সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় জঙ্গি আস্তানায় চলমান অভিযানের মধ্যে শনিবার রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পুরো দেশ যখন এক হয়েছে, উন্নতির পথে অগ্রসর হচ্ছি যখন, অর্থনীতিও সচল হয়েছে, তখন দেশের মধ্যেই একটি চক্র দেশি-বিদেশি চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। তারা দেশকে অকার্যকর করে দিতে চায়।”
এই দেশি-বিদেশি চক্র ইসলাম ধর্মকে ‘সন্ত্রাসী ধর্ম’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতেও গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মন্তব্যের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, কোনো এক সময় বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন তিনি। তিনি বলেছেন, ৩০ লক্ষ শহীদের নাকি কোনো হিসাব নিকাশ নেই- এ তো একেবারে অবিশ্বাস্য!
“আমি নিজেই তো গ্রামের পথে পথে হাজারো মানুষের লাশ দেখেছি। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রামের পর গ্রাম শূন্য হয়ে গেছে। পথঘাট, নদীর পাড় সর্বত্র হাজারো মানুষের মৃতদেহ পড়ে আছে।”
বক্তব্যের শুরুতে ৭ মার্চের ভাষণ, নিজের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার ইতিহাস শোনান আসাদুজ্জামান খান কামাল। শোনান একাত্তরের ২৫ মার্চের ভয়াল রাতের কথা; মুক্তিযুদ্ধের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের কথাও।
“সব অত্যাচারের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু সেদিন স্বাধীনতার ডাক দিলেন। সে ডাক ছিল বাঙালির হৃদয়ের কথা,” বলেন তিনি।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত জাতীয় গণহত্যা দিবসের এই আলোচনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার স্বাগত বক্তব্যে মুখ্য হয়ে উঠে সিলেটের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের কথা।
ওই জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর শনিবার সকালে সেখানে পুলিশের সহায়তায় অভিযান শুরু করেন সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোরা, বাড়িটিতে জিম্মি দশা থেকে ৭৮ জনকে উদ্ধার করা হয়।
অভিযান নিয়ে সন্ধ্যায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান সাংবাদিকদের ব্রিফ করার পরপর ঘটনাস্থলের কাছে দুদফা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন র্যা ব-পুলিশের তিন কর্মকর্তাসহ প্রায় অর্ধশত মানুষ।
পুলিশ কর্মকর্তাদের হতাহতের খবরে উপস্থিত পুলিশ সদস্য ও দর্শকদের মাঝে একটু পরপরই গুঞ্জন উঠছিল। সেদিকে ইঙ্গিত করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “আমরা কি ভয় পাব, আমরা কি হেরে যাব? কখনও না।
“পুলিশের প্রতিটি সদস্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জ্বীবিত দেশপ্রেমিক। তারা জীবন দিয়ে বারবার তাদের দেশপ্রেমের প্রমাণ রাখছে। আমরা কোনোভাবেই এ দেশকে কোনো নরপশুর হাতে জিম্মি হতে দিতে পারি না।”
অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, “পঁচাত্তরের পরে যে সাম্প্রদায়িক শক্তির উন্মেষ ঘটেছিল সেটি এখন জঙ্গিরূপে হাজির হয়ে দেশকে সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক আর পাকিস্তানের মতো দেশে পরিণত করতে মতলব করছে।”
আলোচনা শেষে মান্নান হীরার রচনা ও নির্দেশনায় পুলিশ সদস্যদের অভিনীত নাটক ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’ মঞ্চস্থ হয়। এরপর আবৃত্তি নিয়ে আসেন বাকশিল্পাঙ্গনের সদস্যরা।
শিল্পী আরিফ রহমান শোনান ‘তোরা ঢাকা শহর রক্তে ভাসাইলি’ গানটি। একক সংগীত পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী বুলবুল মহলানবীশ।
‘আমরা মানুষের গান গাই’ শিরোনামে দলীয় সংগীত পরিবেশন করে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী।
নির্মলেন্দু গুণের কবিতা পাঠ করেন আবৃত্তিশিল্পী আহকাম উল্লাহ। দলীয় সংগীত পরিবেশন করে বহ্নিশিখা, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী।
এরপর রাজারবাগ পুলিশ লাইন স্মৃতিস্মম্ভে ৪৬ বছর আগের কালোরাতে পাক হানাদার বাহিনীর চালানো নির্মম গণহত্যার শিকার পুলিশ সদস্য ও সাধারণ মানুষের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আলোক প্রজ্বলন করা হয়।