রাজধানীর শাহবাগে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সময় কাঁদুনে গ্যাসের শেল লেগে আহত সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র মো. সিদ্দিকুর রহমানের দুই চোখে আর আলো ফিরবে না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
Published : 22 Jul 2017, 08:36 PM
আগারগাঁওয়ের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে শনিবার সকালে সিদ্দিকের চোখে অস্ত্রোপচার হয়।
প্রায় দেড় ঘণ্টা অস্ত্রোপচার শেষে হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ইফতেখার মনির সাংবাদিকদের বলেন, “সিদ্দিকুরের চোখের আলো ফেরার সম্ভাবনা কম।”
পরে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আলটিমেটলি আমাদের আর কিছু করার ছিল না। সিদ্দিকুরের দুই চোখের কোনোটিতেই আর আলো ফিরবে না।”
বিদেশে উন্নত চিকিৎসা বা চোখ রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার জানা মতে, চোখ রিপ্লেসমেন্টের কোনো সুযোগ নেই। আর দেশের বাইরে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হওয়া রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজ শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে বৃহস্পতিবার শাহবাগে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করলে তাদের বাধা দেয় পুলিশ।
একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা ও কাঁদুনে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ। সে সময় ‘কাঁদুনে গ্যাসের শেল লেগে’ সিদ্দিকুর আহত হন বলে তার সঙ্গে আন্দোলনের থাকা তিতুমীর কলেজের অ্যাকাউন্টিং শেষ বর্ষের ছাত্র মারুফ জানান।
তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সিদ্দিকুরের বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দি উপজেলার ডাকিরকান্দা গ্রামে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। বাবা হারিয়েছেন শিশু বয়সে।
ছেলে যাতে দৃষ্টি ফিরে পায় সেজন্য ‘আল্লাকে ডাকছিলেন’ সিদ্দিকুরের মা ছুলেমা আক্তার।
“কয়দিন আগেও সিদ্দিকুর কইছে, মা আর মাত্র এক-দুই বছর পরেই চাকরি করমু। তখন আর কষ্ট থাকব না।”
সিদ্দিকুরের চিকিৎসার খরচ যোগাতে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে চাঁদা উঠিয়ে তার মায়ের হাতে তুলে দেন তিতুমীর কলেজের একদল শিক্ষার্থী।
কলেজ কর্তৃপক্ষ বা সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কেউ সিদ্দিকুরকে দেখতে যাননি বলে জানান তারা।
বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আন্দোলনরত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের এক সমাবেশ থেকে সিদ্দিকুরের চিকিৎসার ভার নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়।