উপকূলে ঝড়ো হাওয়া, বৃষ্টি

আগুয়ান ঘূর্ণিঝড় মহাসেন উপকূল থেকে ৪০০ কিলোমিটারের মতো দূরে থাকলেও এর প্রভাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্বের জেলাগুলোতে দমকা বাতাসের সঙ্গে চলছে বৃষ্টি।   

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2013, 08:57 PM
Updated : 15 May 2013, 09:23 PM

ঝড়ের বর্ধিতাংশের প্রভাবে বাতাসের বেগ বাড়তে থাকায় পটুয়াখালীতে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সাগরের পানি ফুলে ফেঁপে ওঠায় উপকূলীয় জেলাগুলোর অনেক নিচু এলাকা তালিয়ে গেছে দুই থেকে তিন ফুট পানির নিচে।

তবে এসব এলাকার প্রায় দশ লাখ বাসিন্দাকে বুধবার রাতেই সরিয়ে নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন । 

উপকূলের কাছাকাছি এলে সাধারণত ঘূর্ণিঝড়ের গতি বাড়লেও মহাসেনের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঝড়টি দুপুর নাগাদ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

চট্রগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে আগের মতোই ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর মংলা বন্দরকে দেখাতে বলা হয়েছে ৫ নম্বর বিপদ সঙ্কেত।

অধিদপ্তরের পরিচালক শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মহাসেন এখনো ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার বেগে এগোচ্ছে।

“আমরা ধারণা করছিলাম, উপকূলের কাছাকাছি এলে এর গতি বাড়বে। কিন্তু তা হয়নি। এই গতিতে থাকলে ঝড়টি দুপুর নাগাদ উপকূল অতিক্রম করতে পারে,” বলেন তিনি।

ঝড়ের গতিপথ এখনো চট্টগ্রাম উপকূলের দিকেই রয়েছে এবং এটি দুর্বল হয়েছে, একথা বলা যায় না বলে আবহাওয়াবিদরা বলছেন।

বুলেটিনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম থেকে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। কক্সবাজার থেকে এর দূরত্ব ছিল ৩৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে এটি ৩২০ কিলোমিটার দক্ষিণে ছিল।

ঝড়টি ঘনীভূত হয়ে আরো উত্তর- উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা ঝড়ো হাওয়ার আকারে বেড়ে ৯০ কিলোমিটারে উঠছে। ঝড়ের কেন্দ্রের কাছে সাগর রয়েছে উত্তাল।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ১২০ কিলোমিটারের বেশি হলে মহাবিপদ সঙ্কেত দেয় আবহাওয়া বিভাগ। আবহাওয়াবিদ শাহ আলমের ধারণা, ঝড়টি উপকূল অতিক্রমের সময় ১০০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইতে পারে।

ঝড়ের সময় ৮-১০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে।

উপকূলীয় জেলা  কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী,  চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল জেলা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর সঙ্কেতের আওতায় রয়েছে।

পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে পাঁচ নম্বর সঙ্কেত প্রযোজ্য হবে।

শাহ আলম বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের বর্ধিতাংশের প্রভাবে খেপুপাড়া থেকে টেকনাফ অঞ্চলে বিশেষ করে মেঘনা মোহনা হয়ে অতিক্রম করার সময় সংশ্লিষ্ট এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বইবে। ধীরে ধীরে বাতাস বাড়বে।”

উপকূল অতিক্রম করার পরও ঝড় পুরোপুরি সরে না যাওয়া পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন অধিদপ্তরের পরিচালক।

উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা, ট্রলার এবং সমুদ্রগামী জাহাজকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম বিভাগে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে বলেও সতর্ক করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

মহাসেনের তাণ্ডবে ইতোমধ্যে শ্রীলঙ্কায় সাত জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তিন হাজার মানুষ হয়েছে ঘরছাড়া।  প্রবল ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে মিয়ানমার উপকূলে নৌকাডুবে অর্ধশতাধিক লোকের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারের ৮২ লাখ মানুষ এই ঝড়ের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে বলে সতর্ক করে দিয়েছে জাতিসংঘ।

ঝড় মোকাবেলায় দেশের উপকূলের জেলাগুলোতে ইতোমধ্যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি।

বুধবার সকালেই চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ওঠা-নামা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও কক্সকাজার বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামাও বন্ধ রয়েছে। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ৩৮টি রুটে নৌ চলাচলও বন্ধ।

উপকূলীয় এলাকাগুলোর স্কুল ছুটি দিয়ে চর ও নিচু এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে আনার কাজ চলছে বুধবার দুপুর থেকে। শুধু চট্টগ্রামেই আড়াই লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক করতে এবং দুর্যোগ পরবর্তী ত্রণ কাজের জন স্বেচ্ছাসেবকরাও প্রস্তুত রয়েছেন।