আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ

ঘূর্ণিঝড় মহাসেন আরো এগিয়ে আসায় উপকূলীয় জেলাগুলোর নিচু এলাকা থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখো মানুষকে।  

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2013, 09:31 AM
Updated : 15 May 2013, 01:24 PM

বঙ্গোপসাগরে এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বুধবার সকাল থেকেই কক্সবাজার, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি চলছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, মহাসেন বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ চট্টগ্রামের কাছ দিয়ে খেপুপাড়া-টেকনাফ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। 

ঝড় মোকাবেলায় উপকূলের জেলাগুলোতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বাতিল করা হয়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর দুপুরে সংকেত বাড়ানোর পর থেকেই স্বেচ্ছাসেবীরা মাইকের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করতে শুরু করেন। এরপর অনেককেই সন্তানসন্ততি, গবাদি পশু ও গৃহস্থালীর সামগ্রী নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটতে দেখা যায়।

স্থানীয় প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী সময়ের জন্য করা হচ্ছে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা।

স্বাস্থ্য বিভাগ উপকূলীয় ১৩ জেলায় চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল করে এক হাজার ৩২৭টি মেডিকেল টিমকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম আবদুল কাদের বলেন, দুপুরেই সন্দ্বীপ ও বাঁশখালী উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত মানুষদের সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

চট্টগ্রামের ১২ টি উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশনে সরকারিভাবে মোট ৪৭৯টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এ সব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে বলে তিনি জানান।

এছাড়া স্কুল কলেজ ও বিভিন্ন সরকারি ভবনও আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী করা হয়েছে। দুপুরেই চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা বিষয়ে ভিজিলেন্স কমিটির জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত হয়, দুর্যোগ মোকাবেরায় ২৮৩টি মেডিকেল টিম চট্টগ্রাম জেলায় কাজ করবে। সম্ভাব্য দুর্গত এলাকাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বুধবার সকালেই চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ওঠা-নামা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও কক্সকাজার বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামাও বন্ধ রয়েছে। দুর্যোগকালীন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে চট্টগ্রাম ইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেডের সব কারখানাগুলোতেও।

কক্সবাজার

পর্যটন জেলা কক্সবাজারে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে মঙ্গলবার রাত থেকেই। আবহাওয়া অধিদপ্তর বুধবার দুপুরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত ঘোষণার পর উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে আনা হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ে।  

সহকারী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার জানান, স্বেচ্ছাসেবীরা নিচু ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসছেন। ৫৩৪টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

নোয়াখালী

নোয়াখালীর হাতিয়া,  সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দুর্গম চরের লোকজনকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে আনতে শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান,  উপকূলীয় ৫টি  উপজেলার মোট ২৪৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বুধবার বিকেল ৫টার পর থেকে সরিয়ে আনা শুরু হয়েছে সাধারণ জনগণকে।

হাতিয়ার কেরিং চর ও নলের চর ইউনিয়নে কোন আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় সেখানকার বাসিন্দাদের পাশের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ও বহুতল  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহেদুল ইসলাম।

তিনি জানান,  ১১৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে লোকজনকে সরিয়ে আনার কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবকরা। এছাড়া আরো ৮টি কেল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

নিঝুম দ্বীপ,  দমারচর,  ঢালচরসহ আশপাশের দ্বীপ এলাকার লোকজনকে সরিয়ে আনার জন্য ৭টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সুবর্ণচর উপজেলার ইউএনও খালিদ মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, ১০৮টি আশ্রয় কেন্দ্র ও ৩০টি কেল্লায় লোকজনকে সরিয়ে আনার কাজ চলছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ইউএনও আবদুল আউয়াল জানিয়েছেন, ২০টি আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি ১০০টি প্রতিষ্ঠানে লোকজনকে সরিয়ে আনা হচ্ছে।

পটুয়াখালী

ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের প্রভাবে সকাল ১১টার পর থেকেই পটুয়াখালী উপকূল জুড়ে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি চলছে। তার সঙ্গে থেমে থেমে দমকা হাওয়া বইছে; সাগর রয়েছে উত্তাল।

জেলা প্রশাসক অমিতাভ সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তর দুপুরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত ঘোষণা করার পর চর ও নিচু এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া শুরু করেন তারা। উপজেলা প্রশাসন থেকেও মাইকিং করে দুর্গম এলাকার মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হচ্ছে।

এ জেলার ৮ উপজেলায় ইতোমধ্যে ১১০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া আপদকালীন ৩৬০টি সাইক্লোন শেল্টার কাম প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪৮টি মাটির কিল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ঝড়ের পরের প্রয়োজনের কথা ভেবে উপজেলা ভিত্তিক ৫০০ মেট্রিকটন চাল/গম, ১৬০ টন শুকনো বিস্কুট মজুদ রাখা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক জানান।

মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন চর রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী জানান, চর কাসেম, চর কাজল ও আন্ডার চরের বহুলোককে বিকালের মধ্যেই পার্শ্ববর্তী চরের আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার বহুস্থানে লাল-কালো পতাকা উড়ানো হয়েছে।

রেডক্রিসেন্ট ও সিপিপি স্বেচ্ছাসেবীরাও মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিচ্ছেন। সমুদ্র সংলগ্ন বেড়িবাঁধের বাইরের সবেইকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।

ঝালকাঠী

ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের প্রভাবে ঝালকাঠীতে বুধবার সকাল থেকেই দমকা হাওয়া ও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে।

বৈরী আবহাওয়ায় সুগন্ধা ও বিষখালী নদী পাড়ের বহু পরিবারকে শুকনো খাবার ও পলিথিন সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।

ঝালকাঠীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) একেএম সোহেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইতোমধ্যেই জেলার চারটি উপজেলায় প্রস্তুতি সভা করে দুর্যোগ প্রতিরোধে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।

পৌরসভার পক্ষ থেকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে। এছাড়া খোলা হয়েছে পৌর নিয়ন্ত্রণকক্ষ।

পিরোজপুর

মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক অনল চন্দ্র দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দুর্যোগ মোকাবেলায় সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জেলা সদরের ত্রাণ বিভাগে খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।

জেলার সবচেয়ে দুর্গম উপজেলা মঠবাড়িয়ায়  রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির নয়শ’ স্বেচ্ছাসেবককেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে শুকনো খাবার, জীবন রক্ষাকারী ঔষধসহ বিভিন্ন নৌবন্দরে জলযান প্রস্তুত রাখতে।

জেলার সাত উপজেলায় ৭৭টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত এবং সাইক্লোন শেল্টারগুলোকে খোলা রাখা হয়েছে।

বরিশাল

ঘুর্ণিঝড় এগিয়ে আসায় দুপুর দেড়টার দিকে বরিশালসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৩৮টি রুটে নৌ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বন্ধ রাখা হয়েছে ফেরি চলাচলও

বরিশাল নৌ বন্দরের কর্মকর্তা মো. শহীদুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বরিশাল নৌ-বন্দরসহ দক্ষিণের ৭৮টি ঘাট থেকে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

নৌযানগুলো যে ঘাটের কাছে রয়েছে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সেখানেই নোঙর করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বরগুনা

ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় বরগুনায় সাড়ে পাঁচ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এই কর্মীবাহিনী মোট ৩৭২টি ইউনিটে বিভক্ত হয়ে পুরো জেলায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় কাজ করবে বলে জেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির উপ-পরিচালক হাফিজ আহম্মেদ জানান।

তিনি জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি জেলায় ৪৬টি মেডিকেল টিম গঠন করেছে। গুরুত্বপূর্ণ সব সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিলের পাশাপাশি জেলায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।

জেলায় সর্বমোট ৩২৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় দেড়লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে বলে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস জানিয়েছেন।

৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেয়ার পর থেকেই নিচু এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরে আসার জন্য গ্রামে গ্রামে প্রচার চালাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।

এদিকে বিকালে বদনীখালী এলাকায় বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণের পরপরই সারা শহর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় স্থানীয় লোকবেতার বিকল্প ব্যবস্থায় ১৫ মিনিট পর পর ঘূর্ণিঝড়ের সর্বশেষ তথ্য দেয়া হচ্ছে।

ফেনী

ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের প্রভাবে বুধবার সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থানে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। প্রশাসন, রেড ক্রিসেন্ট এবং ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবীরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন।

এছাড়া পতাকা উড়িয়ে, মোবাইল ফোনে, মসজিদের মাইকের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মো. হুমায়ুন কবির জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় জেলার ৫৭টি আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে ৪৩টি সচল করা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে ১১৫ মেট্রিক টন চাল ও তিন লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

এছাড়া সিভিল সার্জনকে আহবায়ক করে মেডিকেল টিমও গঠন করা হয়েছে।

ভোলা

বুধবার সকাল থেকেই ভোলার সাগর মোহনার চরফ্যাশনের কুকরী-মুকরী, ঢালচর ও মনপুরার বিভিন্ন স্থানে দমকা হাওয়া ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় রেডক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা ব্যপক প্রচার চালাচ্ছেন।

জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ওয়াহেদ বিডিনিউ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জেলা প্রশাসন দুযোর্গ মোকাবেলায় ২৫০টি আশ্রয় কেন্দ্র, নয় হাজার ১৩৫ জন সেচ্ছাসেবীকে প্রস্তুত রেখেছে। ৯২টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে।

এছাড়া উদ্ধার অভিযানের জন্য নৌকা ও ট্রলারসহ বিভিন্ন যানবাহন প্রস্তুত রেখেছে। 

ভোলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দুর্গম এলাকার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া চলছে বলেও জানান ওয়াহেদ।

লক্ষ্মীপুর

লক্ষ্মীপুর জেলায় মহাসেন মোকাবেলায় রেডক্রিসেন্ট ও যুব রেডক্রিসেন্টের প্রায় সাড়ে এগার হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলার পাঁচটি উপজেলার ৫৮টি ইউনিয়নের মধ্যে বিচ্ছিন্ন দ্বীপাঞ্চল চরগজারিয়াসহ ২১টি ইউনিয়নকে বিপদজনক হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলা প্রশাসন।

জেলা তথ্য অফিসসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলা হচ্ছে। বঙ্গোপসাগর ও মেঘনার গভীরের মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকাগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরেছে।

মোট ১০১টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে জেলায়। ৬৭টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সাতক্ষীরা

সুন্দরবনের সাতক্ষীরা অংশের সকল বনকর্মীদের সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার জানান, সুন্দরবনের গভীরে ঝুঁকিপূর্ণ টহল ফাঁড়ি পুষ্পকাটি ও নটাবেকিতে কর্মরত বনকর্মীদের বুধবারই উপকূলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুরসহ কয়েকটি ইউনিয়নের লোকজনকে  মাইকিং করে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে সাড়ে তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবককে। জেলায় ৮৭টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রসহ সকল স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।  

বাগেরহাট

ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে আসায় বুধবার বিকাল থেকে বাগেরহাটের উপকূলীয় তিন উপজেলা মংলা, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্র ও পাকা স্কুল ভবনে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

বুধবার দুপুর থেকে মংলা বন্দরে অবস্থানরত জাহাজে মালামাল ওঠা-নামার কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার থেকেই পূর্ব সুন্দরবনে পর্যটক ও জেলেদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না বলে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মুহা: শুকুর আলী জানান।

তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় জেলায় দেড় হাজার প্রশিক্ষিত উদ্ধারকর্মী, ৮২টি চিকিৎসক দল ও পর্যাপ্ত শুকনা খাবার মজুদ করা হয়েছে।

জেলায় ২০১টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এ সব আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় পৌনে দুই লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এ ছাড়া পাকা স্কুল ও কলেজ ভবনগুলো খুলে দেয়া হয়েছে।

জেলার সব থেকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম মামুন উজ জামান এবং ও মংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মিজানুর রহমান জানান, নদী সন্নিহিত গ্রামগুলো থেকে সাধারণ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে।

চাঁদপুর

পরবর্তীতে নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত চাঁদপুর থেকে সব ধরণের নৌ-যান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক মো. ইসমাইল হোসেন জানান, নদী তীরবর্তী এলাকা ও চরগুলোতে মাইকিং করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সরিয়ে আনা হচ্ছে।