এই তিন আসামি হলেন- বানিয়াচং উপজেলার মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, তার ছোট ভাই মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া এবং তাদের চাচাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাক।
একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চারটি ঘটনায় হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিচারপতি আনোয়ারুল হক নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে রায়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যানের প্রারম্ভিক বক্তব্যের পর বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী ২৪০ পৃষ্ঠার রায়ের সার সংক্ষেপ পড়া শুরু করেন। এরপর বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম রায়ের বাকি অংশ পড়বেন এবং সবশেষে বিচারপতি আনোয়ারুল হক সাজা ঘোষণা করবেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির জানান, বুধবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে তিন আসামিকে প্রিজন ভ্যানে করে ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
ট্রাইব্যুনালে পৌঁছানোর পর তাদের কিছু সময় হাজতখানায় রেখে সাড়ে ১০টার আগে আগে নেওয়া হয় বিচারকক্ষের কাঠগড়ায়।
এ রায় ঘিরে বরাবরের মতোই ট্রাইব্যুনাল এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সবগুলো প্রবেশ পথে করা হয়েছে তল্লাশির ব্যবস্থা।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ১২ জন সাক্ষ্য দেন। আসামিপক্ষে আদালতে জবানবন্দি দেন সাতজন।
২০০৯ সালে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আকল মিয়ার স্ত্রী ভিংরাজ বিবি হবিগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই তিনজনসহ মোট ছয়জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা করেন। পরে মামলাটি ট্রাইব্যুনালে আসে।
প্রসিকিউশনের আবেদনে ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল মহিবুর ও মুজিবুরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ওইদিনই বানিয়াচং থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে স্থানীয় পুলিশ।
একই বছরের ১৭ মে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির দুইদিন পর মহিবুর-মুজিবুরের চাচাতো ভাই রাজ্জাককে মৌলভীবাজারের আথানগিরি পাহাড় থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অভিযোগ ১: বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর বানিয়াচং উপজেলায় অভিযান চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আকল আলী ও রজব আলীকে হত্যা করে লাশ গুম করে আসামিরা।
অভিযোগ ২: আসামিরা পাকিস্তানি বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মেজর জেনারেল এমএ রবের বাড়িতে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ করে।
অভিযোগ ৩: একই দিন খাগাউড়া এলাকার উত্তরপাড়ায় আসামিদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনী মঞ্জব আলীর স্ত্রী ও আওলাদ ওরফে আল্লাত মিয়ার ছোট বোনকে ধর্ষণ করে। পরে আল্লাত মিয়ার বোন বিষপানে আত্মহত্যা করেন।
অভিযোগ ৪: একাত্তর সালের ভাদ্র মাসের যে কোনো একদিন আনছার আলীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন চালায় আসামিরা। ওই নির্যাতনে পঙ্গু হন আনছার আলী।