বঙ্গবন্ধু উপগ্রহের কাজ এগিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু-১’ উৎক্ষেপণের প্রাথমিক প্রক্রিয়া ‘অনেকদূর’ এগিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার সরকার টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 May 2013, 02:37 AM
Updated : 17 May 2013, 04:01 AM

শুক্রবার বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “নতুন নতুন তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে পরিচিত করিয়ে দেওয়াই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য।”

সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দারিদ্র্য হ্রাস, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, সম্পদের সুষম বণ্টন ও রাষ্ট্রীয় মৌলিক সেবাগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রেও তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম উপকরণে পরিণত হয়েছে। জ্ঞানভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণেও তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতের বিকল্প নেই।”

‘সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়নে তথ্য-প্রযুক্তি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ প্রতিপাদ্যের মূল লক্ষ্য উন্নত তথ্যপ্রযুক্তি পদ্ধতি প্রয়োগ করে নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। যাত্রী, পথচারী ও গাড়ীচালকের সচেতনতা বাড়াতে তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধাগুলো কাজে লাগানো।

“এ ধরণের সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি বিশ্বব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি”, বলেন তিনি।

বর্তমান সরকারের সময়ে বিভিন্ন মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত ও প্রশস্তকরণ, সড়ক-মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণে স্থায়ী মনিটরিং টিম গঠন, ন্যাশনাল সেফটি স্ট্রেটিজিক অ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়ন, মোটরযানের রেট্রো-রিফ্লেকটিভ নাম্বার প্লেট, রেডিও ফ্রিক্যুয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন ট্যাগ ও ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট প্রবর্তন এবং ইলেকট্রনিক চিপযুক্ত স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স চালু করার কথা বক্তৃতায় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “তথ্যপ্রযুক্তির সফল প্রয়োগের মাধ্যমে সড়ক ও নৌপথে দুর্ঘটনা আরও কমানো সম্ভব হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”

বঙ্গবন্ধু কৃত্রিম উপগ্রহ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা প্রাথমিক কাজ অনেক সম্পন্ন করেছি। এই কাজ অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছি।”

বিটিআরসি জানিয়েছে, সবকিছু ঠিক থাকলে ২০১৬ সালের দিকে মহাকাশে পৌঁছাতে পারে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’। এর অংশ হিসাবে ইতোমধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে বিটিআরসি।

আইসিটি আইন ও নীতি প্রণয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে ‘থ্রাস্ট সেক্টর’ হিসাবে ঘোষণা এবং এ খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ইতোমধ্যে আমরা ইন্টারনেট ও অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তি সেবা আরো বিস্তৃত করার পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি।”

দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র চালু করা থেকে শুরু করে নাগরিকদের জাতীয় ই-তথ্য কোষ থেকে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন সেবা বিষয়ক তথ্য পাওয়ার কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি।

১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর মোবাইল ফোনের বাজার উন্মুক্ত করে দেয়ার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, “৯৬ সালে একটি মাত্র কোম্পানি ছিল। তার মালিক ছিলো বিএনপির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই ফোনের দাম ছিল সোয়া লাখ টাকা। আর তাতে ফোন করলে ১০ টাকা, আর ধরলেও ১০ টাকা।

“আর এখন ১৬ কোটি মানুষ, আর ১০ কোটি সিম। আমরা বাঙালি কথা বলতে পছন্দ করি। একবার টাকা ভরলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত কথা বলতেই থাকি”, রসিকতার সুরে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বর্তমানে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৩ কোটি ২০ লাখে পৌঁছেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ব্যান্ডউইথ চার্জ কমেছে, ফলে ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়েছে।”

বর্তমান সরকারের চার বছরে টেলিঘনত্ব দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৬৭ শতাংশ এবং ইন্টারনেট ঘনত্ব প্রায় ২৫ শতাংশ হয়েছে বলেও তিনি জানান।

তথ্য প্রযুক্তি খাতে সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রযুক্তি বিভেদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার এ পথ-পরিক্রমায় চার বছরে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। এখন আমি নিশ্চিত, ২০২১ সালের অনেক আগেই ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারব।উন্নত বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশ তাল মিলিয়ে চলতে পারব।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, জাতীয় সংসদের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুস সাত্তার।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী সাহারা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবসের প্রতিপাদ্যের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের সচিব আবু বকর সিদ্দিক দেশের বাইরে থাকায় অনুষ্ঠানে স্বাগত দেন অতিরিক্ত সচিব দিলীপ কুমার দাস।

অনুষ্ঠানের অনলাইন রচনা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার ও সার্টিফিকেট তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।