থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল রাত থেকেই, সকালে তুমুল বর্ষণ শুরুর পর ঢাকার বিভিন্ন সড়কে পানি জমে অফিসগামী যাত্রীদের নাকাল হতে হয়েছে দিনের শুরুতেই।
Published : 11 Sep 2017, 10:10 AM
সোমবার সকালের এই ভারি বৃষ্টিতে পানি জমার সঙ্গে সঙ্গে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয় রাজধানবাসীকে। বিকাল নাগাদ অধিকাংশ এলাকায় পানি নেমে গেলেও যানজটও ছিল প্রায় সবখানে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১ টা পর্যন্ত রাজধানীতে ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে সকালে তিন ঘণ্টায় ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
চলতি মৌসুমে এ নিয়ে পাঁচবার ভারি বর্ষণ দেখল রাজধানীবাসী। এসময় জলমগ্নতায় নাগরিক দুর্ভোগও ছিল চরমে।
সোমবারের আগে সর্বশেষ ৩ অগাস্ট রাজধানীতে তিন ঘণ্টায় ১২৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
বর্ষার শুরুতে গত ১২-১৩ জুন ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় ঢাকায়। ১৩ জুলাই বৃষ্টি রেকর্ড হয় ১০৩ মিলিমিটার। গত ২৬ জুলাই রাতে মাত্র ৬৭ মিলিমিটারের বৃষ্টিতে নগরবাসীকে জলজট ও যানজটের তীব্রতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার পর থেকে রাজধানীতে কয়েক ঘন্টার ভারি বৃষ্টি চলে।
এতে মতিঝিল, পল্টন, ফকিরাপুল, শান্তিনগর, মালিবাগ, তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার, গ্রিনরোড, ইন্দিরা রোড, সোবহানবাগ, ধানমন্ডি ২৭, পুরান ঢাকার আদালতপাড়া ও মিরপুরের অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
রাজধানীর আজিমপুরের বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়ক ও বিভিন্ন গলিতে জলাবদ্ধতার কথা জানান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কামাল তালুকদার।
আজিমপুরের চাপড়া মসজিদ এলাকার বাসা থেকে মিন্টু রোডে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে যাওয়ার পথে আজিমপুর, আজিমপুর মোড় থেকে পলাশী সড়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সামনে জলাবদ্ধতা দেখেছেন বলে জানান তিনি।
কামাল বলেন, “শাহবাগ মোড়ে জলাবদ্ধতা তৈরি না হলেও তীব্র যানজট ছিল। থেমে থেমে গাড়ি চললেও বাসের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হয়অফিসগামীদের।”
সকালের বৃষ্টিতে মিরপুর ১০ থেকে শুরু করে কাজিপাড়া, শেওড়াপাড়ার সব ছোট-বড় রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়।
বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় মিরপুর থেকে ফার্মগেটে যাওয়ার পথে ভোগান্তিতে পড়ার কথা জানান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সায়মা আক্তার।
তিনি সাধারণত বাসেই চলাচল করেন, তবে বৃষ্টির ফলে প্রতি বাসে উপচেপড়া ভিড়ের কারণে উঠতে পারেননি। অগত্যা তিনগুণ বেশি ভাড়ায় রিকশায় ফার্মগেইটের পথ ধরেন।
“বৃষ্টি হলেই বাসে জায়গা পাওয়া যায় না। আর এ সুযোগে রিকশাওয়ালারা দাম বাড়িয়েছে,” বলেন সায়মা।
নিউ মার্কেট ও পিলখানার বিডিআর গেইট এলাকায় প্রায় কোমর পানি জমার কথা জানান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ফজলুর রহমান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নীলক্ষেতে থেকে বিজিবি গেইট পর্যন্ত কোমর পরিমাণ পানি। নিউ মার্কেটের ভেতরেও মার্কেটের ভেতরেও পানি ঢুকছে।”
যানবাহনের অভাবে অতিরিক্ত ভাড়ায় রিকশা ও ভ্যানে চড়ে রমনার পুলিশ কনভেনশন হলে যাওয়ার কথা জানান ফজলুর।
দুইবার রিকশা পরিবর্তন করে পশ্চিম রাজাবাজারের বাসা থেকে আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবনের অফিসে যান এটুআই কর্মকর্তা নাজমুল আলম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৃষ্টির কারণে পশ্চিম রাজাবাজার, পূর্ব রাজাবাজার ও ইন্দিরা রোডের বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। জাতীয় সংসদ এলাকার পূর্বদিকের সড়কের একটি অংশেও জলাবদ্ধ হয়।”
রাস্তায় পানি জমে থাকায় মিরপুর রোড, মগবাজার থেকে মহাখালীগামী সড়ক, ডিআইটি রোড ও প্রগতি সরণিতে যানজট সৃষ্টি হয়।
এই বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী আর জীবিকার তাগিদে পথে নামা মানুষকে যানবাহন না পেয়ে ভুগতে হয়। কোনো গাড়িতে উঠতে পারলেও যানজটে আটকে থাকতে হয় দীর্ঘ সময়।
ট্রাফিক দক্ষিণের উপ-পুলিশ কমিশনার রিফাত রহমান শামীম বলেন, “মৎস্য ভবনের সামনে, শাহবাগ, বেইলি রোড, শান্তিনগর, আজিমপুর চৌরাস্তা, আজিমপুর, নাজিম উদ্দিন রোড এসময় এলাকায় পানি ছিল। তবে গাড়ির গতি শ্লথ। তবে একেবারে থেমে থাকে না।”
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর এখনও সক্রিয় থাকায় সোমাবর রংপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার বৃষ্টি হচ্ছে।
সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আরিফ হোসেন জানান, সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি (৪৪ মিলিমিটার - ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (>= ৮৯ মিলিমিটার) বর্ষণ হতে পারে।
ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির কারণে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ী এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের শঙ্কা রয়েছে।
সেপ্টেম্বর মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ জানান, চলতি মাসে বাংলাদেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে মাসের প্রথমার্ধে দেশের পূর্বাঞ্চলে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে।
এ মাসে বঙ্গোপসাগরে ১-২ টি মৌসুমী নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলেও পূর্বাভাস রয়েছে বলে জানান তিনি।