গত ফেব্রুয়ারিতে দেয়া তাদের ওই প্রতিবেদন মঙ্গলবার নিজেদের ওয়েবসাইটে তুলেছে বিশ্ব ব্যাংক, যা কয়েকদিন আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হাতে তুলে দেয়া হয়।
দুর্নীতির অভিযোগ ও তদন্ত নিয়ে দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর গত জানুয়ারিতে সরকার এই প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংককে ‘না’ জানিয়ে দেয়।
টানাপোড়েনের মধ্যে লুইস মোরেনো ওকাম্পো নেতৃত্বাধীন ওই প্যানেল ঢাকায় এসে দুই দফা দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে, বৈঠক করে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গেও।
গত ডিসেম্বরে দুদক সাতজনকে আসামি করে মামলার পর স্পষ্টত অসন্তোষ নিয়েই ওকাম্পোরা ঢাকা ছেড়ে যান। তার দুই মাস পরে প্রতিবেদন দেন তারা, যার আগেই ঢাকার পক্ষ থেকে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ না নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।
আসামির তালিকায় সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে না রাখার বিষয়টি ধরে বিশ্ব ব্যাংকের প্যানেল বলেছে, দুদকের তদন্ত পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ হচ্ছিলো বলে তাদের মনে হয়নি।
তারা মনে করেছে, বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে অতিরিক্ত তথ্য পেয়ে দুদক যথার্থভাবেই এই ষড়যন্ত্রমূলক অপরাধের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আট ব্যক্তির মধ্য থেকে সাতজনের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
“কিন্তু তদন্তের প্রাথমিক তালিকা থেকে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর নাম বাদ দেয়ার কোনো আইনগত যুক্তি নেই।”
পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্মাণ কাজ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিন ও এর অংশীদারদের পাইয়ে দেয়ার জন্য ঘুষ নেয়ার চেষ্টার অভিযোগে দুদকের আনুষ্ঠানিক তদন্ত পরিচালনার সিদ্ধান্তকে বিশ্ব ব্যাংক প্যানেল সমর্থন করেছে।
তবে দুদকের তদন্ত শেষ হলেই কেবল এর তদন্ত কার্যক্রমের যথার্থতা সম্পর্কে চূড়ান্ত মূল্যায়ন করা যাবে বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্ব ব্যাংক অভিযোগ তোলার পর দুদক অনুসন্ধানে নামে। ওই অনুসন্ধানে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পেয়েছে জানিয়ে মামলা করে তারা।
মামলার পর এখন তদন্ত চলছে, এই তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হবে।
আবুল হোসেনকে আসামি না করার কারণ ব্যাখ্যা করে দুদক বলেছে, অনুসন্ধানে তাকে আসামি করার মতো পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকেও ছাড়া দেয়া হবে না।
এই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর প্রথমে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হারিয়েছিলেন আবুল হোসেন। পরে মন্ত্রিত্ব থেকেও ইস্তফা দিতে হয় তাকে।
তবে আবুল হোসেন বরাবরই দুর্নীতিতে তার সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে আসছেন।
বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের জন্য আরো কার্যকর দৃষ্টিভঙ্গী অনুসরণ করতে সংস্থাটিকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
জোরদার সমন্বয়, অনুসন্ধানী দক্ষতা ও উন্নত ঝুঁকি নিরাময় ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দেশীয় প্রশাসন ও অন্যান্য ঋণদাতা সংস্থার বৃহত্তর অংশগ্রহণের চর্চার উদ্যোগ নিতে বলেছে তারা।
এছাড়া বিশ্ব ব্যাংকের ওপর ন্যস্ত জিম্মাদারি কর্তব্য পূর্ণরূপে পালন করতে বাইরের এই বিশেষজ্ঞ প্যানেলকে বিশ্ব ব্যাংকের কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশও তারা করেছে।