিয়ে যায়। পুলিশ তার মোবাইল ফোনটি জব্দ করেছে।
জেলায় ২৭টি কেন্দ্রে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
পুলিশ সুপার বলেন, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার হলে বিভিন্নভাবে উত্তর সরবরাহ করতে একাধিক চক্র গড়ে উঠেছে। এর সঙ্গে একাধিক কলেজ শিক্ষকও জড়িত রয়েছেন।
হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জে পরীক্ষা শুরুর আগে হাতে লেখা প্রশ্নপত্র ও একটি প্রাইভেটকারসহ তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ।
উদ্ধার করা প্রশ্নগুলোর বেশিরভাগই মূল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মিল রয়েছে বলে জানান সদর থানার ওসি মোজাম্মেল হক।
সকাল ৬টায় শহরের প্রধান সড়কের বাণিজ্যিক এলাকার উত্তরা ব্যাংকের পাশ থেকে তাদের আটক করা হয়।
এরা হলেন-মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মমরজপুর গ্রামের একরাম হোসেনের ছেলে কবির হোসেন (২৮), একই গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে ফয়সল আহমেদ (৩০) ও ওয়াসির মিয়ার ছেলে পারভেজ আহমেদ (৩০)।
ওসি জানান, আটকরা প্রশ্নপত্র বিক্রির জন্য মৌলভীবাজার থেকে হবিগঞ্জ শহরে আসে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও পরীক্ষার হলে জালিয়াতির দায়ে এক পরীক্ষার্থীসহ দুই যুবককে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
জেলার সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী আজমল হোসেনের কাছে বাইরে থেকে আসা উত্তরপত্র থাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পিন্টু বেপারী তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। তিনি তালা উপজেলার জেঠুয়া গ্রামের শরাফত উল্লাহর ছেলে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তরপত্রসহ আব্দুল্লাহ-আল-মামুন (২৮) নামের এক যুবককে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া প্রশ্ন ও উত্তরপত্রের সঙ্গে পরীক্ষার হলে আটক ওই পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রের হুবহু মিল রয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
পরে সদর থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করে তাকেও কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আব্দুল্লাহ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দত্তগ্রামের আলী আকবরের ছেলে।
ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র ও পরীক্ষার মূল প্রশ্নপত্রের মধ্যে প্রায়ই মিলে রয়েছে বলেও জানান সদর থানার ওসি এনামুল হক।
ময়মনসিংহ
প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
হাতে লেখা প্রশ্ন ফটোকপি করে বিতরণ করার সময় তাদের হাতেনাতে আটক করা হয়।
পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে হাতে লেখা প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল রয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি গোলাম সারওয়ার জানান, গোপন খবরের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সকালে শহরের সারদা ঘোষ রোড, ত্রিশাল বাসস্ট্যাণ্ড, নতুনবাজার, শম্ভুগঞ্জ, গরুরখোয়ার মোড়, নন্দীবাড়ি, টাউনহলমোড়সহ কয়েকটি এলাকার ফটোকপির দোকানে অভিযান চালানো হয়। এসময় হাতে লেখা প্রশ্ন ও তার ফটোকপিসহ ১৮ জনকে আটক করা হয়।
আটকরা হলেন- ময়মনসিংহ শহরের বাউণ্ডারি রোডের সাজ্জাতুল ইসলাম, নন্দীবাড়ির মাহবুব হাসান, নতুনবাজার রেলক্রসিং এলাকার সাফায়েত হোসেন, ঢোলাদিয়ার মানিক মিয়া, সরদা ঘোষ রোডের আল আমিন, সদর উপজেলার ভাবখালি রুবেল মিয়া, সুমন খান ও এমদাদুল হক, সানকিপাড়ার তুহিন ওরফে শাহিন, হালুয়াঘাট উপজেলার শুভ্র দেব ও সাইদুজ্জামান, তারাকান্দা উপজেলার মধুপুরের রফিকুল ইসলাম রফিক, বারইগ্রামের মাহবুব আলম ও সোহাগ মিয়া, ফুলপুর উপজেলার মোফাখখারুল ইসলাম, ভালুকা উপজেলার আরিফুল ইসলাম তারেক, ধোবাউড়া উপজেলার সাকিব এবং ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার শহিদুল ইসলাম।
তাদের নামে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও বিতরণের অভিযোগে মামলা হয়েছে।