ঝড়টির গতিপ্রকৃতি দেখে আবহাওয়া বিভাগ জানিয়ে আসছিলো, বৃহস্পতিবার সকালে এটি উপকূলে আঘাত হানবে।
কিন্তু বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঝড়টি উপকূল অতিক্রম করতে পারে দুপুরে।
অধিদপ্তরের পরিচালক শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এটি এখনো ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার বেগে এগোচ্ছে।
“আমরা ধারণা করছিলাম, উপকূলের কাছাকাছি এলে এর গতি বাড়বে। কিন্তু তা হয়নি। এই গতিতে থাকলে ঝড়টি দুপুর নাগাদ উপকূল অতিক্রম করতে পারে,” বলেন তিনি।
বুলেটিনে বলা হয়, বুধবার মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম থেকে ৫৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিলো। কক্সবাজার থেকে এর দূরত্ব ছিলো ৫০০ কিলোমিটার। মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে এটি ৪৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে ছিলো।
বুলেটিনে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়া বইছে। ঝড়ের কেন্দ্রের কাছে সাগর রয়েছে উত্তাল।
ঝড়টি ঘনীভূত হয়ে তার অবস্থান থেকে আরো উত্তর- উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা ঝড়ো হাওয়ার আকারে বেড়ে ৯০ কিলোমিটারে উঠছে।
চট্রগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে আগের মতোই ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর মংলা বন্দরকে দেখাতে বলা হয়েছে ৫ নম্বর বিপদ সঙ্কেত।
উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল জেলা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর সঙ্কেতের আওতায় থাকবে।
পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে পাঁচ নম্বর সঙ্কেত প্রযোজ্য হবে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ১২০ কিলোমিটারের বেশি হলে মহাবিপদ সঙ্কেত দেয় আবহাওয়া বিভাগ।
আবহাওয়াবিদ শাহ আলমের ধারণা, ঝড়টি উপকূল অতিক্রমের সময় ১০০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইতে পারে।
“ঘূর্ণিঝড়ের বর্ধিতাংশের প্রভাবে খেপুপাড়া থেকে টেকনাফ অঞ্চলে বিশেষ করে মেঘনা মোহনা হয়ে অতিক্রম করার সময় সংশ্লিষ্ট এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বইবে। ধীরে ধীরে বাতাস বাড়বে।”
ঝড়ের সময় ৮-১০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে।
উপকূল অতিক্রম করার পরও ঝড় পুরোপুরি সরে না যাওয়া পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন অধিদপ্তরের পরিচালক।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা, ট্রলার এবং সমুদ্রগামী জাহাজকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম বিভাগে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে বলেও সতর্ক করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মহাসেনের তাণ্ডবে ইতোমধ্যে শ্রীলঙ্কায় সাত জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তিন হাজার মানুষ হয়েছে ঘরছাড়া। প্রবল ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে মিয়ানমার উপকূলে নৌকাডুবে অর্ধশতাধিক লোকের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঝড় মোকাবেলায় দেশের উপকূলের জেলাগুলোতে ইতোমধ্যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি।
বুধবার সকালেই চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ওঠা-নামা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও কক্সকাজার বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামাও বন্ধ রয়েছে।
দুপুর থেকে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ৩৮টি রুটে নৌ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম ইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেডের সব কারখানায় দুর্যোগকালীন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
উপকূলীয় এলাকাগুলোর স্কুল ছুটি দিয়ে চর ও নিচু এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হচ্ছে। শুধু চট্টগ্রামে আড়াই লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
উপকূলের নিচু এলাকার জনসাধারণকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে প্রশাসনের উদ্যোগে মাইকিং চলছে। বুধবার রাত থেকে উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।
পটুয়াখালী, কক্সবাজার, বাগেরহাট, নোয়াখালীসহ অন্য জেলাগুলোর নিচু এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।