সাভারে ভবন ধসের ঘটনায় নিখোঁজের সংখ্যা এখন ১৪৯ জন বলে দাবি করেছেন উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী।
Published : 01 May 2013, 07:00 PM
ধসের এক সপ্তাহ পর উদ্ধার অভিযান চলার মধ্যেই বুধবার রানা প্লাজার সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই তথ্য জানান। তবে কীসের ভিত্তিতে এই সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা জানাননি তিনি।
সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক হাসান সারওয়ার্দী একদিন আগেও যে হিসাব দিয়েছিলেন, তাতে ধ্বংসস্তূপের ভেতর চারশ’র মতো লাশ থাকতে পারে বলে ধারণা পাওয়া গিয়েছিলো।
তবে নয়া তলা ওই ভবনের বিভিন্ন তলার আহত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,গত ২৪ এপ্রিল ধসের সময় সাড়ে ৪ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করছিলেন সেখানে।
ভবন ধসে নিহতের সংখ্যা ৪১১ জনে দাঁড়িয়েছে বলে বুধবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন অধর চন্দ্র বিদ্যালয় মাঠে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা এসআই জালাল তালুকদার।
এর মধ্যে ভারী সরঞ্জাম নিয়ে উদ্ধার অভিযানের তৃতীয় দিন বুধবার উদ্ধার করা হয়েছে ১৮টি লাশ।
ধ্বংসস্তূপে লাশ উদ্ধারের পর এই বিদ্যালয়ে রাখা হচ্ছে লাশগুলো। সেখানে সনাক্তের পর লাশ হস্তান্তর চলছে। ৪১১টির মধ্যে ৩৫৬টি লাশ স্বজনরা নিয়ে গেছেন বলে এসআই জালাল জানান।
অধর চন্দ্র বিদ্যালয়ে সন্ধ্যায় নয়টি লাশ ছিল, যাদের পরিচয় সনাক্ত করা যায়নি। পরিচয় না পাওয়া লাশগুলো ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
কয়েকদিন রাখার পর যাদের সনাক্ত করা যায়নি, ডিএনএ নমুনা রাখার পর তাদের বেওয়ারিশ হিসেবে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হচ্ছে।
নিখোঁজ শ্রমিকদের একটি তালিকা মঙ্গলবার পর্যন্ত অধরচন্দ্র বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছিল। পুলিশের তত্ত্বাবধানে এই তালিকায় সেদিন পর্যন্ত ১৩শ’ জনের নাম উঠেছিল। কিন্তু বুধবার এই তালিকা পাওয়া যায়নি ।
তালিকা করা বন্ধ কেন- জানতে চাইলে এসআই জালাল বলেন, এই বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
ধসে পড়া ভবনের সামনে এবং অধরচন্দ্র বিদ্যালয়ে এখনো অনেক মানুষ জড়ো হয়ে আছেন, যারা বলছেন, তাদের স্বজনের সন্ধান এখনো মেলেনি।
লাশ ও হাসপাতালগুলোতে আহতদের দেখে আসা এসব ব্যক্তির ধারণা, তাদের স্বজন চাপা পড়ে আছে ধ্বংসস্তূপের নিচে।
স্বজনের খোঁজে থাকা এই ভিড় নিখোঁজের সংখ্যা ১৪৯ জনের অনেক বেশি বলেই জানান দেয়। লাশ ‘গুম’ হচ্ছে বলেও এদের অনেকের সন্দেহ।
বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বুধবার নারায়ণগঞ্জে এক জনসভায় বলেছেন, সরকার হতাহতদের প্রকৃত পরিসংখ্যান দিচ্ছে না, সংখ্যা কমিয়ে বলা হচ্ছে।
তার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক রাতে বেসরকারি টেলিভিশনকে বলেন, “সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দিন-রাত পরিশ্রম (উদ্ধার অভিযানে) করছে, ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীরা পরিশ্রম করছেন,
“আপনারা (সাংবাদিক) যারা ওঁৎ পেতে বসে আছেন, তিনি (খালেদা) কি আপনাদের প্রতিও সন্দেহ প্রকাশ করেননি।”
কথিত যুবলীগ নেতা সোহেল রানার ধসে পড়া ওই ভবনে উদ্ধার অভিযান তদারকিতে প্রতিমন্ত্রী নানক শুরু থেকেই রয়েছেন।
ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজে ব্যবহৃত ট্রাকগুলো থামিয়ে সাধারণ মানুষের তল্লাশির প্রতি ইঙ্গিত করে মেজর জেনারেল সারওয়ার্দীও মঙ্গলবার উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, “অনেকে সন্দেহ করছেন, আমরা ওই ট্রাকে করে লাশও সঙ্গে নিচ্ছি কি না?
“নিজের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে যারা এত মানুষকে উদ্ধার করল, তাদের দ্বারা কি এই কাজ সম্ভব?”
এতে উদ্ধার তৎপরতা বিঘ্নিত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বুধবার বলেন,তারা পুলিশকে বিষয়টি দেখতে বলেছেন।
উদ্ধার অভিযানের সমন্বয়ক মেজর জেনারেল সারওয়ার্দী জানান,বুধবার সকাল পর্যন্ত জীবিত-মৃত মিলিয়ে ২৮৩৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
আগের দিন এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ধসে পড়া ভবনে কতজন শ্রমিক কাজ করছিল তার তালিকা পাওয়া যায়নি। তবে কারখানাগুলোতে ৩ হাজার ২০০ লোক কাজ করতেন বলে তারা শুনেছেন।
নিখোঁজদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণে নয় তলা ওই ভবনের পাঁচ কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের তালিকা বিজিএমইএ’র কাছে চাওয়া হলেও তা পাওয়া যায়নি বলে জেনারেল সারওয়ার্দী আগের দিন জানিয়েছিলেন।
তবে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে নিখোঁজের সংখ্যা জানানোর সময় তিনি জানাননি, ওই তালিকা পেয়ে তার ভিত্তিতেই এটি নির্ধারণ করা হয়েছে কি না।
নিখোঁজের সংখ্যা ধারণা চেয়ে অনেক কম হওয়ার কারণ হিসেবে উদ্ধার অভিযানের সমন্বয়ক বলেন, “দেখা যাচ্ছে নিখোঁজ একজনের নামই বিভিন্ন স্থানে নিখোঁজ তালিকায় কয়েকবার লিপিবদ্ধ হচ্ছে। এই কারণে প্রকৃত নিখোঁজের সংখ্যার তুলনায় তালিকার সংখ্যা পাঁচ-ছয়গুণ বেড়ে গেছে।”
ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে ছবি হাতে অপেক্ষমান স্বজনরা।
ভবন ধসের পর জীবিতদের উদ্ধারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সতর্কতার সঙ্গে তল্লাশি চালাচ্ছিল উদ্ধারকর্মী দল।
পাঁচদিন পর জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা নেই ধরে নিয়ে গত রোববার রাতে উদ্ধার অভিযানে যোগ করা হয় ক্রেন, বুলডোজারের মতো ভারী সরঞ্জাম।
প্রথম দিন থেকে সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিলেও ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পর শুধু সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রশিক্ষিত উদ্ধারকর্মী দলই কাজে রয়েছে।
ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার শুরুর সময়ে বলা হয়েছিল, ধসে পড়া অংশগুলো ক্রেনের মাধ্যমে সরিয়ে আনা হবে।
কিন্তু বুধবার দেখা গেছে, ভারী যন্ত্র দিয়ে কনক্রিটের ওই সব অংশ ভেঙে ভেঙে পরে সরানো হচ্ছে। অষ্টম দিনেও ধসেপড়া ভবনের নয়তলার ছাদও পুরোপুরি সরানো হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে মেজর জেনারেল সারওয়ার্দী বলেন, জীবিত কাউকে পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও মৃতদেহগুলো যাতে অবিকৃত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়, সেই কারণে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে যন্ত্রগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে।