মানুষের কাছে পৌঁছাতে প্রচারে যাচ্ছে পিটিশন কমিটি 

জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরাসরি সংসদের মাধ্যমেও যে প্রতিকার চাওয়া যায়, তা জনগণকে জানাতে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেবে পিটিশন কমিটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2017, 12:09 PM
Updated : 23 May 2017, 12:39 PM

জাতীয় সংসদের এই কমিটি মনে করছে, সরাসরি সংসদের কাছে আবেদন করে প্রতিকার পাওয়ার যে সুযোগ আছে, তা জনগণকে জানাতেই বিজ্ঞপ্তি প্রচার প্রয়োজন।

মঙ্গলবার সংসদ ভবনে পিটিশন কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। চলতি দশম সংসদে পিটিশন কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক এটি। পদাধিকারবলে স্পিকার ১০ সদস্যের এই কমিটির সভাপতি।

বৈঠক শেষে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “সাধারণ নাগরিকরা জানেই না যে সংসদে এমন একটি কমিটি আছে। এজন্য বিষয়টি নিয়ে প্রচার প্রয়োজন। কমিটি পর পর তিনমাস বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে এর ফলাফল দেখবে।”

পিটিশন কমিটির কাজ

কোনো বিষয়ে প্রতিকার পাওয়ার জন্য দেশের যে কোনো নাগরিক নিয়ম মেনে সংসদ সচিবালয়ে আবেদন করতে পারেন। সেখানে একজন সংসদ সদস্যের সই থাকতে হয়। 

স্পিকার ওই আবেদন গ্রহণযোগ্য বলে মনে করলে তা সংসদে তোলা হয়। এরপর সংসদ তা পাঠায় পিটিশন কমিটিতে।

কমিটি এরপর আবেদনকারীসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে শুনানির ব্যবস্থা করে। পরে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।   

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে পিটিশন কমিটিকে জাতীয় সংসদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি হিসেবে বর্ণনা করেন কমিটির সভাপতি শিরীন শারমিন।

তিনি বলেন, যে কোনো জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেশের নাগরিকরা পিটিশনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদের নজরে আনতে পারে। কোনো ব্যক্তি কোন বিষয়ে প্রতিকার না পেলে পিটিশনের মাধ্যমে বিষয়টি সংসদকে অবহিত করারও সুযোগ রয়েছে।

তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ নাগরিকদের এ বিষয়ে অবহিত ও উদ্বুদ্ধ করতে সংসদ সদস্যদের আরও কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয় পিটিশন কমিটির সভা থেকে।

নজির মাত্র একটি

সংসদ সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সালের পর এই কমিটির মাধ্যমে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রতিকার পাওয়ার নজির রয়েছে মাত্র একটি। 

২০০৫ সালে এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সাতক্ষীরা টিভি সম্প্রচার কেন্দ্রের মাঝখানের রাস্তাটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বিকল্প চলাচলের ব্যবস্থা না করেই রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।

ওই আবেদনটি করেছিলেন সাতক্ষীরা বারের তৎকালীন সভাপতি আবুল হোসেন। তাতে স্বাক্ষর করেছিলেন সাতক্ষীরা-১ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিব।

প্রতিকার পাওয়া ‘সহজ হবে’

গত বছর কমিটির প্রথম বৈঠকে পিটিশন কমিটির কার্যপরিধি নিয়ে যে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছিল, তার ধারাবাহিকতা এসেছে দ্বিতীয় বৈঠকেও।

সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতে বলা আছে, এমন কোনো বিষয় গ্রহণযোগ্য হবে না, যা (ক) বাংলাদেশের যে কোনো অংশে আওতাধীন কোনো আইন-আদালতের বিচারাধীন কোনো বিষয় অথবা বিচার বিভাগীয় বা আধা-বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনকারী সংবিধিবদ্ধ ট্রাইব্যুনাল বা কর্তৃপক্ষের কাছে কিংবা কোনো বিষয় অনুসন্ধান বা তদন্ত করার জন্য নিযুক্ত কোনো কমিশন বা তদন্ত আদালতের সম্মুখে নিষ্পন্ন হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে; (খ) যা কোনো বাস্তব বা সিদ্ধান্ত-প্রস্তাব, প্রস্তাবের মাধ্যমে উত্থাপন করা যায়; অথবা (গ) যা আইনের মাধ্যমে কিংবা সরকার বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের প্রণীত বিধি, উপ-বিধি বা প্রবিধানের মাধ্যমে সমাধান করা যায়।

কমিটির সভাপতি স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সে সময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কার্যপ্রণালি বিধিতে পিটিশন করার বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট করা আছে। বিধি ১০০ এর উপ-বিধি ৩ (গ) তে বলা আছে, যা আইনের মাধ্যমে কিংবা সরকার বা দায়িতপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের প্রণীত বিধি, উপ-বিধি বা প্রবিধানের মাধ্যমে সমাধা করা যায়, এমন বিষয় পিটিশন হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে না।

“যে কোনো বিষয়ের সমাধানের জন্য কোনো না কোনো উপায় আছে। তাহলে এখানে পিটিশন কমিটির কাজ কী?”

মঙ্গলবার কমিটির বৈঠক শেষে শিরীন শারমিন বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে একজন নাগরিক আইন থাকলেও প্রতিকারের আইনি সুবিধা পান না। আর্থিক সংশ্লেষের কারণে অনেক সময় আইনি সহায়তা নিতে পারেন না। কমিটি এগুলো দেখবে। বিষয়গুলো এত কঠিন করবে না ।”

এক বছরে উপস্থিতি বেড়েছে একজন

স্পিকারের সভাপতিত্বে পিটিশন কমিটির সদস্যরা হলেন- জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, মো. আব্দুস শহীদ, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সাবের হোসেন চৌধুরী, শেখ মো. নূরুল হক, মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও মইন উদ্দীন খান বাদল।

গত বছরের মে মাসে এই কমিটির প্রথম বৈঠকে অংশ নেন চারজন সংসদ সদস্য। আর মঙ্গলবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পাঁচজন।

সভাপতির বাইরে বৈঠকে এসেছিলেন মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, মো. আব্দুস শহীদ, শেখ মো. নূরুল হক এবং মহীউদ্দীন খান আলমগীর।

গত বছরের মে মাসে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, সাবের হোসেন চৌধুরী ও শেখ মো. নূরুল হক।

সংসদ সচিবালয়ের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কমিটি কোরাম হলে বৈঠক করে। আজকেও তাই হয়েছে।”