কলেজছাত্র সিদ্দিকুর রহমানের চোখের জখম পুলিশের টিয়ার শেলের কারণে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান হলেও বিষয়টি তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।
Published : 24 Jul 2017, 07:27 PM
দুই চোখ হারাতে বসা সিদ্দিকুরকে দেখতে সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে যান পুলিশ কমিশনার। তিনি সেখানে সিদ্দিকুরকে দেখতে যাওয়া মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গেও কথা বলেন।
আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, “বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও সোস্যাল মিডিয়ায় আমরা দেখেছি, ওখানে বলা হচ্ছে এটা পুলিশের টিয়ার শেলের আঘাতে হয়েছে।
“আমি এই ক্ষেত্রে বলতে চাই। গ্যাস বল কিন্তু কখনও সরাসরি নিক্ষেপ করা যায় না। নিচুতে নিক্ষেপ করা যায় না। তাহলে শেলটা মাটিতে পড়ে যায় এবং বিস্ফোরণ হয় না, এটা মিনিমাম ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে উঁচুতে মারতে হয়, যাতে বাতাসে বিস্ফোরিত হয়ে গ্যাসটা ছড়িয়ে পড়ে। উপর থেকে শেলটা আস্তে করে নিচে পড়ে।”
পরীক্ষার সময়সূচির দাবিতে গত বৃহস্পতিবার শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে লাটিপেটা ও কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। তখন সিদ্দিকুরের চোখে টিয়ার শেলের আঘাত লাগে বলে তার সহপাঠীরা জানান।
পুলিশ কমিশনার বলেন, “দেখা গেল তার চোখের নিচে, দুই সাইডেই আঘাত রয়েছে। গুতো জাতীয় কোনো জিনিসের। একই সাথে কীভাবে দুটি জায়গায় আঘাত লাগল? যদি একটা আঘাতে দুটো চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে নাকে কিংবা কপালে আঘাত লাগার কথা। কিন্তু তেমন কোনো আঘাত নেই।
“পরস্পরবিরোধী যেটা পাওয়া যাচ্ছে, এর জন্য ইতোমধ্যে আমাদের জয়েন্ট কমিশনারের (অপারেশন) নেতৃত্বে আর দুজন এসপিকে দিয়ে আমরা একটি তদন্ত কমিটি করেছি। কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। সিসি টিভির ফুটেজ, ভিডিও ফুটেজ সেগুলো শনাক্ত করা হয়েছে।”
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “আমরা এটা তদন্ত করে দেখছি, কী কারণে কীভাবে সে আঘাতপ্রাপ্ত হল। এখানে যদি পুলিশের কোনো গাফিলতি থাকে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে থাকে, অপেশাদার আচরণ হয়ে থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই তাকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে।”
বিকালে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন মাঠে দ্বিতীয় বিভাগ কাবাডির ফাইনাল শেষে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আইজিপি শহীদুল বলেন, “দুই ধরনের বক্তব্য আছে। পুলিশ বলে তারা করে নাই- ফুলের টব লেগেছে, ঢিল লাগছে। আবার কেউ বলে পুলিশের টিয়ার শেল লেগেছে।
“যেহেতু একটি অভিযোগ উঠছে, ঘটনা ঘটেছে। এটা তদন্ত করা হবে। নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হবে। যদি পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো রকম ত্রুটি থাকে, পুলিশ যদি দায়ী থাকে, তাহলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই কলেজছাত্রের জখম হওয়াকে ‘দুঃখজনক’ মন্তব্য করে পুলিশ কমিশনার বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। একজন মেধাবী ছাত্র যে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়েছে, যে কারণেই হোক যার আঘাতেই হোক, অবশ্যই সে ব্যাপারে আমরা আন্তরিকভাবে মর্মাহত।”
সিদ্দিকুরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের চেন্নাই পাঠানোর সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে নিয়েছে সরকার। তার চিকিৎসার খরচও সরকার নিচ্ছে।
ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, “সিদ্দিকুরের একটি চোখে আলো না ফিরলেও আরেকটি চোখে আলো ফেরানোর জন্য ডাক্তাররা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আমরা আশা রাখছি, তার চোখের আলো ফিরবে।”