হ্যাকিং করে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ লোপাটের ডামাডোলের মধ্যে দক্ষ ‘হ্যাকার তৈরির বিজ্ঞাপন’ দিয়ে ফেঁসে যাচ্ছে সাইফুর’স কোচিং সেন্টার।
Published : 23 Mar 2016, 05:02 PM
‘চোর বানানোর বিজ্ঞাপন’ দিয়ে সাইফুরস মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে দাবি করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কোচিং সেন্টারটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ লোপাট এবং একটি শব্দের বানান ভুলে ২ কোটি ডলার রক্ষা পাওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশের পর একটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দেয় সাইফুরস।
ওই বিজ্ঞাপনের শিরোনামে বলা হয়, “English-এর ভুলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৬০ কোটি টাকা হ্যাকারদের হাতছাড়া!”
“একইভাবে ইংরেজিতে দুর্বলতার কারণে… MBA, অফিসার, Lawyer (এমনকি দক্ষ হ্যাকার!) প্রভৃতি হতে হলে reading, রাইটিং, Speaking, লিসেনিং ও spelling সবকিছুতেই ভালো হওয়া জরুরি!”
এইচএসসি পরীক্ষা সামনে রেখে বুধবার সচিবালয়ে এক সভার শুরুতে শিক্ষামন্ত্রী এই প্রসঙ্গে কথা বলেন।
তিনি বলেন, “সাইফুরস নামে একটা বিখ্যাত কোচিং সেন্টার আছে। এই কোচিং সেন্টার একটা বিজ্ঞাপন দিয়েছে। সেই বিজ্ঞাপনে তারা বলেছে ভালো ইংরেজি না জানতে পারলে ভালো লেখাপড়া করতে পারবে না … এমনকি ভালো হ্যাকারও হতে পারবে না।”
“দেখেন, হ্যাকার হওয়ার জন্যও তার কাছে গিয়ে পড়তে হবে! বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, এটা অবশ্যই বে-আইনি, (এ ধরনের বিজ্ঞাপন) দিতে পারে না। আমরা তার (সাইফুরস) বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
সাইফুরস এই বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে মন্তব্য করে নাহিদ বলেন, “তারা ভালো চোর বানাতে চাইছে। এ রকম লোকের বিরুদ্ধে যদি আমরা সোচ্চার না হই তাহলে আমরা কী করে থাকব সমাজে?”
কোচিং সেন্টারগুলোকে উদ্দেশ করে মন্ত্রী বলেন, “এরা এই রকম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে এদের বিরুদ্ধে কখনও আমরা সহনশীল হতে পারি না। তারা আমাদের ছেলেমেয়েদের প্রলোভন দেখাচ্ছেন ভালো ইংরেজি শিখলে ভালো চোর হতে পারবা, ভালো করে হ্যাকিং করতে পারবা।”
“চুরি শেখানোর বিজ্ঞাপন দিয়ে বলেছে ভালো চোর বানাবে,” বলেন ক্ষুব্ধ শিক্ষামন্ত্রী।
ওই বিজ্ঞাপন সম্পর্কে জানতে চাইলে সাইফুরস কোচিং সেন্টারের মহাব্যবস্থাপক আশরাফ উদ্দিন জুয়েল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের অন্য কোনো ইনটেনশন ছিল না। বিজ্ঞাপনে ইংরেজি শেখার গুরুত্ব বোঝাতে চেয়েছি মাত্র।
“এনিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হলে, কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে স্যরি বলাই যুক্তিযুক্ত মনে করি।”
কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে ওই বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি দাবি করে আশরাফ উদ্দিন জানান, সরকারকেও এই বিষয়টি তারা বোঝানোর চেষ্টা করবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় মামলা করলে তাদের অবস্থান কী হবে- এ প্রশ্নে আশরাফ বলেন, “সবাই বসে একটা সিদ্ধান্ত নেব।”
মন্দ কাজে প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বেগ প্রকাশ করে নাহিদ বলেন, “আমরা ছেলে-মেয়েদের প্রযুক্তি শেখাচ্ছি। তবে যদি ছেলে-মেয়েদের ভালো মানুষ না করতে পারি, তবে এই শিক্ষাটা খারাপও হতে পারে।
“এই প্রযুক্তি কার হাতে পড়ল, তা নির্ভর করবে। কারণ ভালো মানুষের হাতে পড়লে জনগণের কল্যাণে কাজে লাগাবে। আর খারাপ মানুষের হাতে পড়লে সে জনগণের ক্ষতি করে দিতে পারে। আপনারা দেখেছেন আমাদের টাকা প্রযুক্তিগত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে চুরি করে নিয়ে গেছে।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে সভায় শিক্ষামন্ত্রী আশা করেন, আগামী ৩ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
“প্রশ্ন ফাঁস বা প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টা করে কেউ রেহাই পাবেন না। কারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর আছে।”
সভায় উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও প্রশ্নফাঁসরোধে তাদের বিভিন্ন তৎপরতার বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন ছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, বিজিপ্রেস, বিটিআরসির কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।