হরতালে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। এতে এক পুলিশ কনস্টেবল গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
Published : 18 Sep 2013, 01:09 PM
বুধবার বেলা ১২টার দিকে উপজেলার জোট পুকুরিয়া বাজার এলাকায় শিবিরকর্মীরা টহল পুলিশের ওপর হামলা চালায় বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গুলিবিদ্ধ কনস্টেবল ইকবাল হোসেন (২৩) কে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আব্দুল কাদের মোল্লার মুক্তি দাবিতে বুধ ও বৃহস্পতিবার সারাদেশে হরতাল ডেকেছে জামায়াতে ইসলামী। তাদের সহযোগী সংগঠন শিবির সারাদেশেই এই কর্মসূচিতে ছিল।
সাতকানিয়া উপজেলায় জামায়াতের শক্ত অবস্থান রয়েছে। ওই নির্বাচনী এলাকায় অনেক দিন ধরেই দলটির প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছে।
স্থানীয় সাংবাদিকেরা জানায়, জোট পুকুরিয়া বাজারের ফুলতলা তিন রাস্তার মাথায় শিবিরকর্মীরা হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করলে টহল পুলিশের একটি দল তাদের ধাওয়া করে। ধাওয়া-ধাওয়ির এক পর্যায়ে একদল শিবিরকর্মী পুলিশের ওপর গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়।
ঘটনাস্থলে থাকা টহল দলের প্রধান এসআই সাফায়েত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় বাজারের একপাশে শিবিরকর্মীরা অবস্থান নিলে অন্য পাশে পুলিশের টহল দল অবস্থান নেয়।
“ধাওয়ার মুখে শিবিরকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর একদল শিবিরকর্মী আড়াল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়।”
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সাতকানিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) এমরান ভুঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জামায়াত-শিবিরকর্মীরা মুখোশ পরে এসে টহল পুলিশ সদস্যদের ওপর অতর্কিতে গুলি করে পালিয়ে যায়।
গুলি ইকবালের বুকে লেগেছে বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আইসিইউ সুবিধাযুক্ত একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে কনস্টেবল ইকবালকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
“চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গুলির আঘাতে তার (ইকবাল) ফুসফুসে একটু ক্ষত হয়েছে। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে ঢাকা পাঠানো হয়।”
কনস্টেবল ইকবাল এক বছর আগে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। তার বাড়ি নোয়াখালী জেলার মাইজদী বাজার এলাকায়।
হরতালের সমর্থনে চট্টগ্রাম নগরীতেও বুধবার শিবিরকর্মীরা বিক্ষিপ্তভাবে ভাংচুর চালায়। মঙ্গলবার কাদের মোল্লার চূড়ান্ত রায়ের পরও চট্টগ্রামে পুলিশের গাড়ি পোড়ায় তারা।
এনায়েত বাজারে বুধবার পুলিশের গাড়ি পোড়ানো ও ভাংচুরের মামলায় সাতকানিয়ায় জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীকেও আসামি করেছে পুলিশ।
সাতকানিয়ার বর্তমান সংসদ সদস্য জামায়াতের আ ন ম শামসুল ইসলাম চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির।
গত ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর সাতকানিয়ায় জামায়াত-শিবির তাণ্ডব চালায়।
তখন সহিংসতায় নিহত হয় তিনজন। একটি হিন্দু ও একটি বৌদ্ধ মন্দিরও তখন ভাংচুর হয়।
সাফায়াত বলেন, সকালে একটি পিকআপ ভ্যান নিয়ে আমরা টহল দিচ্ছিলাম। আমাদের দলে আমি ও ছয়জন কনস্টেবল ছিল।
‘রাইফেলের গুলি’
ইকবাল গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা বর্ণনা করে টহল দলের প্রধান এসআই সাফায়েত হোসেন বলেন, ‘সকাল পৌনে ১১টার দিকে ফুলতল বাজারে একটি কুলিং কর্ণারে বসে আমরা নাস্তা করি। এর আগে থেকেই শিবিরকর্মীরা একজন-দুজন করে বাজার এলাকায় জড়ো হচ্ছিল।”
সকাল ১১টার দিকে ফুলতলা বাজারের পূর্ব দিক থেকে শিবিরকর্মীরা একটি মিছিল বের করে। ১৮-২০ জনের ওই মিছিলে কোনো ব্যানার ছিল না। তবে মিছিল থেকে সরকারবিরোধী স্লোগান দেয়া হচ্ছিল।
পুলিশ মিছিলটিকে ধাওয়া দিলে মিছিলকারীরা দৌড়ে সামনের দিকে চলে যায়। কিছু দূর গিয়ে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা দুই ভাগ হয়ে যায়।
সাফায়াত বলেন, “কয়েকজন ডান পাশের জমির ভেতর দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। মিছিলের অন্য একটি অংশ রাস্তার বাম পাশে জমজম কমিউনিটি সেন্টারের আশেপাশে লুকিয়ে পড়ে।”
মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার পর টহল দলের পুলিশ সদস্যরা দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিল।
সাফায়াত বলেন, “কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রায় একশ গজ দূরের জমজম কমিউনিটি সেন্টারের দিক থেকে তিন-চার রাউন্ড গুলি করা হয়। ওই কমিউনিটি সেন্টারের সামনে দুটি মিনি ট্রাক ছিল। ওই ট্রাকের আড়াল থেকেই সম্ভবত গুলিগুলো করা হয়।
‘এর একটি গুলি ইকবালের বুকে এসে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে সে লুটিয়ে পড়ে,’ বলেন এসআই সাফায়াত।
তিনি বলেন, দূরত্ব ও আঘাতের চিহ্ন দেখে ধারণা করছি রাইফেল থেকে গুলি করা হয়েছে।
এসআই সাফায়াত বলেন, “এটা পুরোপুরি নাশকতা। আমরা কোনো গ্যাস বা রবার বুলেটও ছুড়িনি।”