রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানকে বনানী কবরস্থানে স্ত্রী আইভি রহমানের কবরেই সমাহিত করা হবে।
Published : 20 Mar 2013, 01:23 PM
আওয়ামী লীগ নেতা আইভির মৃত্যুর আট বছর পর বুধবার মারা যান জিল্লুর রহমান। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে দুদিন পরে মারা যান আইভি রহমান।
সিঙ্গাপুর থেকে জিল্লুর রহমানের মরদেহ বৃহস্পতিবার আসবে বলে বঙ্গভবনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। শুক্রবার বাদ জুমা জাতীয় ঈদগাহে জানাজার পর বিকালে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানের পর জিল্লুর রহমানই রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় মারা যান। দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ২০০৯ সালে শপথ নেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, সিঙ্গাপুর থেকে মরদেহ নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে নামবে বিশেষ একটি বিমান। বিমানবন্দর থেকে শোক শোভাযাত্রা বঙ্গভবন পর্যন্ত যাবে।
দুপুর দেড়টায় বঙ্গভবনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতিকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হবে। পৌনে ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, সাবেক রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতিসহ উচ্চ আদালতের বিচারপতি, সংসদ সদস্য, কূটনীতিক, রাজনীতিক, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা।
বিকাল ৫টায় আত্মীয়-স্বজন এবং সর্বস্তরের মানুষ রাষ্ট্রপতিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাবে। এরপর সাড়ে ৫টায় মরদেহ নেয়া হবে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। সেখানেই রাতে হিমঘরে থাকবে মরদেহ।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর জাতীয় ঈদগাহে রাষ্ট্রপতির নামাজে জানাজা হবে। বিকালে বনানী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে সমাহিত করা হবে।
রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার থেকে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হচ্ছে। এর অংশ হিসাবে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
রাষ্ট্রপতির আত্মার মাগফিরাত কামনায় শুক্রবার সব ধর্মের উপাসনালয়ে হবে বিশেষ প্রার্থনা।
বুধবার বাংলাদেশ সময় বিকালে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জিল্লুর রহমান।
গণভবন সূত্র জানায়, বিকাল ৪টা ৪৭ মিনিটে রাষ্ট্রপতির ছেলে সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান সিঙ্গাপুর থেকে শেখ হাসিনাকে টেলিফোনে মৃত্যুর খবর জানান।
প্রধানমন্ত্রী তখন ছিলেন শেরেবাংলা নগরের এনইসি মিলনায়তনে একনেক বৈঠকে। খবর পাওয়ার পর সভা শেষ না করেই গণভবনে ফেরেন তিনি।
এরপর গণভবনেই জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ও দলীয় সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকেই শ্রদ্ধা জানানো, জানাজা ও দাফনের বিষয়গুলো ঠিক করা হয়।
রাষ্ট্রপতির মরদেহ আসার আগে সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রীসহ জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে বিমান বন্দরে রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে।
রাষ্ট্রপতি সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হওয়ায় এর যাবতীয় কার্যক্রম সশস্ত্র বাহিনীই তদারক করবে।
জিল্লুর রহমানকে সিঙ্গাপুরে নেয়ার পর সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন স্পিকার আবদুল হামিদ।
জিল্লুর রহমান ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে জন্ম গ্রহণ করেন।
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির শোক
রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
জিল্লুর রহমান অসুস্থ হওয়ার পর সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন স্পিকার আবদুল হামিদ।
পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, “তিনি ছিলেন আমাদের অভিভাবক। তার মৃত্যুতে দেশ একজন দেশপ্রেমিক, নিবেদিত প্রাণ ও প্রবীণ রাজনীতিবিদকে হারাল।”
“মহান ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং ২০০৯ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে তার দৃঢ় ও প্রাজ্ঞ ভূমিকা জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে।”