চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণ নয় কেন: হাই কোর্ট

চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 July 2017, 07:40 AM
Updated : 9 July 2017, 11:36 AM

এছাড়া উপযুক্ত ওষুধ ও স্প্রে ছিটিয়ে এডিস মশাসহ অন্যান্য মশা নিধন, সারাদেশে চিকুনগুনিয়া উপদ্রুত এলাকাসহ ঢাকা সিটি করপোরেশনের ডাম্পিং স্টেশনগুলো পরিষ্কারে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ এবং চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধের ব্যাপারে জনসচেতনতা তৈরিতে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- রুলে তাও জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।

এক আইনজীবীর করা রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের বেঞ্চে রোববার এই রুল জারি করে।

স্বাস্থ্যসচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে তিন সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে হবে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুজাউদ্দোলা আকন্দ গত ৪ জুলাই হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করেন।

চিকুনগুনিয়া নিয়ে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনও রিট আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করে দেন তিনি।

হাই কোর্টে সুজাউদ্দোলা নিজেই আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপ্রক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

সুজাউদ্দোলা শুনানিতে বলেন, ১৯৫২ সালে আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। পরে তা সাতটি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে এ রোগ দেখা দেয় ২০০৮ সালে, যার প্রকোপ চলতি বছরের মে মাস থেকে বেশি দেখা যাচ্ছে।

বিচারক এ সময় বলেন, সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। গত শুক্রবার মসজিদে সচেতনতার কথা বলা হয়েছে, মোনাজত হয়েছে।

জবাবে রিটকারী বলেন, “আদালত থেকে আদেশ গেলে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা সতর্ক হবেন। খবর অনুযায়ী মশা নিধন প্রকল্পে কোটি কোটি টাকার বাজেট রয়েছে। কিন্তু এত টাকা যায় কোথায়? সেটাও দেখার দরকার।”

বিচারক বলেন, “টাকাতো খরচ হচ্ছে। কিন্তু এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের বিষয়টাও দেখতে হবে। তাদের কি ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না? সম্প্রতি বিদ্যুতের ছেঁড়া লাইনে দুই হাত হারানো এক ছেলের জন্য ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ হয়েছে। এখন ভবিষ্যতে এ বিষয়গুলোর প্রতি সংশ্লিষ্টরা খেয়াল রাখবে।”

আইনজীবী সুজাউদ্দোলা এ সময় বলেন, “এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আবেদনে যুক্ত করে দিচ্ছি।”

পরে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শুনতে চাইলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার বলেন, “আমাদের কোর্টের দুইজন আইন কর্মকর্তাও (সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল) চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত। এ রোগ প্রতিরোধে ব্যাপক হারে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।”

আদেশের পর আইনজীবী সুজাউদ্দোলা সাংবাদিকদের বলেন, “ঢাকাসহ সারাদেশে চিকুনগুনিয়ার প্রদুর্ভাব বেড়েছে। বিশেষ করে ঢাকা শহরে এর প্রাদুর্ভাব মহামারীর আকার ধারণ করেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই। সে কারণেই রিট আবেদনটি করা হয়েছিল। আদালত শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছেন। ”

রিটকারী জানান, ক্ষতিপূরণের বিষয়টি তার আরজিতে ছিল না। আদালত বিষয়টি তোলার পর তা আবেদনে যুক্ত করে নেওয়া হয়।

এডিস প্রজাতির এডিস ইজিপ্টি এবং এডিস এলবোপিকটাস মশার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া রোগের সংক্রমণ ঘটে। চিকুনগুনিয়া ভাইরাসটি টোগা ভাইরাস গোত্রের। মশাবাহিত হওয়ার কারণে একে আরবো ভাইরাসও বলে।

ডেঙ্গু ও জিকা ভাইরাসও এই মশার মাধ্যমে ছড়ায় এবং রোগের লক্ষণ প্রায় একই রকম। এ ধরনের মশা সাধারণত ভোর বেলা অথবা সন্ধ্যায় কামড়ায়। একটি পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে মশার মাধ্যমে অন্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, চিকুনগুনিয়া হলে শরীরের গিটে গিটে ব্যথার পাশাপাশি মাথা কিংবা মাংসপেশিতে ব্যথা, শরীরে ঠাণ্ডা অনুভূতি, চামড়ায় লালচে দানা, বমি বমি ভাব হতে পারে।

চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা না করে জ্বর হলে প্যারাসিটামল সেবন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক না খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

ঘরের ভেতরে অর্ধস্বচ্ছ পানি, ফুলের টব, ফেলে রাখা কৌটা বা বোতল, পানির ট্যাংক, ছাদে জমে থাকা পানি, পরিত্যক্ত টায়ার, আবর্জনার স্তুপ বা ডাবের খোসার ভেতরেও জন্ম নিতে পারে এডিস মশা। তাই বাড়ির ভিতরে, বাড়ির ছাদে যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।

চলতি বর্ষা মওসুমের শুরুতে দেশের বিভিন্ন স্থানে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর ঢাকার ২৩টি এলাকাকে এ রোগের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে সরকারের রোগ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইইডিসিআর।