সোমবার বিকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে চিকুনগুনিয়া নিয়ে জরুরি এক বৈঠক শেষে এ কথা বলেন মেয়র।
সাঈদ খোকন বলেন, “যতটুকু ট্রেন্ড আমরা দেখতে পাই, সেখানে দেখা যাচ্ছে- এই রোগের প্রাদুর্ভাব নিম্নগামী। সেই গ্রাফটা আমরা মেইনটেইন করতে পারি। আগামী চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে আসবে।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে মেয়র বলেন, “তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করেই বলা হচ্ছে, চিকুনগুনিয়ার প্রার্দুভাব নিম্নগামী।”
চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কেও সাংবাদিকদের জানান সাঈদ খোকন।
তিনি বলেন, “চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। আগাম প্রস্তুতিও ছিল না, ধারণাও ছিল না । গত মে মাসে এ রোগ সম্পর্কে জানার সাথে সাথেই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সেমিনার করে ক্র্যাশ প্রোগ্রামসহ জনসচেতনতায় প্রচার শুরু হয়।”
মশা নিয়ন্ত্রণে স্প্রের জন্য লোকবল কম থাকলেও তা বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে প্রয়োজনে এ খাতে আরো ওষুধ কেনায় বাজেট বাড়ানো হবে বলছেন ঢাকা দক্ষিণের এই মেয়র।
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রোগ এক শহর থেকে আরেক শহরে ছড়িয়ে পড়ে, দেশে যাতে কোনো প্রাণঘাতী রোগ প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিমানবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশকারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য একটি টিম রাখারও সুপারিশ করেন সাঈদ খোকন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, “অনেক আগ থেকেই বিমানবন্দরগুলোতে এসব যন্ত্রপাতি আছে, স্ক্যানার আছে। সব সময় থাকে।”
আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে নাসিম বলেন, “আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই, মিডিয়া ভূমিকা রেখে আমাদের সহায়তা করেছে। আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাব। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে বলব- সিটি কর্পোরেশনগুলোতে লোকবল বাড়াতে।”
‘বর্ষা পর্যন্ত থাকছে চিকুনগুনিয়া’
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র চার থেকে ছয় সপ্তাহে চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা প্রকাশ করলেও বৃষ্টি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত চিকনগুনিয়ামুক্ত হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ।
চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব নিম্নগামী নাকি ঊর্ধ্বগামী সেবিষয়ে তথ্য নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “চিকুনগুনিয়া বেড়েছে না কমেছে এটা সম্পর্কে এ মুহূর্তে কিছু বলতে পারব না। গতকালও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
“গতকালও বৃষ্টি হয়েছে, বৃষ্টি যেহেতু শুরু হয়েছে, তাই আমরা এডিস মশা মুক্ত হব বা চিকুনগুনিয়া মুক্ত হব এমন পরিস্থিতি হয়ত হবে না। তবে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যতক্ষণ বৃষ্টি বন্ধ না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এ সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।”
চিকুনগুনিয়া বিষয়ে সচেতনায় মিডিয়া যথেষ্ট পরিমাণে এগিয়ে এসেছে মন্তব্য করে এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, “ঢাকার লেকের মশায় চিকুনগুনিয়া হয় না… তা কিউলিক্স মশা; মিডিয়ায় সেই লেকের বিষয়টি উঠে আসছে। অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে এডিস মশা বিস্তার করছে তা দেখায় না।”
“চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি কন্ট্রোলরুম চালু করা হয়েছে, কোথায় মশা আছে বা প্রতিরোধে কোন ওষুধ কাজ করবে- এসব বিষয় সমন্বিতভাবে কাজ করতে সহায়তা করা হবে এবং আরো জনসচেতনা প্রচার করা হবে।”
শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরেও সচেতনতায় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক আজাদ।
স্বাস্থ্যসেবা সচিব মো. সিরাজুল হক খান বলেন, “আমাদের সামনে একটি বালা এসে উপস্থিত হয়েছে, চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে সমন্বিতভাবে কাজ করা হচ্ছে। ঘরে ঘরে অসুস্থ, আমার ঘরে আমার স্ত্রীর (চিকুনগুনিয়া) হয়েছে। আমি তার দুঃখ থেকে বুঝি, কত দুঃখ মানুষের; জ্বরের পর কিছু করতে পারে না, বসতে পারে না, উঠতে পারে না। এখানে দায়দায়িত্ব অবহেলা করার উপায় নাই।”