গুলশানে হামলা: আটক শাওনের মৃত্যু

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার কয়েক ঘণ্টার মাথায় ওই এলাকা থেকে রক্তাক্ত যে তরুণকে পুলিশ আটক করেছিল, সেই জাকির হোসেন শাওন এক সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকার পর হাসপাতালে মারা গেছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 July 2016, 12:28 PM
Updated : 8 July 2016, 08:02 PM

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফাঁড়ি পুলিশের এএসআই সেন্টু চন্দ্র দাশ জানান, শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ২২ বছর বয়সী ওই তরুণকে শুক্রবার দুপুরে ক্যাজুয়ালটি থেকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে সেখানেই মৃত্যু হয় শাওনের।

তার বাবা আবদুস সাত্তার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শাওন আর নাই। ওকে মর্গে নিয়ে যাচ্ছে।”

পরিবারের ভাষ্য, শাওন প্রায় একবছর ধরে হলি আর্টিজান বেকারিতে বাবুর্চির সহকারী হিসেবে কাজ করছিলেন। তিনি কোনো অপরাধে জড়িত ছিলেন না।

একদল অস্ত্রধারী তরুণ গত ১ জুলাই ওই ক্যাফেতে হামলা চালিয়ে দেশি-বিদেশি ২০ জনকে হত্যা করে। পরদিন কমান্ডো অভিযানে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নেয় সশস্ত্র বাহিনী। সে সময় ছয় সন্দেহভাজন অস্ত্রধারী নিহত হয়।  

শুক্রবার রাতে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার কয়েক ঘণ্টা পর রক্তাক্ত অবস্থায় এই তরুণকে আটক করে পুলিশ।

ওই অভিযানের আগেই ঘটনাস্থলের কাছ থেকে পুলিশ রক্তাক্ত অবস্থায় শাওনকে আটক করে। সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তাকে পুলিশ পাহারায় ভর্তি করা হয় হাসপাতালে।

এদিকে শাওনের কোনো খোঁজ-খবর না পেয়ে ৩ জুলাই বিকালে হলি আর্টিজান বেকারির সামনের সড়কে আসেন তার মা মাসুদা বেগম। মোবাইলে ছেলের পাসপোর্ট সাইজের একটি ছবিও তিনি সাংবাদিকদের দেখান।

এরপর বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে ছেলেকে না পেয়ে পরদিন আবারও হলি আর্টিজানের সামনে আসেন মাসুদা। এক পর্যায়ে এক সাংবাদিকের মাধ্যমে তথ্য পেয়ে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে শাওনকে পান তিনি।

শুক্রবার শাওনের মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে মাসুদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “বাবা (শাওন) খুব অসুস্থ্। আজ সকালে নাকে-মুখে রক্ত বের হচ্ছিল, কাঁপুনি দিচ্ছিল।”

শাওনের হাতে হাতকড়া না থাকলেও আইসিইউর বাইরে সারাক্ষণ পুলিশ পাহারা ছিল বলে জানান তিনি।

ছেলে বাঁচবে কি না সেই দুশ্চিন্তার কথা জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, “আমি পিঠা বানায়ে বিক্রি করি। শাওন আমারে মাসে চার হাজার টাকা দিত। ওর ছোট তিনজন ভাই আছে। ওদের বাবা আব্দুস সাত্তার  আগে রিকশা চালাইত, এখন অক্ষম।”

ছেলেকে পুলিশের জিম্মায় হাসপাতালে খুঁজে পাওয়ার পর মাসুদা বেগম পুলিশের বিরুদ্ধে শাওনকে নির্যাতনের অভিযোগ এনেছিলেন।

গত ৪ জুলাই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ছেলে বেঁচে আছে কি নাই, জানতাম না। এখন সে বাঁচবে কি না সেটা জানি না। এমন পিটান পিটাইছে হ্যার চেহারা দ্যাহা যায় না। হাত-পা সব ফোলা।

“আমার নিরাপরাধ পোলার লগে এইডা কী করল? শরীরের কোনো জায়গা মাইরের বাকি নাই।”