রাজউকের উচ্ছেদে মালপত্র সরিয়ে দেওয়ার সময় খাটসহ বেশ কিছু আসবাব ভেঙে গেছে জানিয়ে বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ বলেছেন, এখন তাকে মেঝেতে ঘুমাতে হচ্ছে।
Published : 15 Jun 2017, 06:45 PM
এই আইনজীবী বলছেন, তাকে গুলশানের ওই বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার কথা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কোথাও বলা হয়নি।
“তারপরও একেবারে জোর করে বেআইনিভাবে চর দখলের মতো আমার বাড়িটা দখল করেছে। এটা মানবাধিকারের লঙ্ঘন।”
বিএনপিপন্থি জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন সেখানে লিখিত বক্তব্যে মওদুদকে উচ্ছেদের প্রতিবাদ জানান।
তিনি বলেন, গুলশানের যে বাড়ি থেকে ব্যারিস্টার মওদুদকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, তা সরকার বা রাজউকের নয়। বাড়ির মূল মালিক করিম ফ্রানজ সুলায়মান।
“তাছাড়া আদালতের আদেশ বা কোনো প্রকার নোটিস ছাড়া বাড়ির দখলদারকে উচ্ছেদ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।”
গুলশান এভিনিউয়ের ১৫৯ নম্বর হোল্ডিংয়ে ওই বাড়িতে মওদুদ বসবাস করে আসছিলেন গত চার দশক ধরে। রাজউকের হিসাবে ওই সম্পত্তির দাম তিনশ কোটি টাকার বেশি।
ভুয়া আমমোক্তারনামা তৈরি করে মওদুদের ভাইয়ের নামে ওই বাড়ির দখল নেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে দুদক মামলা করলে চার বছর আগে শুরু হয় আইনি লড়াই। সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায় মওদুদের বিপক্ষে গেলে গত ৭ জুন ওই বাড়ি থেকে তাকে উচ্ছেদ করে রাজউক।
সেদিন মওদুদের সামনেই ওই বাড়ি থেকে রাজউকের ট্রাকে করে মালামাল সরিয়ে নেওয়া হয় গুলশানের ৮৪ নম্বর রোডে তার এক ফ্ল্যাটে এবং ৫১ নম্বর রোডে তার এক আত্মীয়র বাসায়। আর তিনি নিজে রাতে ৮৪ নম্বর রোডের ফ্ল্যাটে ওঠেন।
পুরনো বাড়ির ফটকে দাঁড়িয়ে মওদুদ সেদিন বলেছিলেন, “আমি কী করব- কী করার আছে? রাতে ফুটপাতে শুয়ে থাকব… কী করার আছে! জোরের বিরুদ্ধে, বেআইনি শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের মত নাগরিকদের করার আর কী থাকে?”
বিগত চারদলীয় জোট সরকারের এই আইনমন্ত্রী বলেন, স্থানান্তরের সময় তার ‘সারা জীবনের অনেক সংগ্রহ’ হারিয়ে গেছে।
“এর মধ্যে এক হাজার ব্ছরের পুরোনা ইজিপশিয়ান মাটির বাটি হারানো গেছে। সে ধরনের অনেক সংগ্রহ… আমার প্রয়াত দুই পুত্রের স্মৃতি ধংস করার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? ৩৪ বছর পর এসে বললেন বাড়ির মালিক সরকার। জজ কোর্টেও বললেন না, হাই কোর্টও বললেন না।”
ওই বাড়ি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ বলেন, “আমি শিওর, তারা রায় না পড়ে কথা বলছেন। রায়ে কোথাও বলা নেই আমাকে এ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। বের করে দিতে হবে।”
নোটিস ছাড়াই এ উচ্ছেদ অভিযানের বিষয়ে রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার অলিউর রহমান সেদিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “এটা তো আমাদের সম্পত্তি। আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। এটা কি উনার সম্পত্তি? নোটিস দেব কেন?”
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এহসান স্ত্রীসহ ঢাকা ত্যাগ করেন। তারা আর ফিরে না আসায় ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়। ওই বছরই মওদুদ ওই বাড়ির দখল নেন।
বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জয়নাল আবেদীন বলেন, “বাড়ির মালিক ইনজে মারিয়া প্লাজ মারা যাওয়ার পর তার একমাত্র পুত্র সন্তান করিম ফ্রানজ সুলায়মানই এই বাড়ির মূল মালিক। ইটস এ ম্যাটার বিটুইন টু প্রাইভেট পার্টিস। সরকার বা রাজউকের এ ব্যাপারে কোনো স্বার্থ থাকতে পারে না।”
উচ্ছেদের সময় ওই বাড়ির মালামালের কোনো তালিকা করা না হওয়ায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ মালামালের হদিস মিলছে না বলে জানান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নাল।
“এই উচ্ছেদ করার জন্য আদালতের কোনো নির্দেশ তাদের ছিল না। তারপরও বিনা নোটিসে এবং বিনা অনুমতিতে জোরপূর্বকভাবে বাড়িতে প্রব্শে এবং ব্যারিস্টার মওদুদকে উচ্ছেদ করে সংবিধানে প্রদত্ত অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।”
আইনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “দ্য গভার্নমেন্ট অ্যান্ড লোকাল অথরিটি ল্যান্ড অ্যান্ড বিল্ডিং রিকভারি অব পজেশন অর্ডিন্যান্সের অধীনে কাউকে উচ্ছেদ করার ৩০ দিন আগে নোটিস দেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু রাজউক তা করেনি।”
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, বাড়িটি কে দখল করেছে তা মওদুদ আহমদ জানেন না।
“বাড়িটি পুলিশ দখল করেছে? র্যাব দখল করেছে? রাজউক দখল করেছে?... সেদিন যার অধীনে উচ্ছেদ অভিযান হল, তার নাম খলিলুর রহমান। তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলাম, তিনি বাইরে আসবেন না, চেহারা দেখাবেন না। ফোনে কথা বললেন, তিনি নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিলেন।”
খোকন বলেন, “এটা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। উনি বিএনপির রাজনীতি না করলে এ বাড়ি থেকে মওদুদ আহমেদকে উচ্ছেদ হতে হত না। যেহেতু তিনি সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণের সমালোচনা করেন, মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেন, বিরোধী দলের রাজনীতি করেন, তাই তাকে এ বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক, নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ও তৈমুর আলম খন্দকার প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।