‘গণহত্যা দিবস পালন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশের দিকে যাত্রা’

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্নকে আবার সামনে নিয়ে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2017, 01:44 PM
Updated : 25 March 2017, 01:44 PM

সরকার সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এবারই প্রথমবারের মতো ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের স্মরণে গণহত্যা দিবস পালন করছে বাংলাদেশ।

দিবসটি উপলক্ষে শনিবার বিকালে বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শফিক আহমেদ বলেন, স্বাধীনতার পরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের গণহত্যার বিচারের পদক্ষেপ নিয়েছিল।

“এ লক্ষ্যে আইনি পদক্ষেপও গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু বৈরী বিশ্ব পরিস্থিতি এবং ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দক্ষিণপন্থিরা বাংলাদেশের ক্ষমতাকাঠামো দখল করে নিল। তখন এ বিষয়ে অগ্রগতিও মুখ থুবড়ে পড়ে।”

২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে আইমন্ত্রীর দায়িত্ব পান শফিক আহমেদ। ওই সময়ই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়।

গণহত্যা দিবস নিয়ে শফিক আহমেদ বলেন, “বিলম্বে হলেও সম্প্রতি জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, এটিই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমাজ ও রাষ্ট্রগঠনের স্বপ্নকে আবার সামনে নিয়ে এসেছে। ”

বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে এই অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান।

অনুষ্ঠানে একক বক্তৃতা দেন ইতিহাসের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।

তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রত্যাবর্তন করতে শুরু করেছে। আমরা দেরিতে হলেও গণহত্যার ইতিহাস বিস্মৃতির হাত থেকে উদ্ধারের প্রয়াসে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করেছি। এজন্য মহান জাতীয় সংসদ এবং বর্তমান সরকারের বড় ধন্যবাদ প্রাপ্য।”

তিনি বলেন, “১৯৭৫-এর পর বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী-সামারিক শাসকবর্গও ক্রমশ এদেশকে গণহত্যাকারী পাকিস্তান রাষ্ট্রের আদর্শের অনুগামী করতে চেয়েছে। তাই তারা জনমানস থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি, গণহত্যার স্মৃতি ভুলিয়ে দিতে চেয়েছে। কিন্তু গণহত্যা বিষয়ে জনস্মৃতি কখনো বিস্মৃত হবার নয়; তাই আজ বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হচ্ছে।”

গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির যে চেষ্টা সরকার চালাচ্ছে, তার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গণহত্যার শিকার মানুষের স্মৃতিকে জাগিয়ে রাখা নাগরিকদের কর্তব্য বলে মন্তব্য করেন মুনতাসীর মামুন।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহফুজা খানম, সংসদ সদস্য কবি কাজী রোজী, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মুহাম্মদ সামাদ ও সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে একাত্তরে ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নিহতদের স্মরণে স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের কবিতা আবৃত্তিতে অংশগ্রহণ করেন আবৃত্তিশিল্পী ডালিয়া আহমেদ ও শিমুল মুস্তাফা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির সহপরিচালক সায়েরা হাবীব।