‘ভুলে’ গুলিবিদ্ধ রিকশাচালককে হাসপাতালে ফেলে দায় এড়াচ্ছে পুলিশ

রাজধানীর কল্যাণপুর পোড়া বস্তিতে কনস্টেবলের গুলিতে আহত এক রিকশাচালককে বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার আশ্বাস দিয়ে এখন দায় এড়াচ্ছে পুলিশ।

গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Feb 2016, 07:09 PM
Updated : 8 Feb 2016, 07:36 PM

মো. সাজু নামে ওই রিকশাচালক বর্তমানে মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের গ্যালাক্সি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে উৎকণ্ঠিত অবস্থায় আছেন।

রোববার রাতে হাসপাতালে ভর্তির সময় মিরপুর থানার এসআই পলাশ মিয়া চিকিৎসা খরচ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন বলে সাজু জানান।

“কিন্তু আজ সারাদিনেও কেউ কোনো খোঁজ নেয়নি,” সোমবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন তিনি।   

সাজুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া এসআই পলাশ মিয়া বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উপর ছেড়ে দিয়ে দায় সারতে চাইছেন। উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এখন এ বিষয়ে কিছু বলছেন না।

মিরপুর থানার ওসি ভূঁইয়া মাহবুব আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাজুর গুলিবিদ্ধ হওয়াটা একটা ‘দুর্ঘটনা’ ছিল। এর জন্য দায়ী কনস্টেবলের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন দিয়েছেন তিনি।

তার ভাষ্য অনুযায়ী, পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) থেকে থানায় দায়িত্ব পালনে আসা রিজভী মিয়া নামে এক কনস্টেবল এই ঘটনার জন্য দায়ী।

রাজধানীর কয়েকটি স্থানে পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতন-হয়রানির অভিযোগ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মধ্যে এই ঘটনা ঘটল।

সাজু জানান, রাতে পোড়া বস্তির ৮ নম্বর সড়কে জহির মিয়ার রিকশা গ্যারেজের সামনে তারা কয়েকজন আগুন পোহানোর সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্য এসে তাকে প্রচণ্ড মারধর শুরু করে।

গত মাসে পোড়া বস্তিতে পুলিশের সহায়তায় গণপূর্ত বিভাগের উচ্ছেদ অভিযানের সময় স্থানীয়দের নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ভূমিকা ছিল সাজুর। আদালতের নির্দেশে পরে ওই উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত হয়।

.

সাজু বলেন, “মারতে মারতে এক সময় তারা আমার মোবাইল ফোন,টাকা-পয়সা কেড়ে নেয়। এরপর তারা বদি,জাকিরসহ (সঙ্গী) আমাকে পাশের সৈনিক লীগের একটি অফিসে নিয়ে যায়। মাটিতে বসিয়ে পা উপরে তুলে বন্দুক তাক করে আমাকে গুলি করে।”

এই রিকশাচালক জানান, তাকে মিরপুর থানার এসআই পলাশ মিয়া প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে গ্রহণ না করায় নেওয়া হয় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। সেখান থেকে ফিরিয়ে দিলে নেওয়া হয় গ্যালাক্সি হাসপাতালে।    

পলাশ মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সারাদিন কাজের ব্যস্ততায় সাজুর খোঁজ নিতে পারিনি।

“ঊর্ধ্বতন স্যারেরা তার চিকিৎসার খরচ দেবেন বলে কথা দিয়েছিলেন, আমি তখন তাদের পাশে ছিলাম। এখন সাজু কী অবস্থায় আছেন, তা তারা বলতে পারবেন।”

বিষয়টি নিয়ে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপ কমিশনার মো.কাইয়ুমুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি অসুস্থতার কথা জানিয়ে আরেকটি ফোন নম্বর দিয়ে ওই কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

ওই নম্বরে যোগাযোগ করা হলে এক অতিরিক্ত উপ কমিশনার বলেন, “ঘটনাটি তদন্তে মিরপুর থানার ওসি পিওএম শাখাকে একটি ও ডিএমপি হেডকোয়ার্টারে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বিস্তারিত জানতে মিরপুরের ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করুন।”

মিরপুর থানার ওসি ভূঁইয়া মাহবুব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওটা একটা দুর্ঘটনা ছিল। পিওএম থেকে আসা কনস্টেবল রিজভী মিয়া এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে মিরপুর ডিভিশনের উপ-কমিশনারকে একটি প্রতিবেদন দিয়েছি।”

এই ঘটনায় কোনো মামলা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে মিরপুর থানার এসআই রফিকুল ইসলাম বলেন, হয়নি।

মামলা করবেন কি না- জানতে চাইলে নিজের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কথা তুলে ধরে সাজু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মামলার খরচ কে দেবে। কে মামলা চালাবে, স্যার।”

সাজু এখন বেশি উৎকণ্ঠিত তার চিকিৎসার খরচ নিয়ে।

“স্যার, আমি গরিব মানুষ। পুলিশ বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করাইছে। এখন হাসপাতালের খরচ আমি ক্যামনে দিমু।”