রেইনট্রির এমডিকে দেওয়া নোটিস আদালতে স্থগিত

অবৈধভাবে মদ রাখা এবং ভ্যাট ও শুল্ক ফাঁকির অভিযোগের ব্যাখ্যা চেয়ে বনানীর রেইনট্রি হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচ এম আদনান হারুনকে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগে তলবের নোটিস এক মাসের জন্য স্থগিত করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2017, 08:40 AM
Updated : 22 May 2017, 08:40 AM

ওই নোটিসের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ঝালকাঠির সরকারদলীয় সাংসদ বজলুল হক হারুনের ছেলে আদনানের করা একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ সোমবার এই আদেশ দেয়।

শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের ওই নোটিসে আদনানকে মঙ্গলবার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কাকরাইলের কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছিল। তার ঠিক আগের দিন হাই কোর্টের এই আদেশ এল।

নোটিসের কার্যকারিতা এক মাসের জন্য স্থগিত করার পাশাপাশি ওই নোটিস কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছে হাই কোর্ট।

রেইনট্রি মালিকের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী আহসানুল করিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান।

পরে আহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, “নোটিসের কার্যকারিতা আদালত স্থগিত করায় তাকে (আদনান) আর আগামীকাল ব্যাখ্যা দিতে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরে হাজির হতে হচ্ছে না।”

আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদারের ছেলে সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধুরা গত ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের দাওয়াতে ডেকে নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করে বলে গত ৬ মে থানায় মামলা হয়।

দিলদার ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালানের অভিযোগ থাকায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশে একটি অনুসন্ধান কমিটি করে তদন্ত শুরু করে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।

এর অংশ হিসেবে গত ১৪ ও ১৫ মে ঢাকায় আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শাখায় অভিযান চালিয়ে বাদে সাড়ে ১৩ মণ স্বর্ণালঙ্কার ও ৪২৭ গ্রাম হীরার গয়না ‘আটক’ করা হয়, যার মোট দাম ১৭৯ কোটি টাকা।

ওই সময়ই বনানীর হোটেল রেইনট্রিতে অভিযান চালান শুল্ক গোয়েন্দারা। চার তারকা ওই হোটেলের বিভিন্ন কক্ষ তল্লাশি করে ১০ বোতল বিদেশি মদ ও নথিপত্র জব্দ করা হয়।

শুল্ক গোয়েন্দারা জানান, হোটেল কর্তৃপক্ষ বারের লাইসেন্স দেখাতে না পারলেও সেখানে মদ রাখা হয়েছিল।

গত জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ভ্যাট নিবন্ধন নিলেও কোনো অর্থ পরিশোধ না করে ওই হোটেল কর্তৃপক্ষ আট লাখ ১৫ হাজার টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বলেও শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের অভিযোগ।

এরপর গত ১৪ মে ‘ব্যাখ্যাহীনভাবে’ সোনা ও হীরার গয়না মজুদের অভিযোগে আপন জুয়েলার্স এবং অবৈধভাবে মদ রাখার অভিযোগে বনানীর রেইনট্রি হোটেলের মালিকদের তলব করা হয়।

সে অনুযায়ী আপন জুয়েলার্সের তিন মালিক দিলদার ও তার দুই ভাই গুলজার আহমেদ ও আজাদ আহমেদ গত ১৭ মে শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে হাজির হলে তাদের পাঁচ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু তারা আটক গয়নার কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় ২৩ মে আবার হাজির হতে বলা হয়।

অন্যদিকে রেইনট্রির এমডি আদনান সেদিন অসুস্থতার কথা বলে নিজে না গিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে সময়ের আবেদন পাঠান।

শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের মহাপরিচালক মইনুল খান সেদিন বলেন, “রেইনট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অসুস্থতার কথা বলে এখানে আসেননি। কিন্তু তার অসুস্থতার কোনো কাগজপত্রও আইনজীবীরা দেখাতে পারেননি। আগামী ২৩ মে বেলা ১১টায় তাদের আসতে বলা হয়েছে। সেদিন না এলে শুল্ক গোয়েন্দা দপ্তর একতরফাভাবেই শুনানির নিষ্পত্তি করবে।”

বনানীতে আবাসিক এলাকায় কে ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বর বাড়িতে চার তারকা ওই হোটেলটির মালিক আল-হুমায়রা গ্রুপ। ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ বজলুল হক হারুন ওই গ্রুপের চেয়ারম্যান। তার মেয়ে হুমায়রার নামে ওই গ্রুপের নাম। তার চার ছেলেমেয়েই পরিচালনা পর্ষদে আছেন।  

সাংসদ হারুনের ছেলেদের মধ্যে এইচ এম আদনান হারুন আছেন ওই হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে। তবে দেখাশোনা করেন মূলত তার ভাই মাহির হারুন।

মাহিরের বন্ধু পরিচয় দিয়েই সাফাত ধর্ষণের ঘটনার দিন ওই হোটেলে উঠেছিলেন বলে হোটেলকর্মীরা পুলিশকে জানিয়েছেন।

মামলার আসামিদের মধ্যে সাফাত, তার বন্ধু সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলী ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার আরেক আসামি নাঈম আশরাফকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।