প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মীয় সর্বোচ্চ সভায় আসন পাওয়ার জন্য মনোনীত হওয়ার সম্মানটি দেশের অর্জন বলে মনে করছেন আর্চবিশপ প্যাট্রিক ডি রোজারিও।
Published : 10 Oct 2016, 09:35 PM
তিনি বলেছেন, “এটি আমার ব্যক্তিগত অর্জন নয়। এটি হচ্ছে এদেশের প্রতি পোপের ভালবাসা; এখানকার মানুষের জন্য তিনি এ স্বীকৃতি দিয়েছেন। এটি আমাদের চার্চের জন্যও স্বীকৃতি।”
“ফলে এ স্বীকৃতি পুরো বাংলাদেশের, এখানে আমি নিজের কোনো অর্জন দেখি না,” বিনয়ী কণ্ঠ বাংলাদেশে ক্যাথলিকদের প্রধান ধর্মগুরুর।
নতুন কার্ডিনাল মনোনয়ন দিয়ে রোমের ভ্যাটিকানে পোপ ফ্রান্সিসের ঘোষণার পর সোমবার ঢাকার কাকরাইলে আর্চবিশপ হাউজে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই প্রতিক্রিয়া জানান প্যাট্রিক রোজারিও।
রোববার সাপ্তাহিক ভাষণে বিশ্বের ক্যাথলিকদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ অপ্রত্যাশিতভাবেই নতুন ১৭ কার্ডিনালের নাম ঘোষণা করেন, যার মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের প্যাট্রিক রোজারিও।
অন্য ১৬ জনের সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে আগামী ১৯ নভেম্বর কার্ডিনাল হিসেবে অভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন ৭৩ বছর বয়সী প্যাট্রিক রোজারিও।
এই কার্ডিনালরাদের মধ্যে যাদের বয়স ৮০ বছরের নিচে, তারা পোপ নির্বাচনে ভোট দেন। কার্ডিনালদের মধ্য থেকে পোপ হওয়ার সুযোগও রয়েছে।
নতুন ১৭ কার্ডিনালদের মধ্যে বাংলাদেশি প্যাট্রিক রোজারিওসহ ১৩ জনের বয়স ৮০ বছরের নিচে। এই ১৭ জনকে সাতটি মহাদেশ থেকে বেছে নিয়েছেন পোপ, যার মধ্যে একজন মালয়েশীয়ও রয়েছেন।
প্যাট্রিক রোজারিও বলেন, বর্তমানে ১২০ জন কার্ডিনাল রয়েছেন, যাদের বয়স ৮০ বছরের নিচে। তাদেরই ক্ষমতা আছে নতুন পোপ নির্বাচনের।
কোনো পোপ মারা গেলে কিংবা কেউ অবসরে গেলে নতুন পোপ নির্বাচন করে যে ‘কলেজ অব ইলেক্টর’, কার্ডিনালরা সেই পর্ষদের সদস্য।
প্যাট্রিক রোজারিও বলেন, “আমাদের চার্চের মধ্যে একাধিক মণ্ডলীতে একটি ধারা আছে যে, আমরা কোনো সময়ই প্রার্থী হতে পারব না। তবে এ ১২০ এর মধ্যে, এমনকি বাইরে থেকেও কেউ পোপ নির্বাচিত হতে পারেন। সেক্ষেত্রে ৮০ বছরের নিচের কার্ডিনালদের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের মাধ্যমে তাকে নির্বাচিত হতে হবে। আর যতক্ষণ না দুই-তৃতীয়াংশ হবে, ততক্ষণ ভোট চলবে।”
নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, “বেঁচে থাকলে কার্ডিনাল থেকে দায়িত্ব আসবে পরবর্তী যিনি পোপ হবেন তাকে নির্বাচন করার। আর বড় জিনিস হচ্ছে, বাংলাদেশ চার্চ থেকে অধিকার পাচ্ছে প্রথমবার।
“কোনো দেশ থেকে যখন কেউ কার্ডিনাল হিসেবে মনোনয়ন পান, তখন তা ওই দেশের জন্য সম্মানের। এটি একটি রেকর্ড। এটি একটি স্বীকৃতি, যা ধর্মগুরু নিজে দেন।”
প্যাট্রিক রোজারিও বাংলাদেশের ৮ জন বিশপের প্রধান সভাপতি। ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশে ক্যাথলিকদের প্রধান ধর্মগুরুর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
বাংলাদেশের কাউকে পোপের বেছে নেওয়ার কারণ কী বলে মনে করেন- এই প্রশ্নে প্যাট্রিক রোজারিও বলেন, “ব্যক্তি হিসেবে আমি যে সমস্ত কাজে জড়িত ছিলাম, সেটি হচ্ছে এর প্রতিফলন। বাংলাদেশের মধ্যে ঝামেলা আছে, শুভ আছে, কৃষ্টি আছে, সম্প্রীতি আছে। এগুলো যেন বিশ্বের কাছে জানাতে পারি, সেজন্য কার্ডিনাল নিয়োগ করা হয়। যাতে বাংলাদেশের হয়ে কথা বলতে পারি, এদেশের মানুষের জন্য কথা বলতে পারি যেন।
“পোপ মহোদয় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে কথা বলেছেন। আমিও এসব বিষয়ে তাকে তথ্য দেব। তিনি নিজে এদেশে আসবেন আগামী বছর, তিনিও এসব জানবেন।”
বাংলাদেশ ছাড়িয়ে এখন বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নিজের বড় দায়িত্ব নিয়েও সচেতন তিনি।
“বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ ঘর থেকে, পরিবার থেকে শুরু করতে হবে। উপরে উপরে বললে হবে না, তৃণমূল পর্যায় থেকে কাজ করতে হবে, একেবারে গোড়া থেকে। মানুষকে অনুপ্রাণিত করার ভূমিকা নিতে হবে।”
“বর্তমানে জঙ্গিবাদ সম্পর্কে ছাত্রসমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন চেতনা এসেছে; পরিবারে কী হচ্ছে, সেসব বিষয়ে নতুন চেতনা জাগ্রত হয়েছে। এগুলো সম্পর্কে কথা বলা, বিবেকের সম্পর্কে কথা বলার বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করব।”
১৯৪৩ সালে বরিশালের পাদ্রিশিবপুরে জন্ম নেওয়া প্যাট্রিক রোজারিও বিভিন্ন সেমিনারিতে দীর্ঘ প্রশিক্ষণের পর হলি ক্রস সংঘের আওতায় ১৯৭২ সালে ফাদার বা পুরোহিত হন।
১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তিনি রাজশাহীর এবং ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রামের বিশপের দায়িত্ব পালন করেন।
পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের কাছ থেকে পলিউম সম্মাননাও পেয়েছিলেন প্যাট্রিক রোজারিও, যা ক্যাথলিক যাজকদের সর্বোচ্চ সম্মাননা।