‘অপহৃত’ ডানপন্থি অধিকারকর্মী কবি ফরহাদ মজহারের অবস্থান শনাক্ত করার পর খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গায় অভিযান চালাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
Published : 03 Jul 2017, 05:22 PM
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছি। তবে বিষয়টি এখনও বেশ রহস্যজনক।”
ফরহাদ মজহারের পরিবার সোমবার সকালে ঢাকার আদাবর থানায় অভিযোগ করার পর বিকালে খুলনা এলাকায় তার মোবাইল ফোনের অবস্থান শনাক্ত করার কথা জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।
খুলনা র্যাব -৬ এর সিও খন্দাকার রফিুকল ইসলাম রাত পৌনে ৯টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে নগরীর সোনাডাঙ্গার ইব্রাহিম মিয়া সড়কের দুই পাশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওই এলাকার প্রতিটি বাড়িতে তল্লাশি চলছে।”
খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তাদের যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে, সে অনুযায়ী অভিযান চালানো হচ্ছে।
“সর্বশেষ বয়রা এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে, তবে সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি।”
সকাল ১০টার দিকে ফরহাদ মজহারের এক আত্মীয় আদাবর থানায় গিয়ে মৌখিক অভিযোগ জানানোর পর পুলিশ বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নামে।
আদাবর থানার এসআই মহসিন আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিনি বলেছেন, ফরহাদ মজহার সাহেব কোনো একজনের ফোন পেয়ে ভোর সাড়ে ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে বাসা থেকে বের হয়ে যান। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি নিজেই স্ত্রীকে ফোন করে ৩৫ লাখ টাকা যোগাড় করতে বলেন।”
ফরহাদ মজহার থাকেন শ্যামলী রিং রোডের হক গার্ডেন নামের একটি ভবনের চারতলায়। থানা থেকে ওই ভবনের দূরত্ব মোটামুটি তিনশ গজ। অপহরণের অভিযোগ পাওয়ার পর আদাবর থানার ওসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে যান।
তাদের পারিবারিক বন্ধু পরিচয় দিয়ে গৌতম দাস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ফরহাদ মজহার সাহেবকে ভোরে কয়েকজন ডেকে নিয়ে যায়। ২৪ মিনিট পর উনি টেলিফোনে বলেছেন, ‘আমাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে’।”
টাকা দাবির বিষয়ে গৌতম কিছু না বললেও ফরহাদ মজহারের পরিবারের এক সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অপরাধ বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদক লিটন হায়দারকে বলেন, “উনি (ফরহাদ) নিজের মোবাইল থেকেই ফোন করেছিলেন। বলেছেন, ৩৫ লাখ টাকা না দিলে মেরে ফেলবে।”
কিন্তু কারা ফরহাদ মজহারকে ধরে নিয়ে গেছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পরিবারের সদস্যদের কাছে পাওয়া যায়নি। তাদের কোনো সন্দেহর কথাও জানা যায়নি।
আদাবর থানার এসআই মহসিন বলেন, ফরহাদ মজহার সকাল ৫টা ৫ মিনিটে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন বলে সিসিটিভি ভিডিও দেখে তারা নিশ্চিত হয়েছেন।
২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগে গড়ে ওঠা গণজাগরণ আন্দোলনের সমালোচক ফরহাদ মজহার বিভিন্ন বক্তব্যের জন্য আলোচিত।
শাহবাগের ওই আন্দোলনের বিরোধিতাকারী হেফাজতে ইসলামের পক্ষে বিভিন্ন সভা সমাবেশে বক্তব্য দিতেও দেখা যায় তাকে।
জাসদের প্রতিষ্ঠাতা তাত্ত্বিক সিরাজুল আলম খান দাদাভাইয়ের মামাতো ভাই ফরহাদ মজহার নিজেকে মার্কসিস্ট হিসেবে পরিচয় দেন। তবে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিয়ে বাম দলগুলোর সমালোচনা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের হরতালের মধ্যে সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার প্রেক্ষাপট হিসেবে একুশে টেলিভিশনের ‘টকশো’তে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যায়াতি করে গণমাধ্যমের ওপর হামলাকে ‘সঠিক’ বলে মন্তব্য করেছিলেন ৭০ বছর বয়সী ফরহাদ মজহার।
ওই সময় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে এক সভায় আরও কঠোর আন্দোলনে যাওয়ারও আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মেসিতে পড়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে অর্থনীতিতে ডিগ্রি নেন ফরহাদ মজহার। দেশে ফিরে তিনি উবিনীগ নামে একটি এনজিও গড়ে নয়াকৃষি আন্দোলন শুরু করেন।
চিন্তা নামে একটি পত্রিকার সম্পাদক ফরহাদ মজহার সব সময় লুঙ্গি পরে থাকেন, যা নিয়েও রয়েছে আলোচনা।