সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত বৃহত্তর ময়মনসিংহ রুটের ট্রেনের কাউন্টারে ভিড় থাকলেও পূর্বাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের কাউন্টারগুলোও ছিল প্রায় ফাঁকা। খুলনাগামী ট্রেনগুলোর কাউন্টারের চিত্রও ছিল প্রায় একই।
সকাল ১০টার পর এসব কাউন্টারে টিকেট প্রত্যাশীদের অপেক্ষা করতে হয়নি লম্বা সময়; বলতে গেলে ছিল না কোনো ভোগান্তি। টিকেট বিক্রির এমন ‘অভূতপূর্ব’ চিত্রে ‘অবাক’ হয়েছেন কেউ কেউ।
স্টেশনের ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বেলা সোয়া ১১টার দিকে ‘প্রচুর টিকেট’ অবিক্রিত থাকার কথা জানিয়েছেন। অবশ্য টিকেট বিক্রির সামগ্রিক চিত্রে ‘সন্তোষ’ প্রকাশ করেছেন তিনি।
সোমবার বিক্রি হয়েছে ৫ জুলাইয়ের অগ্রিম টিকেট। ঈদের ফিরতি টিকেট বিক্রি শুরু হবে ৪ জুলাই।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের পথে নতুন ট্রেন উদ্বোধনের কারণে শনিবার আগাম টিকেট বিক্রি বন্ধ থাকলেও ওইদিন দুপুর থেকেই কাউন্টারে ভিড় করতে শুরু করেন অনেকে। রোববার সকাল ৮ থেকে টিকেট বিক্রি শুরু হয়।
রোববার কাউন্টাগুলোর সামনে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোকজনকে অধীর আগ্রহে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলেও সোমবার দেখা যায়নি তেমন চিত্র।
ঈদের আগের দিনের টিকেট প্রত্যাশী মো. শামসুদ্দিন আহমেদ বললেন, “এবার কমলাপুরে একেবারেই ভিন্ন চিত্র। আসলাম, দাঁড়ালাম আর টিকেট পেয়ে গেলাম। এ এক অভূতপূর্ব চিত্র। কখনও এমন হয়নি।”
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উত্তরবঙ্গগামী রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস, একতা ও দ্রুতযান এক্সপ্রেসের কাউন্টারের টিকেট বিক্রেতাদের বলতে শোনা গেল, “এবার টিকেট আছে, যাত্রী নাই।”
তারা জানান, ভোরে টিকেট প্রত্যাশীদের চাপ থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ক্রমেই ক্রমে আসছে।
নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাসুদুর রহমান উজ্জ্বল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদের আগের দিনের টিকেটের জন্য এসেছি। স্টেশনে এসে আমি খুব অবাক হয়েছি। মাত্র আধা ঘণ্টার ব্যবধানে আমি টিকেট পেয়ে গেছি।”
বেলা ১১টার দিকে রেলওয়ের কর্মী ও টিকেট বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ৫ জুলাইয়ের ট্রেনগুলোর এসি, এসি বার্থের টিকেটগুলো অবিক্রিত রয়ে গেছে। সকাল থেকে মাত্র ৪০% টিকেট বিক্রি হয়েছে।
“অন্যবার তো সকাল থিকা ঠ্যালাঠেলি, ধাক্কাধাক্কি লাইগ্যা থাকে। জান এক্কেবারে শেষ হইয়া যায়। এবার সেই ভিড়ই নাই।”
তবে টিকেট কাঁটতে গিয়ে দীর্ঘ লাইনের পড়ার ভোগান্তির কথা জানালেন জামালপুরের মোহাম্মদ রোকন।
তিনি বলেন, রোববার দুপুর ২টার দিকে দেওয়ানগঞ্জের টিকেট নিতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই টিকেট পেয়েছেন সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায়।
সরকারি তিঁতুমীর কলেজের ছাত্র মোহাম্মদ খায়রুল আলমের অভিযোগ, কাঙ্ক্ষিত সময়ের টিকেট চেয়ে পাননি।
“মিঠামইন যাব আমি। কিন্তু কাউন্টার থেকে আমাকে বলা হল, সকাল বা দুপুরের কোনো ট্রেনের টিকেট নেই। আমাকে যেতে হবে রাতে। কিন্তু কিশোরগঞ্জ থেকে বাড়ি যেতে আমার লাগবে পাঁচ ঘণ্টা। এত রাতে বাড়ি যাব কীভাবে?”
খায়রুলের মতো টিকেট প্রত্যাশীদের কয়েকজন এমন অভিযোগ করে ‘বাধ্য হয়েই’ পরবর্তী শিফটের টিকেট কেনার কথা জানান।
জামালপুর ও কিশোরগঞ্জের কাউন্টারের চিত্র এমন হলেও চট্টগ্রাম ও সিলেটগামী ট্রেনগুলোর কাউন্টার ছিল একেবারেই ফাঁকা।
বিক্রেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, টিকেট প্রত্যাশীদের ভিড় এবার তুলনামূলক কম।
কমলাপুর স্টেশনে কাউন্টার সংখ্যাও আগের চেয়ে তিনটি বাড়িয়ে ২৩টি করা হয়েছে। নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে আলাদা একটি কাউন্টার। রোববার কাউন্টারগুলোতে প্রচণ্ড ভিড় থাকলেও সোমবার ছিল একেবারেই ফাঁকা।
স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, ৫ জুলাইয়ের রাতের প্রচুর টিকেট অবিক্রিত রয়ে গেছে।
অবশ্য টিকেট বিক্রির সামগ্রিক চিত্রে ‘সন্তুষ্ট’ তিনি।
“এবার কেউ টিকিট না পেয়ে ফেরত যাবে না। কাঙ্ক্ষিত সময় ও স্টেশনের টিকেট অনেকে নাই পেতে পারেন। কিন্তু পরবর্তী শিফট ও স্টেশনের টিকিট তো আছেই,” বলেন স্টেশন ম্যানেজার।
কমলাপুর স্টেশনে টিকেট বিক্রির শৃঙ্খলা রক্ষায় রেলের নিরাপত্তাকর্মীদের পাশাপাশি পুলিশ এবং র্যাব সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন।
ঈদে ট্রেনের টিকেট বিক্রির মৌসুমে কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্যের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্টেশনে র্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্প খোলা হয়েছে। রোববার তারা গ্রেপ্তার করেছে পাঁচ কালোবাজারিকে।
ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন টেনে অতিরিক্ত ৮৪টি বগি সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-পার্বতীপুর ও ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটে তিন জোড়া অতিরিক্ত ট্রেন চলবে।
রেলওয়ে জানিয়েছে, ঈদ উপলক্ষে ১ জুলাই থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত সাপ্তাহিক বন্ধের দিনও আন্তঃনগর ট্রেন চালবে।