পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির আর্কিটেকচারাল আর্কাইভে থাকা জাতীয় সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকার ৮৫৩টি নকশা আনতে আগামী মে মাসে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছে।
Published : 29 Mar 2016, 07:43 PM
নকশা প্রতি বাংলাদেশের খরচ হবে ১৯ ডলার করে।
মঙ্গলবার সংসদ ভবনে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে স্পিকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে টেলিফোনে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির কাছে সংসদ ভবন সংক্রান্ত আট হাজার নকশা ডকুমেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে ৮৫৩টি রেলিভেন্ট। এগুলো আনতে আগামী মাসেই একটা প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্র যাবে।”
স্পিকার আরও বলেন, “ওইআর্কাইভ থেকে নকশা খুঁজতে তিন হাজার ৫৫০ মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হয়েছে। এর মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে সেখানে আট হাজার নকশা ও ডকুমেন্ট রয়েছে।
“নকশা প্রতি ১৯ মার্কিন ডলার খরচ হবে। এছাড়া ১১৫টি নকশা আছে যেগুলো আনবিল্ড (এখনো কোন ভবন হয়নি)।”
সব মিলিয়ে ৬০ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি খরচ হবে বলে জানান শিরীন শারমিন।
২০১৪ সালে সংসদ ভবনের স্থপতি লুই আই কানের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সংসদ ভবনের মূল নকশা আনার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর লুই কানের প্রতিষ্ঠান ডেভিড অ্যান্ড উইজডম এর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে স্থাপত্য অধিদপ্তর।
লুই কানের নকশাগুলো পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির আর্কিটেকচারাল আর্কাইভে থাকায় সরকারের পক্ষ থেকে সেখানেও যোগাযোগ করা হয়।
জাতীয় সংসদ ভবনের চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষিতে স্থপতি লুই আই কানের করা মূল নকশা আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে সময় গণপূর্ত অধিদপ্তর, স্থাপত্য অধিদপ্তর এবং সংসদের নিরাপত্তা শাখার সঙ্গে এক বৈঠকে শেখ হাসিনা নকশার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চান। তখনই মূল নকশার ‘কিছু অংশ’ বাংলাদেশের কাছে না থাকার বিষয়টি উঠে আসে।
মঙ্গলবার স্পিকারের সভাপতিত্বে বৈঠকে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, গণপূর্ত সচিব, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতিসহ সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
স্পিকার শিরীন শারমিন বলেন, “পরিকল্পনা কমিশনের বৈঠকের সিদ্ধান্ত ছিল নকশাগুলো আনার জন্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই নকশাগুলো আনার উদ্যেগ নেওয়া হয়। নকশা আনতে যে অর্থের প্রয়োজন তা সরকার দেবে।
“এজন্য আমাদের পাঁচ সদস্যের একটি টিম যাবে বলে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত দিয়েছি।”
পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলে স্থাপত্য অধিদপ্তর থেকে দুইজন, গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে একজন, পিডব্লিউডি থেকে একজন এবং সংসদ সচিবালয় থেকে একজন থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
স্পিকার আরও জানান, “লুই কানের নকশা প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত একজন স্থপতি এখনো বেঁচে রয়েছেন, যার বয়স ৮৭ বছর। প্রতিনিধি দল তার সঙ্গেও দেখা করবেন।”
প্রতিনিধি দল নকশাগুলো দেখে অনুমোদন দেওয়ার পর টাকা দেওয়া হবে। আর এই পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে চার থেকে ছয় সপ্তাহ লেগে যেতে পারে ধারণার কথা জানান শিরীন শারমিন।
তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র থেকে জানানো হয়েছে তারা দুইটি হার্ডকপি দেবে। আমি বলেছি চেষ্টা করে দেখতে যে তিন সেট আনা যায় কি না। তিন সেট আনা গেলে জাতীয় সংসদ, ন্যাশনাল আর্কাইভ এবং গণপূর্ত বা স্থাপত্য অধিদপ্তরে একটি করে সেট রাখা হবে।”
মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীতে লুই কান কয়েকবার বাংলাদেশে কাজের জন্য আসেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মূল নকশা সংশ্লিষ্ট কিছু ‘প্ল্যান’ তিনি হস্তান্তর করেত পারেননি। পরবর্তীতে এ নিয়ে কোনো সরকার আগ্রহ দেখায়নি।
গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেও সংসদ এলাকায় মূল নকশার বাইরে স্পিকার-ডেপুটি স্পিকারের জন্য বাসভবন বানানো হয়।
উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তখন ভবন দুটি তৈরি হয়। এ সংক্রান্ত একটি মামলা এখনও বিচারাধীন।
২০১৩ সালের ২ জুন সংসদ কমিশনের বৈঠকে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ ভবন সংরক্ষণে মূল নকশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় এমন কিছু না করার ব্যাপারে মত দেন। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলারও পরামর্শ দেন তিনি।
১৯৬১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের আমলে বর্তমান সংসদ ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সে সময় স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে এই ভবনের স্থপতি নিয়োগ করা হয়। তার প্রস্তাবেই লুই আই কান এই প্রকল্পের প্রধান স্থপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি এ ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।