ওয়াশিকুর বাবু হত‌্যা: প্রথম দিন তিনজনের সাক্ষ‌্য

ঢাকার বেগুনবাড়ি এলাকায় ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু খুন হওয়ার পর জনতার হাতে ধরা পড়া দুই জঙ্গিকে আদালতে শনাক্ত করেছেন মামলার একজন সাক্ষী।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Oct 2016, 01:40 PM
Updated : 26 Oct 2016, 01:40 PM

এদিকে মামলার বাদী ওয়াশিকুর বাবুর ভগ্নিপতি মো. মনির হোসেন মাসুদকে ‘খুঁজে পওয়া যাচ্ছে না’ বলে জানিয়েছেন এ আদলতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সালাউদ্দিন হাওলাদার।

তিন মাস আগে পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ‌্যগ্রহণের মধ‌্য দিয়ে বিচার শুরুর পর কয়েক দফা পিছিয়ে বুধবার ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ এস এম জিয়াউর রহমানের আদালতে এ মামলার সাক্ষ‌্যগ্রহণ শুরু হয়।  

প্রথম দিন সাক্ষ্য দেন তেজগাঁও বেগুনবাড়ি এলাকার দোকানী মনিরুল ইসলাম, ওই এলাকার ওষুধের দোকানী তপনকুমার শীল ও পথচারী আবু ইউসুফ।

এ মামলার আসামি আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য আরিফুল ইসলাম, জিকরুল্লাহ, সাইফুল ইসলাম, জুনায়েদ ওরফে তাহের ও হাসিব ওরফে আব্দুল্লাহর মধ‌্যে প্রথম তিনজন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

২০১৫ সালের ৩০ মার্চ তেজগাঁওয়ে নিজের বাসা থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের চাপাতির আঘাতে খুন হন ওয়াশিকুর, যিনি ফেইসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে ধর্মীয় গোড়ামির বিরুদ্ধে লিখতেন।

ওইদিন আরিফুল ও জিকরুল্লাহকে হত্যাকাণ্ডের পরপরই ঘটনাস্থল থেকে ধরে পুলিশে দেয় জনতা। আর হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে সাইফুলকে ধারালো অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তোকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে।

ওয়াশিকুরের ভগ্নিপতি মনির হোসেন মাসুদ ঘটনার দিনই তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে গোয়েন্দা পুলিশ গতবছর ১ সেপ্টেম্বর পাঁচজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয়। 

মামলার তৃতীয় সাক্ষী আবু ইউসুফ তার সাক্ষ্যে বলেন, “আমি ওই সময় ঘটনাস্থলের কাছে একটি দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। হইচই শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পাই এক লোক রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এবং জনতা দুইজনকে ধরে রেখেছে।”

এ সময় আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো জিকরুল্লাহ ও আরিফুলকে শনাক্ত করেন তিনি।

সাক্ষী মনিরুল আদালতকে বলেন, “সকাল সোয়া ৯টায় আমি দোকান খুলে পরিষ্কার করছিলাম। দেখি এলাকার কিছু লোক গলি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। হৈচৈ শুনে আমি দোকান থেকে বের হয়ে কয়েক গজ দূরে গিয়ে দেখি একটা লোক রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সামনে দুটো চাপাতি ছিল, অনেক লোকজন ছিল। পুলিশ আর সাংবাদিকও ছিল।

“এলাকার লোকজন রক্তাক্ত লোকটাকে পুলিশের গাড়িতে তুলে দেয়। পরে শুনি সে মারা গেছে; আর জনগণ নাকি দুইজনকে ধরে পুলিশে দিয়েছে।”

তপন কুমার শীলও তার সাক্ষ‌্যে একই ধরনের বক্তব‌্য দেন বলে এ আদালতের পেশকার শাহাদাত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

মনিরুল বা তপন কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আসামিদের কাউকে শনাক্ত করেননি। এদিন সাক্ষীদের কাউকে জেরাও করা হয়নি।

এদিকে এ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সালাউদ্দিন হাওলাদার আদালতকে বলেন, মামলার বাদী মনির হোসেন মাসুদকে ‘খুঁজে পওয়া যাচ্ছে না।’

“লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার উত্তর হাজীপুর গ্রামে তার নামে সমন ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠানো হলেও তিনি আদালতে আসছেন না। পুলিশও তাকে খুঁজে পাচ্ছে না।”

এ মামলার অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৪০ জনকে সাক্ষী করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

সালাউদ্দিন হাওলাদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এর আগে সাক্ষ্য গ্রহণের কয়েকটি তারিখ থাকলেও সাক্ষীরা অনুপস্থিত ছিলেন। আর বিচার শুরুর পর্যায় থেকেই মামলার বাদী অনুপস্থিত।”

তিনি জানান, মামলার আসামি আরিফুল ইসলাম ওরফে এরফান ওরফে মুশফিক নিজেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক দাবি করে শিশু আদালতে বিচারের আবেদন করেছিলেন। তবে তার বয়স ১৯-২০ বছর হওয়ায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিচারক সেই আবেদন নাকচ করে দেন।

পেশকার শাহাদাত হোসেন জানান, বিচারক আগামী ৮ নভেম্বর এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন রেখেছেন।