রূপপুরে ১০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি উৎপাদন ইউনিট নিয়ে শিগগিরই পারমাণবিক বিদ্যুৎ যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ, এ বছরের শেষ নাগাদ যার নির্মাণ কাজ শুরু হতে পারে। জানাচ্ছেন শেখ শাহরিয়ার জামান।
Published : 13 Jan 2012, 08:17 AM
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
ঢাকা, জানুয়ারি ১৩ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- রূপপুরে ১০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি উৎপাদন ইউনিট নিয়ে শিগগিরই পারমাণবিক বিদ্যুৎ যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ, এ বছরের শেষ নাগাদ যার নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “পরমাণু বিজ্ঞান একটি উন্নত প্রযুক্তি। খুব কম দেশই এ প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দেব, বাংলাদেশও পারমাণবিক শক্তি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। কেবল একটি জ্ঞান-ভিত্তিক সমাজই এটা পারে।”
“এটা পুরো বিশ্বকে জানান দেবে, বাংলাদেশেরও উন্নত প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার দক্ষতা আছে”, যোগ করেন তিনি।
রূপপুরে মোট ২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে রাশিয়ার সহযোগিতায়। প্রতিমন্ত্রী জানান, এ বছরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের শুরুতে নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে পাঁচ বছরের মধ্যে তা শেষ করা হবে।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকালেও বিষয়টি চূড়ান্ত হতে এতো দেরি হলো কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গত তিন বছরে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।”
প্রতিমন্ত্রী জানান, সবচেয়ে কম খরচে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় পরমাণু শক্তি থেকেই। আর এটি তুলনামূলকভাবে পরিবেশবান্ধবও বটে।
তিনি বলেন, এ কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ দুই টাকার বেশি হবে না। কারণ এক গ্রাম ইউরেনিয়াম থেকে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়া যায়, অন্য কেন্দ্রে তা উৎপাদন করতে তিন টন কয়লা বা ২.৬ টন অন্য কোনো জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়াতে হয়।”
ইয়াফেস ওসমান জানান, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ খরচ বেশি হলেও চালু হওয়ার ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে সেই খরচ তুলে আনা সম্ভব। রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ হবে ৬০ বছর। পরে আরো ২০ বছর তা বাড়ানো যাবে।
এক হাজার মেগাওয়াটের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে খরচ পড়ে দেড় থেকে দুই বিলিয়ন ডলার, তবে বিষয়টি নির্ভর করে কেন্দ্রের ঝুঁকিরোধক ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তির মানের ওপর।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) কাছ থেকে আমরা সব ধরনের সহায়তা পাচ্ছি। কেন্দ্রটি চালু হলে আমরা বিশেষজ্ঞ সহায়তাও পাব।”
ভারতের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটি পারমাণবিক শক্তি থেকে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে।
‘
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকার ঝুঁকি প্রশমনকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে ইয়াফেস ওসমান বলেন, “আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এগোচ্ছি। আমরা রাশিয়ার কাছ থেকে তৃতীয় প্রজম্মের প্রযুক্তি কিনছি, যাতে থাকবে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।”
তিনি দাবি করেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এমনভাবে নির্মাণ করা হবে যাতে শক্তিশালী ভূমিকম্প ও সুনামি এক সঙ্গে আঘাত করলেও তা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত জাপানের ফুকোশিমা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তেজস্ক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ার কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এমনভাবে তৈরি হবে যাতে তেজস্ক্রিয়া ছড়াতে না পারে।
তিনি জানান, পানির মাধ্যমে পারমাণিবিক চুল্লিটি ঠাণ্ডা রাখা হবে। কোনো কারণে শীতলিকরণ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঠাণ্ডা বাতাসের মাধ্যমে কেন্দ্রটির তাপ কমানো হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাঠামো এমনভাবে তৈরি করা হবে যাতে বিমান আছড়ে পড়লেও ক্ষতি না হয়।
রাশিয়ার পরমাণু শক্তি কর্পোরেশন- রোসাটমের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের যে সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে তার আওয়াতায় রুশ সরকার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সব ধরনের সহায়তা দেবে।
বিজ্ঞান প্রতিমন্ত্রী বলেন, “কেন্দ্রটি চালাতে প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ করবে রাশিয়া। ব্যবহৃত জ্বালানি তারাই ফেরত নিয়ে যাবে। এ কেন্দ্রের জন্য দক্ষ কর্মী তৈরিতেও রাশিয়া সহায়তা করবে।”
আগামী মে অথবা জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়া সফরে গেলে এ ব্যাপারে আর্থিক চুক্তি হতে পারে জানিয়ে ইয়াফেস ওসমান বলেন, “আমরা এখন আর্থিক চুক্তি প্রণয়নে কাজ করছি।”
মন্ত্রীসভা এরই মধ্যে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ অনুমোদন করেছে। ২৫ জানুয়ারি শুরু হওয়া জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে আইনটি তোলা হবে বলে প্রতিমন্ত্রী জানান।
“আমরা এ আইন তৈরিতে আইএইএর পরামর্শ নিয়েছি। রুশ সরকারও এ ব্যাপারে সহায়তা করেছে।”
রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রথম পরিকল্পনা শুরু হয় ১৯৬১ সালে। সেজন্য ২৬০ একর জমিও অধিগ্রহণ করা হয়। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রকল্পটি নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার এ প্রকল্প গতি পায়। ২০১০ সালের মে মাসে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় রূপরেখা চুক্তি। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে একই বছরের জুনে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়।
গত ২ নভেম্বর রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে রাশিয়ার সঙ্গে ‘সহযোগিতা চুক্তি’ করে বাংলাদেশ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসএসজেড/এসইউ/জেকে/১৪৫০ ঘ.