আনসার বাহিনীকে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

দেশের সকল নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক গাজীপুর থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2016, 07:57 AM
Updated : 11 Feb 2016, 08:43 AM

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৬তম জাতীয় সমাবেশের উদ্বোধন করে শেখ হাসিনা বলেছেন, “জনগণের জানমালের হেফাজত করা আপনাদের পবিত্র দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে আপনারা সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সাহসের সঙ্গে কাজ করবেন।”

বৃহস্পতিবার গাজীপুরের শফিপুরে আনসার একাডেমিতে এই অনুষ্ঠানে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সম্প্রতি হয়ে যাওয়া পৌরসভা নির্বাচনে এই বাহিনীর ‘সাহসিকতার’ কথা স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “জাতির যে কোনো প্রয়োজনে বরাবরই আপনারা যে সাহস, সততা ও একাগ্রতার পরিচয় দিয়েছেন তার জন্য আমি জাতির পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে আপনাদের সকল সদস্যকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।”   

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সহিংসতা মোকাবেলায় আনসারের ভূমিকার কথাও প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন।

“অপারেশন রেলরক্ষা ছাড়াও, মহাসড়কে নাশকতা ঠেকাতে আনসার বাহিনীর ভূমিকা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত। সম্প্রতি পৌর নির্বাচনসহ দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন নির্বিঘœ করতে আনসার বাহিনীর বিশাল পরিসরে উপস্থিতি বরাবরের মতই সকলের নজরে এসেছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি আনসার বাহিনী প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাঙালির ইতিহাসের ‘প্রায় সকল ক্রান্তিকালে’ অবদান রেখেছে আসছে এ বাহিনী।

১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা এবং ১৯৬২ সালে আওয়ামী লীগের ১১ দফায় আনসার বাহিনীকে মিলিশিয়া বাহিনীতে পরিণত করার অঙ্গীকারের কথা ছিল বলে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, “সে সময় আনসারই ছিল এ অঞ্চলের একমাত্র স্বতন্ত্র বাহিনী।”

প্রধানমন্ত্রী সকালে শফিপুরের আনসার একাডেমিতে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. নাজিম উদ্দীন তাকে স্বাগত জানান।

এরপর প্রধানমন্ত্রী প্যারেড পরিদর্শন এবং সশস্ত্র সালাম গ্রহণ করেন। আনসারের উপ পরিচালক সাইফুল্লাহ রাসেলের নেতৃত্বে কুচকাওয়াজে প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানানো হয়।

সাহসিকতা এবং সেবামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য এ অনুষ্ঠানে তিনজনকে বাংলাদেশ আনসার পদক (সাহসিকতা), সাতজনকে প্রেসিডেন্ট আনসার পদক (সাহসিকতা), একজনকে বাংলাদেশ গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (সাহসিকতা) মরণোত্তর পদক, ছয়জনকে বাংলাদেশ আনসার পদক (সেবা),  ছয়জনকে বাংলাদেশ গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (সেবা) পদক, ৩৭ জনকে প্রেসিডেন্ট আনসার (সেবা) পদক এবং ১৯ জনকে প্রেসিডেন্ট গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (সেবা) পদক দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে পদক পরিয়ে দেন।

এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অবদানের জন্য আনসারের ১৭ জনকে স্বর্ণপদক, ২৫ জনকে রৌপ্যপদক এবং ২১ জনকে ব্রোঞ্জপদক দেওয়া হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অবদানের জন্য ৪০ জন আনসার সদস্যকে দেওয়া হয় বিশেষ পুরস্কার।

প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতেই আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষা শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, শফিকসহ ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকলের কথা উল্লেখ করে বলেন, “ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার আনসার বাহিনীর গর্বিত সদস্য ছিলেন।

“বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিটি পর্যায়ে আনসার বাহিনীর সদস্যগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে এই বাহিনীর বহু সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।”

মুক্তিযুদ্ধে আনসার বাহিনীর শহীদ ৬৭০ জন সদস্য এবং সে সময় অস্ত্রাগারের ৪০ হাজার অস্ত্র মুক্তিকামী জনতার মধ্যে বিতরণের কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।

বাহিনীর ১২ জন সদস্য ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারকে ‘গার্ড অব অনার’ দিয়েছিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আনসার এবং গ্রাম প্রতিরক্ষা দলের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রায় ১৭২ কোটি টাকায় ১৫টি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে আধুনিক কমপ্লেক্স নির্মাণ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ব্যাটালিয়ন সদস্যদের আবাসন সমস্যার পাশাপাশি আনসার সদস্যদের প্রশিক্ষণ মাঠ, খেলাধুলা, অফিসসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হবে।”

চারবার বাংলাদেশ গেমসে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আনসার সদস্যদের অভিনন্দনও জানান শেখ হাসিনা।

‘আনসার ও ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের’ ঋণ গৃহীতার অর্ধেকের বেশি নারী হওয়ায় নারীর ক্ষমতায়নে বর্তমান সরকারের লক্ষ্য অর্জনে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র‌্যাবের মহাপরিচালকসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পরে প্রধানমন্ত্রী আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখেন এবং আনসার-ভিডিপি কুটির শিল্প পরিদর্শন করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী দরবারে অংশ নেন।