নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে রূপপুরের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে বলে এক গোলটেবিল বৈঠকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
Published : 25 Apr 2016, 05:21 PM
পাবনায় বাংলাদেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক কাজ শুরুর মধ্যে সোমবার ঢাকায় ওই গোলটেবিল বৈঠকে একথা জানানো হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার সম্মেলন কক্ষে ‘পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প : পরিবেশ ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক এই বৈঠকে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাশিয়ার অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিউক্লিয়ারের (nuclear.ru) এর প্রধান সম্পাদক ইলিয়া প্লাতোনভ।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার, রুশ রাষ্ট্রীয় কর্পোরেশন রোসাটম, রুশ পরমাণু প্রতিষ্ঠান এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট (এএসই) যৌথভাবে এই বৈঠক আয়োজন করে।
২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে গত বছরের ডিসেম্বরে অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। রুশ সহায়তায় ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঝুঁকি নিয়ে অনেকের শঙ্কার মধ্যে মূল প্রবন্ধে প্লাতোনভ এই প্রকল্পের সুরক্ষায় নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেন।
বক্তব্যের শুরুতে ‘ফাদার অব ক্লাইমেন্ট চেইঞ্জ’ খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের অধ্যাপক জেমস হ্যানসনের বরাত দিয়ে রুশ সম্পাদক বলেন, “অনেক বছর ধরে গ্রিন মুভমেন্ট পরমাণু শক্তি প্রকল্প তৈরিতে প্রধান প্রতিপক্ষ।
“অনেক মানুষ বলে থাকেন, পরমাণু প্রকল্প পরিবেশের জন্য ভালো না। মজার বিষয় হল, যারা ওই মুভমেন্টে আছেন তারা অবশ্য কখনও কখনও কিছু পয়েন্টে বলে থাকেন, পারমাণবিক শক্তি প্রকল্প পরিবেশবান্ধব। কারণ এটি গ্রিনহাউস ইফেক্ট তৈরি করে না।”
রাশিয়ায় পরমাণু কেন্দ্রে যে ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার হয়, রূপপুরেও তা ব্যবহার হচ্ছে বলে জানান প্লাতোনভ। বাংলাদেশ তার প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার ‘মাইলফলক’ তৈরি করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার, যার ৯০ শতাংশ রাশিয়া ঋণ হিসেবে দিচ্ছে। এই কেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে, তার প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে সাড়ে তিন টাকা।
অ্যাটমস্ট্রয়ের নকশায় পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্বলিত ‘সর্বাধুনিক তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তি’ দিয়ে রূপপুরে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে।
চুক্তি অনুযায়ী, এই কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য রাশিয়াই ফেরত নিয়ে যাবে। কেন্দ্রের মেয়াদ ৩০ থেকে ৮০ বছর।
গোলটেবিলে পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জুলকারনাইন বলেন, “নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটরের ডাইমেনশন হয়ত বড়। কিন্তু নিউক্লিয়ার টেকনোলজির বিষয়টি কীভাবে হ্যান্ডেল করতে হয় আন্তর্জাতিক কমিউনিটির সঙ্গে, তা কিন্তু আমরা জানি। এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু না।”
“উনারা(রাশিয়া) বলছেন, ৪০ বছর ধরে ভিভিএ টেকনোলজি…যার ট্র্যাক রেকর্ড অনেক ভালো। এটা ইউরোপ থেকেও ফিডব্যাক পেয়েছি। নব্বই দশকে আইএ’র একজন বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, রাশিয়ান ভিভিআই রিঅ্যাকটরগুলো খুব ভাল। তো আমরা সেগুলোই নেব।”
রোসাটম এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের কমিউনিকেশন্স ম্যানেজার আর্কাদি করনিয়েভ বলেন, “পারমাণবিক শক্তি প্রকল্প সম্পর্কে জনগণের কাছে সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরতে বাংলাদেশ সঠিক পথে এগুচ্ছে। আমরা এখানে বিশেষ করে রূপপুর ও বিপি প্রকল্প সম্পর্কে জানাতে তথ্য কেন্দ্র চালু করব।
“আমরা দেখেছি, জনগণের ভূমিকা এখানে দিন দিন বাড়ছে। আমাদের উদ্দেশ্য এই প্রকল্প সম্পর্কে সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য জনগণের কাছে তুলে ধরা।”