মিথ্যা সাক্ষ্যে কাসেমের সাজা: খন্দকার মাহবুব

যে অভিযোগ ও সাক্ষ্যে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর সর্বোচ্চ দণ্ড হয়েছে, তা ‘মিথ্যা ও সাজানো’ ছিল দাবি করে তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, আদালতও এর সামনে ‘অসহায়’ ছিল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2016, 06:56 AM
Updated : 30 August 2016, 10:57 AM

মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারকের বেঞ্চে মীর কাসেমের রিভিউ খারিজের পর তিনি এ মন্তব্য করেন।

খন্দকার মাহবুব বলেন, “যে সাক্ষ্য প্রমাণ তৈরি করা হয়েছে, আদালত সেই মিথ্যা প্রমাণের উপর ভিত্তি করে সাজা দিয়েছেন। আদালতের আর গত‌্যান্তর ছিল না। আইনটি এমনভাবে করা হয়েছে যে ‘হিয়ার সে’ এভিডেন্সও মানতে হবে।”

আইনি লড়াই শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রাণ বাঁচাতে কাসেম এখন রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চাইবেন কি না- সে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে তা আসামিকেই জিজ্ঞেস করতে বলেন এই আইনজীবী। 

খন্দকার মাহবুব বলেন, “ওইখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, আই অ্যাম এ লইয়ার, ফাইটিং ফর ল।”

আসামিপক্ষের এই প্রধান আইনজীবীর দাবি, ট্রাইব‌্যুনালে যারা এ মামলায় সাক্ষ‌্য দিয়েছেন, তারা তদন্ত কর্মকর্তার কাছে কোনো কথা ‘না বললেও’ পরে ‘সেইফ হোমে রেখে সাক্ষীদের তৈরি করে’ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।

“আদালত অসহায়ভাবে, যেহেতু সাক্ষী আছে, এর কোনো বিকল্প নাই, সেই কারণেই তারা ন্যায়বিচার করছেন।”এভাবে প্রতিক্রিয়া জানালেও আদালতের রায় ‘সঠিক হয়নি’ বলছেন না খন্দকার মাহবুব।

“ভবিষ্যত প্রজন্ম বিবেচনা করবে, সারা বিশ্বে যারা আইন অঙ্গনে আছে, তারা এই কেসের সাক্ষ্য প্রমাণ বিবেচনা করবেন, তারাই মন্তব্য করবেন, এটা সঠিক হয়েছে কি-না। যেহেতু এটা সঠিক, যেহেতু আপিল বিভাগ সাজা দিয়েছে, আমার পক্ষে সঠিক হয়নি বলা ঠিক হবে না। যেহেতু আইনের বিধান মতে সর্বোচ্চ আদালত যেটা করেন, সেটাই ন্যায় বিচার।

“এখন ভবিষ্যত প্রজন্ম এবং পৃথিবীর আনাচে কানাচে যারা আইনজ্ঞ যারা আছেন, তারা কী মন্তব্য করেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় আমি আছি।”

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত‌্যার দোষী সাব‌্যস্ত হওয়ায় আপিল বিভাগে মীর কাসেমের ফাঁসির রায় আসে।

খন্দকার মাহবুব বলেন, “এই জসিমের মৃত্যুর ব্যাপারে যে সাক্ষ্য প্রমাণ আছে, তাতে সরাসরি মীর কাসেম আলী জড়িত, এমন কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ নাই। সে জন্যই আমরা আশা করেছিলাম, সরাসরি যদি কেউ জড়িত না থাকে, তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় না।”

তারপরও দেশের সর্বোচ্চ আদালতে সাজার রায় আসায় ‘এখানে কিছু বলার নাই’ বলে মন্তব‌্য করেন তিনি।

মুক্তিযোদ্ধাদের উচ্ছ্বাসের বিরোধিতা

যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় ঘিরে আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হওয়া মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন সংগঠনের উচ্ছ্বাস প্রকাশ নিয়েও সমালোচনা করেন যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের আপিল শুনানির নেতৃত্ব দেওয়া খন্দকার মাহবুব হোসেন, যিনি বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম‌্যান।

“এখানে আজকে সাজা হয়েছে, ফাঁসির দড়ি নিয়ে ঢোল পেটানো হচ্ছে, মিষ্টি বিতরণ করা হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের আদালতের প্রতি কতটা অপমানজনক, সেটা আপনারা যারা মিডিয়ায় আছেন, তারা দেখবেন।”

খন্দকার মাহবুব বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে যদি এখন বিএনপি ‘ক্ষমতায়’ থাকত, আর তিনি যদি সভাপতি থাকতেন, তাহলে আদালত প্রাঙ্গণে ‘টু শব্দ হলেও ওখান থেকে হুকুম আসত’ যে সুপ্রিম কোর্টের কম্পাউন্ডে এসব করা যাবে না।

“আমি মনে করি, এই ধরনের আচরণ অত্যন্ত দুঃখজনক। ভবিষ্যতে যদি বাতাস পাল্টে যায়, এ ধরনের আচরণের পুনরাবৃত্তি হতে পারে।”

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে দালাল আইনে যখন বিচার চলছিল, তখন ঢাকার একটি ট্রাইব্যুনালে বিশেষ পিপির দায়িত্ব পালন করেন খোন্দকার মাহবুব।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের আইন করেছিলাম ১৯৫ জন পাকিস্তানি বর্বর সেনা সদস‌্যের বিচারের জন্য। পরবর্তী পর্যায়ে এই আইনটি পরিবর্তন করা হয়েছে। ওই আইনটি করা হয়েছিল কেবল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য, সেনাবাহিনীর অধীনে যে সংস্থা ছিল, তাদের বিচারের জন্য। এই জন্যই মৌলিক অধিকার কার্টেল করেছি। এখানে যাদের বিচার হয়েছে, তাদের মৌলিক অধিকার কেটে বিচার করা হয়েছে।”