রেইনট্রির আদনানকে তলবে ‘যেতেই হবে’

বনানীর রেইনট্রি হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচ এম আদনান হারুনকে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগে তলবের নোটিস হাই কোর্ট স্থগিত করলেও সেই আদেশ সাড়ে তিন ঘণ্টার মাথায় সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালতে আটকে গেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2017, 12:12 PM
Updated : 22 May 2017, 03:15 PM

এর ফলে নোটিস অনুযায়ী আদনানকে মঙ্গলবার শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগের কাকরাইলের কার্যালয়ে হাজির হয়ে অবৈধভাবে মদ রাখা এবং ভ্যাট ও শুল্ক ফাঁকির অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে হবে বলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন।

ঝালকাঠির সরকারদলীয় সাংসদ বজলুল হক হারুনের ছেলে আদনান শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের ওই নোটিসের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেছিলেন। 

তার আবেদন শুনে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ সোমবার নোটিসের কার্যকারিতা এক মাসের জন্য স্থগিত করে দেয়। পাশাপাশি ওই নোটিস কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করা হয়।

রেইনট্রি মালিকের পক্ষে হাই কোর্টে শুনানি করেন আইনজীবী আহসানুল করিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান।

আহসানুল করিম সে সময় বলেন, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের নোটিসটি দেওয়া হয়েছে কাস্টমস ও মানি লন্ডারিং আইনের অধীনে। যদি মদ ও অ্যালকোহল সংরক্ষণের অভিযোগ আনা হয়, তাহলে নোটিস হওয়ার কথা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীনে। এ কারণে ওই নোটিসের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছেন তারা।

হাই কোর্টের ওই আদেশ পাওয়ার পরপরই তা আটকাতে চেম্বার আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। বিকালে শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালতের বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার হাই কোর্টের ওই আদেশ স্থগিত করে দেন।

চেম্বার আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “চেম্বার আদালত ছয় সপ্তাহের জন্য হাই কোর্টের আদেশটি স্থগিত করেছেন।”

তরুণীদের অভিযোগ অনুযায়ী, এই রেইনট্রি হোটেলেই ঘটে ধর্ষণের ঘটনা

আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদারের ছেলে সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধুরা গত ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের দাওয়াতে ডেকে নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করে বলে গত ৬ মে থানায় মামলা হয়।

দিলদার ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালানের অভিযোগ থাকায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশে একটি অনুসন্ধান কমিটি করে তদন্ত শুরু করে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।

এর অংশ হিসেবে গত ১৪ ও ১৫ মে ঢাকায় আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শাখায় অভিযান চালিয়ে বাদে সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণালঙ্কার ও ৪২৭ গ্রাম হীরার গয়না ‘আটক’ করা হয়, যার মোট দাম ১৭৯ কোটি টাকা।

ওই সময়ই বনানীর হোটেল রেইনট্রিতে অভিযান চালান শুল্ক গোয়েন্দারা। চার তারকা ওই হোটেলের বিভিন্ন কক্ষ তল্লাশি করে ১০ বোতল বিদেশি মদ ও নথিপত্র জব্দ করা হয়।

শুল্ক গোয়েন্দারা জানান, হোটেল কর্তৃপক্ষ বারের লাইসেন্স দেখাতে না পারলেও সেখানে মদ রাখা হয়েছিল।

গত জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ভ্যাট নিবন্ধন নিলেও কোনো অর্থ পরিশোধ না করে ওই হোটেল কর্তৃপক্ষ আট লাখ ১৫ হাজার টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বলেও শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের অভিযোগ।

এরপর গত ১৪ মে ‘ব্যাখ্যাহীনভাবে’ সোনা ও হীরার গয়না মজুদের অভিযোগে আপন জুয়েলার্স এবং অবৈধভাবে মদ রাখার অভিযোগে বনানীর রেইনট্রি হোটেলের মালিকদের তলব করা হয়।

রেইনট্রি হোটেল থেকে উদ্ধার করা মদ। ছবি: শুল্ক গোয়েন্দা বিবভাগ

সে অনুযায়ী আপন জুয়েলার্সের তিন মালিক দিলদার ও তার দুই ভাই গুলজার আহমেদ ও আজাদ আহমেদ গত ১৭ মে শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে হাজির হলে তাদের পাঁচ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু তারা আটক গয়নার কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় ২৩ মে আবার হাজির হতে বলা হয়।

অন্যদিকে রেইনট্রির এমডি আদনান সেদিন অসুস্থতার কথা বলে নিজে না গিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে সময়ের আবেদন পাঠান।

শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের মহাপরিচালক মইনুল খান সেদিন বলেন, “রেইনট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অসুস্থতার কথা বলে এখানে আসেননি। কিন্তু তার অসুস্থতার কোনো কাগজপত্রও আইনজীবীরা দেখাতে পারেননি। আগামী ২৩ মে বেলা ১১টায় তাদের আসতে বলা হয়েছে। সেদিন না এলে শুল্ক গোয়েন্দা দপ্তর একতরফাভাবেই শুনানির নিষ্পত্তি করবে।”

বনানীতে আবাসিক এলাকায় কে ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বর বাড়িতে চার তারকা ওই হোটেলটির মালিক আল-হুমায়রা গ্রুপ। ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ বজলুল হক হারুন ওই গ্রুপের চেয়ারম্যান। তার মেয়ে হুমায়রার নামে ওই গ্রুপের নাম। তার চার ছেলেমেয়েই পরিচালনা পর্ষদে আছেন। 

সাংসদ হারুনের ছেলেদের মধ্যে এইচ এম আদনান হারুন আছেন ওই হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে। তবে দেখাশোনা করেন মূলত তার ভাই মাহির হারুন।

মাহিরের বন্ধু পরিচয় দিয়েই সাফাত ধর্ষণের ঘটনার দিন ওই হোটেলে উঠেছিলেন বলে হোটেলকর্মীরা পুলিশকে জানিয়েছেন।

মামলার আসামিদের মধ্যে সাফাত, তার বন্ধু সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলী ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার আরেক আসামি নাঈম আশরাফকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।