তলবে হাজির রেইনট্রির মালিক, সময় নিলেন ডিসি-ওসি

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তলবে হাজির হয়ে ধর্ষণের ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন বনানীর রেইনট্রি হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মহাব্যবস্থাপক; তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা দুই পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত না হয়ে সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2017, 03:27 PM
Updated : 25 May 2017, 03:34 PM

বৃহস্পতিবার বিকালে কমিশনের কারওয়ান বাজার কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় রেইনট্রি হোটেলের ব্যবস্থাপক এইচ এম আদনান হারুন ও মহাব্যবস্থাপক ফ্রাঙ্ক ফরগেটকে।

দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনাস্থল হিসেবে রেইনট্রি কর্তৃপক্ষকে ডাকা হয়েছিল; পাশাপাশি ধর্ষণের মামলা নিতে গড়িমসির অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে ডাকা হয়েছিল ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার মোস্তাক আহমেদ এবং বনানী থানার ওসি ফরমান আলীকে।

রেইনট্রির কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা তাদের কাছ থেকে মূলত জানতে চেয়েছি, যে ঘটনাটা ঘটল সেখানে রেইনট্রি কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টতা কতটুকু... বিশেষ করে ওখানে দুজনের নামে হোটেল বুক করে অন্যরাও থাকলেন কী করে? পুরো পারিপার্শ্বিক অবস্থাটা জানতে চেয়েছি।

“মিডিয়ার কল্যাণে আমরা অনেকগুলো তথ্য ইতোমধ্যে পেয়েছি। সেখানে আরও কিছু বিষয় আসছে, যেমন ধরেন, অস্ত্রের বিষয় আসছে, সেটা কী করে সেখানে গেল, সেটা জানতে চেয়েছি।”

হোটেলে অস্ত্র নেওয়ার বিষয় কী বক্তব্য দিয়েছে, সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নজরুল বলেন, “এই মুহূর্তে আমরা তদন্তের সবটা না বলি। এখন এটুকু বলতে পারি, তারা বলেছেন, ‘অস্ত্রটা আমরা ফ্রন্ট ডেস্কে রেখে দিয়েছিলাম’। এটা তাদের বক্তব্য। তাদের দাবি, এসওপি অনুযায়ী তারা অস্ত্র ফ্রন্ট ডেস্কে রেখেছিল।”

মানবাধিকার কমিশনে ঢুকছেন আদনান হারুন

বনানী চার তারকা রেইনট্রি হোটেলে গত ২৮ মার্চ জন্মদিনের দাওয়াতে ডেকে নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে গত ৬ মে থানায় একটি মামলা হয়।

বনানী থানা পুলিশ প্রথমে মামলা নিতে গড়িমসি করে বলে অভিযোগ করেন ধর্ষিতদের একজন। এরপর আসামি ধরতেও পুলিশের অনীহার অভিযোগের মুখে মামলার তদন্তভার পুলিশের উইমেন ভিকটিম সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশনকে দেওয়া হয়।

ধর্ষণের ঘটনায় মামলার দুই দিন পর গত ৮ মে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

সংসদ সদস্য বি এইচ হারুনের সন্তানদের মালিকানাধীন রেইনট্রি হোটেলের কর্মকর্তারা নিজেদের ‘মানবাধিকার’

লঙ্ঘন হচ্ছে বলে দাবি করে বক্তব্য দেন তদন্ত কমিটির কাছে।

নজরুল বলেন, “এক পর্যায়ে তারা বলেছেন যে, মানবাধিকার তো আমাদেরও আছে। তারা বলেছেন, তারা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন, বিভিন্ন রকম প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদেরকে আবেগাপ্লুত হতেও দেখেছি।”

সাংবাদিকদের মুখোমুখি মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটির সদস্যরা

রেইনট্রি হোটেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে কমিশনের তদন্ত কমিটি সন্তুষ্ট কি না- এ প্রশ্নে নজরুল বলেন, “তাদের বক্তব্যের সবটাতে আমরা একমত নাও হতে পারি। তারা তাদের মতো করে বলেছেন, আমরা আমাদের বিশ্লেষণ করব।”

রেইনট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদনান সাংবাদিকদের বলেন, “তারা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে কি না? যদি কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়ে থাকে, আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্ত হোক। আমরা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ওপর শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই, এটা তদন্তাধীন আছে।

“আমরা বিচার চাই, কারণ আমাদের চেয়ে বড় ভিক্টিম এখানে কেউ নাই। আমরা পদে পদে লাঞ্ছিত হচ্ছি, আমরা সামাজিকভাবে খুব ছোট হয়ে যাচ্ছি। এখানে বিচার আমাদের চেয়ে বেশি কেউ চায় না। আমরা এটা বলেছি।”

ঘটনার পর রেইনট্রি হোটেল মালিক, ব্যবস্থাপক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে’ মন্তব্য করে আদনান বলেন, “আজকে আমার এই প্রতিষ্ঠানটা ধ্বংসের মুখে, আমি, আমার পরিবার এবং আমার প্রতিষ্ঠানের যারা কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা আছে তাদের পরিবার, তারা সামাজিকভাবে ধাপে ধাপে লাঞ্ছিত হচ্ছে, হেয় হচ্ছে। তাদের এখানে কি অপরাধ?”

দুজনের নামে বুকিং নিয়ে এতজন কীভাবে হোটেলে অবস্থান করল- সে প্রশ্নে আদনান বলেন, “বোর্ডার ও কাস্টমার হিসাবে তারা এসেছিলেন। আমাদের যারা ম্যানেজার, ম্যানেজার অপারেশন তাদের বিষয়, তারা জানেন। আমরা এ ব্যাপার আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে সব রকমের সহযোগিতা করছি। তারা যে তথ্য চাচ্ছে আমরা সেগুলো দিচ্ছি।”

‘ভয় ও মানসম্মানের কারণে’ অনেকে হোটেলটির চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছে’ জানালেও কতজন চাকরি ছেড়ে গেছেন, সে তথ্য জানাতে পারেননি আদনান।

আইনজীবী জাহাঙ্গীর কবীরকে সঙ্গে নিয়ে বিকাল সোয়া ৪টার দিকে বিটিএমসি ভবনের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয়ে হাজির হন রেইনট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। হোটেলের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) ফারজান আরা রিমির সঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরগেটের স্ত্রীও সেখানে ছিলেন।

পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত না হওয়ার বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক নজরুল বলেন, “পুলিশ আমাদের কাছে সময় চেয়েছে। তারা বলেছেন যে, তাদের প্রস্তুতি বা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ সব মিলিয়ে তাদের আরেকটু সময় লাগবে। আমাদের পরবর্তী সভাটা হবে ৪ জুন তারিখে। তাদেরকে ওইদিন ডাকব।”

অতীতের ধারাবাহিকতায় পুলিশের পক্ষ থেকে এবারও মানবাধিকার কমিশনকে ‘অসহযোগিতা’ করা হচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

তা ঠিক কি না-জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য আখতার হোসেন বলেন, “এর আগে কোনো বার ওরা আমাদের থেকে সময় নেয় নাই, এবার তারা সময় নিয়েছে। আমরা সময় দিয়েছি। এটা খুব দীর্ঘায়িত হবে বলে আমি মনে করি না। এখন পর্যন্ত আমরা অসহযোগিতা দেখছি না।”