রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধী হরতালের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ ঠেকাতে মারমুখী পুলিশ শাহবাগ থানার সামনে দুই সাংবাদিককে মারধর করেছে।
Published : 26 Jan 2017, 04:53 PM
হরতালের শেষভাগে বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ২টার দিকে ওই ঘটনার আগে হরতালসমর্থক কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে মারধরের পাশাপাশি একজনকে রাস্তায় ফেলে পোশাক ধরে ছেঁচড়ে নিয়ে যেতে দেখা গেছে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে।
পুলিশের মারধরে আহত এটিএন নিউজের প্রতিবেদক এহসান বিন দিদার ও ক্যামেরা পারসন আব্দুল আলীমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় শাহবাগ থানার একজন এএসআইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে পুলিশের রমনা বিভাগের উপ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
সকাল ৬টায় এই হরতাল শুরুর পর বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা টিএসসি মোড় থেকে হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে কঠোর অবস্থান নেয় পুলিশ।
বিক্ষোভকারীদের শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেওয়া ঠেকাতে দফায় দফায় কাঁদুনে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়া হয়, ব্যবহার করা হয় জলকামান। এ সময় হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পুলিশের টিয়ারশেলের জবাবে বিক্ষোভকারীদের ঢিল ছুড়তে দেখা যায়।
এক পর্যায়ে কাঁদুনে গ্যাস থেকে বাঁচতে আন্দোলনকারীরা চারুকলা অনুষদের ভেতরে অবস্থান নিলে সেখানেও টিয়ার শেল ছোড়ে পুলিশ।
“এরপর পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে এসে তাকে নামিয়ে মারধর শুরু করেন। এ সময় বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন তাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাদের কয়্জেনকে ধরে পুলিশ পেটানো শুরু করে।”
সাংবাদিকরা এ সময় ওই ঘটনার ছবি নেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেন। পুলিশ কয়েকজন পিকেটারকে টেনে হিঁচড়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় এটিএন নিউজের দুই সাংবাদিকও ভিডিও করতে করতে থানার ফটকে চলে যান।
এরপর কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাদের ঘিরে ধরে কিল-ঘুষি-লাথি মারতে মারতে আটক বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে থানার ভেতরে নিয়ে যায়।
পরে দিদার ও আলীমকে পুলিশ ছেড়ে দিলে তাদের আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে এটিএন নিউজের হেড অব কন্টেন্ট নূর সাফা জুলহাজ জানান।
আলীম হাসপাতালে সাংবাদিকদেরকে বলেন, “আমার হাতে ক্যামেরা থাকার পরও পুলিশ মেরেছে। রাইফেলের বাঁট দিয়ে মারায় আমার হাত থেকে পড়ে ক্যামেরা ভেঙেছে।”
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পুলিশের উপ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমরা শাহবাগ থানার এএসআই এরশাদকে শনাক্ত করতে পেরেছি। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আর কেউ জড়িত আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
শাহবাগ থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক জানিয়েছেন, তারা ওই এলাকা থেকে দুই বিক্ষোভকারীকে আটক করেছেন।
হরতাল চলাকালে পুলিশের টিয়ার শেল মাথায় লেগে কালের কণ্ঠের চিফ ফটোগ্রাফার শেখ হাসান এবং বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ঢিলে ঢাকা ট্রিবিউনের আলোকচিত্রী মোহাম্মদ হোসেন অপুও আহত হয়েছেন।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টিয়ার শেল ও রাবার বুলেটে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকী আক্তারসহ অন্তত দশজন আহত হয়ে হাসপাতালে গেছেন।
ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বাচ্চু মিয়া জানান, আহতদের মধ্যে লাকী আক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। এছাড়া ছাত্র ফেডারেশনের নেতা কাঁকন বিশ্বাস, হাবিবা বেনজির, ছাত্র ইউনিয়নের লাবনী মণ্ডল এবং ছাত্রফ্রন্টের নাসিরউদ্দিন প্রিন্সকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।