ঘটনার আট মাস পর সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে ‘জড়িত’ আটজনকে সনাক্তের দাবি করেছে সরকার।
Published : 09 Oct 2012, 12:00 PM
এর মধ্যে সাতজন গ্রেপ্তার হয়েছেন, যার মধ্যে নিহত সাংবাদিক দম্পতির এক পারিবারিক ‘বন্ধু’ও রয়েছেন বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর জানিয়েছেন।
তবে তানভীর নামে যে ‘বন্ধু’র কথা মন্ত্রী বলেছেন, তাকে চেনেন না বলে দাবি করেছেন নিহত মেহেরুন রুনির ভাই নওশের আলম রোমান।
মঙ্গলবার বিকালে মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে বহুল আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের অগ্রগতি জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এই হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সরকারের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য এল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর মহীউদ্দীন খান আলমগীর সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ১০ অক্টোবরের মধ্যে হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনের আশ্বাস দেন মন্ত্রী। সেই সময়সীমা পার হওয়ার একদিন আগে গ্রেপ্তারের তথ্য দিলেন তিনি।
সাতজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানালেও এই হত্যার কারণ জানাননি মন্ত্রী। ‘তদন্ত চলছে’ বলে সাংবাদিকদের সেই প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন তিনি।
গ্রেপ্তার সাতজনের মধ্যে পাঁচজন চিকিৎসক নেতা ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই হত্যা মামলার আসামি। তারা হলেন- ডা. নিতাইয়ের গাড়িচালক কামরুল হাসান অরুণ এবং ‘পেশাদার ডাকাত’ রফিক, বকুল, মিন্টু ও সাঈদ।
তানভীর ছাড়া গ্রেপ্তার অন্যজন হলেন- পূর্ব রাজাবাজারে সাগর-রুনি যে ভবনে থাকতেন, তার পাহারাদার রুদ্র ওরফে পলাশ।
এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে সাগর-রুনির বাড়ির আরেক পাহারাদার হুমায়ুন ওরফে এনামুলকেও সনাক্ত করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তাকে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, মোট সাতজন সন্দেহভাজন অপরাধীকে সনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।
“সাতজনের মধ্যে রফিক, বকুল, মিন্টু ও সাইদ পেশাদার খুনি এবং এর আগে তারা ডা. নিতাই হত্যাকাণ্ডে সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল। এদের সঙ্গে কর্মরত একজন গাড়িচালক কামরুল, তাকে জেলে আটকানো হয়েছে।”
“এর বাইরে দুজন নিরাপত্তা প্রহরী রুদ্র পলাশ এবং হুমায়ুন বা এনামুলকে অপরাধী বলে সনাক্ত করেছি, এদের মধ্যে পলাশ গ্রেপ্তার হয়েছে। এছাড়া এ পরিবারের বন্ধু তানভীরকে অপরাধী হিসেবে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি,” বলেন মন্ত্রী।
সন্দেহভাজন অপরাধীদের ডিএনএ পরীক্ষা যুক্তরাষ্ট্রে হচ্ছে এবং তার ভিত্তিতেই গ্রেপ্তারকৃতদের সনাক্ত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এর বাইরে কোনো অপরাধীর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেলে ডিএনএ পরীক্ষা করে তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে বলে মন্ত্রী জানান।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে নিজের বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি।
তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন হত্যাকাণ্ডের পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিকে ধরার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
মামলার তদন্ত প্রথমে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে থাকলেও তারা ব্যর্থতা স্বীকার করার পর এই তদন্তের দায়িত্বে আসে র্যাব। বর্তমানে তারাই তদন্ত চালাচ্ছে।
মন্ত্রিসভায় রদবদলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ২৫ সেপ্টেম্বর মহীউদ্দীন আলমগীর আশা প্রকাশ করেন, ১০ অক্টোবরের মধ্যে সাংবাদিক দম্পতির হত্যারহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে।
এরই মধ্যে আন্দোলনরত সাংবাদিক নেতারা ঘোষণা দেন, ১০ অক্টোবরের মধ্যে এ হত্যা রহস্যের কিনারা না হলে গণতদন্ত দল ও গণআদালত গঠন করবেন তারা।
প্রতিশ্রুত সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার একদিন আগে আটজনকে সনাক্তের কথা জানালেন নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।।
তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার নির্দেশে দায়িত্ব নেয়ার পরপরই বলেছিলাম, এ মাসের ১০ তারিখের মধ্যে কার্যক্রমের ফল সুনির্দিষ্টভাবে উপস্থাপন করব। যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, সে অনুযায়ী বলতে দ্বিধা করছি না, সর্বাত্মক দৃঢ়তার সঙ্গে তদারকি করে মোট সাতজন সন্দেহভাজন অপরাধীকে সনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।”
সন্দেহভাজন আটজনকে সনাক্তের কথা জানালেও খুনের কারণ কী ছিল- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “খুনের মোটিভ নিয়ে অতিরিক্ত কিছু বলব না, কারণ এখনো তদন্ত চলছে।”
বহুল আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে সরকারের কারো সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে বিএনপি অভিযোগ করে আসছে। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকারের ‘দুর্নীতির’ তথ্য ছিল বলেই সাগর-রুনিকে খুন হতে হয়েছে।
মঙ্গলবার গ্রেপ্তারের তথ্য জানানোর পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, “এতদিন পর সরকার সাংবাদিক দম্পতি হত্যার ঘটনাকে এভাবে ধামাচাপা দেয়ার জন্য এই সাধারণ চোরদের গ্রেপ্তারের কথা বলছে।”
এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে ‘জজ মিয়ার নাটক’ হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “জজ মিয়ার মতো নাটক সাজিয়ে অপরাধীকে দূরে সরিয়ে জনসাধারণের মনোযোগ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসেনি।”
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার তদন্তে জজ মিয়া নামে এক ভবঘুরের জবানবন্দি নিয়ে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অভিযোগ রয়েছে।
দুটি সম্ভাবনা, কিন্তু জানালেন না মন্ত্রী
স্বাচিপ নেতা নিতাই হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা পেশাদার ডাকাত বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলে আসছেন, যাদের চারজন সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডেও গ্রেপ্তার রয়েছেন।
গ্রেপ্তার বেশিরভাগ পেশাদার ডাকাত হলে, তাদের সঙ্গে তানভীরের সম্পর্ক কী- জানতে চাইলে ‘তদন্ত চলছে’ বলে এই প্রশ্নটি এড়িয়ে যান মহীউদ্দীন খান আলমগীর।
গ্রেপ্তার চারজন ভাড়াটে খুনি ছিল কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে দুটি সম্ভাবনা রয়েছে।”
কী সম্ভাবনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “এখনো তদন্ত শেষ হয়নি, তাই বলা যাবে না। তদন্ত প্রক্রিয়া যেন প্রভাবিত না হয়, যে জন্য বলা যাবে না।”
মহাখালী বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নিতাই গত অগাস্টে খুন হওয়ার পর র্যাব দুটি হত্যার ধরনে মিল পাওয়ার কথা জানায়। এরপর ওই হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তারদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়।
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ছয় মাস পর খুন হন ডা. নিতাই। মন্ত্রীর দাবি অনুযায়ী, কয়েক মাসের ব্যবধানে দুটি হত্যাকাণ্ড একই ব্যক্তিরা ঘটালে তা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতার পরিচয় নহন করে কি না- প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন, “পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশে তথাকথিত সিরিয়াল কিলারদের সর্বশেষ পর্যায়ে খুঁজে বের করা হয়।”